পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা-সঙ্কট শ্ৰীবিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় & গল্পটি বলিতে গিয়া প্রথমেই রবিবাবুর সেই লাইন ক’টি মনে পড়িয়া যায়। পরিচিত হিসাবে একটু বদলাইয়। বলা চলে— বেচার হীরু ছিল ষ্টেশন-খাচাটিতে সুচারু, স্বরাজের রণে, একদা কি করিয়া বিবাহ হ’ল দোহে কি ছিল বিধাতার মনে— বড়বাজার হইতে ঠিক দুপুরে পিকেটিং সারিয়া আসিয়া বেথুন কলেজের প্রথম-বাৰ্ষিক শ্রেণীর ছাত্রী সুচারু শুনিল তাহার বিবাহ। এই লইয়া একটা প্রোটেষ্ট মিটিঙের যোগাড়যন্ত্র করিবার কিংবা তাড়াতাড়ি জেলে ঢুকিয়া পড়িবার পূর্বেই সে বধুবেশে বি-এল-ডব্লিউআর-এর একটি ষ্টেশনে—সুদূর বেহারে, তাহার স্বামি-ঘরে আসিয়া হাজির হইল। ব্যাপারটির আকস্মিকতা সম্বন্ধে বন্ধুকে-লেখ তাহার নিজের একখানি পত্র হইতে উদ্ধৃত করিয়৷ দিলাম—“ভাই, চোখে দেথতে দিলে না, কানে শুনতে দিলে না ; একেবারে ঘাড়ে হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ল। যখন বুঝলাম-এ প্রভাতফেরিও নয়, বড়বাজারও নয়, পুলিসও নয়, তখন too late—সময় উৎরে গেছে ; দেখি গাড়ি থেকে নেমে মূৰ্ত্তিমতী civil disobedience-এর মত পিছনে পিছনে স্বামীর ঘরে চুকচি.” প্রথমবারে অতটা বোঝা যায় নাই। বিয়ের উপলক্ষে আত্মীয়-কুটুম্বে বাড়িটা গমগম করিতেছিল ; তিন-চারিটা দিন গোলমালে একরকম কাটিয়া গেল। অবস্থাটা টের পাওয়া গেল ঘর করিতে আসিয়া ; প্রাণটা যেন হাপাইয়৷ উঠিতে লাগিল । জায়গাটি অজ পাড়াগ। চারিদিকে টানা মাঠ, মাঝখানটিতে টেশন আর গোটাকতক কোয়ার্টাস। তারের বেড়ার বাইরে এখানে-ওখানে ছড়ান দু-চারটা দরিদ্র চালার ঘর,—থাকে দশাই, নবাবজান, বুধনী, তেতর, দুখীয়ার মা-কেহ কুলীর কাজ করে, কেহ ইঞ্জিনের ছাই বাছিয়া বাবুদের কয়লা জোগায়, কেহ মালগুদাম ঝাট দিয়া ধান গম বাছিয়া দিন গুজরান করে । স্বামীটির জীবন তাহার ষ্টেশনে আর ক্ষুদ্র কোয়ার্টাসটির মধ্যে বিভক্ত। চারিদিকের নিরুদ্বেগ নীরবতার সঙ্গে একস্থরে বাধা,—কোন সাড়া নাই, তাড়া নাই, সেই একই ভাবে মন্থর গতিতে ষ্টেশনে যাওয়া আর প্রত্যাবৰ্ত্তন। গাড়ির মতই, লাইন আর ছক টাইম-টেবলের দাস । কোন দিন আহার করিবার সময় যদি ডিষ্ট্যান্ট সিগনালের কাছে গাড়ি হুইসেল দিল ত একটু মানুষের ভাব আসে— একটু চঞ্চলত, একটু বকবিকি, আড়ষ্ট পা দুটিতে একটু ক্ষিপ্রত। “সেটার মধ্যেও কেমন একটা গাড়ির লেট মেক্‌-আপ করার ভাব বৈচিত্র্যহীন কথাবাৰ্ত্ত—গ্রামোফোনের প্রাণহীন সঙ্গীতের মত। খানিকট দম দিলে এই নূতন-পাওয়৷ কল থেকে বড়বাবুর, টু-ডাউন, ফিফটিসেভেন-আপ গুডস, নূতন টি-আই, জংশনে বদলির আশা, কিংবা বড়-জোর ডি.টি-এস্ আপিসের এষ্টাব্লিশমেন্ট ক্লার্কের থিয়েটারের সথ—এই সব সম্বন্ধে নানা তথ্য সব বাহির হইয়া আসিতে থাকে । নবপরিণীতার চোথের সামনে কতকগুলা ছবি বৈষম্যহেতু বেশী স্পষ্ট হইয়া ওঠে—শ্রদ্ধানন্দ পার্কে ভাষার ফুলিঙ্গ শতসহস্র প্রাণকে শিখায়িত করিয়া তুলিল. সবুজ শাড়ীপর মেয়েদের বাহিনী—তাহাদের ঘিরিয়া বড়বাজারের জনস্রোতে মাঝে মাঝে ঘূর্ণ জাগিয়া উঠিতেছে ...সমস্ত ভারত মুখর.ও প্রান্তে ঐ গুজরাটের বাপুজীর ডাণ্ডি যাত্র-সমস্ত পৃথিবী মূক বিস্ময়ে চাহিয়া. এদিকে শোনে—“..তখন বড়বাবু গিয়ে ডি-টি