পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ર আবশ্যকতা নাই। কৰ্ম্মসিন্ধির যে পাঁচটি কারণ আছে তাহ সাধারণ বিচারবুদ্ধিতেই বুঝা যাইবে । ২৪৭ শ্লোকের ব্যাখ্যায়—১৩২৫ শ্লোকেরও ব্যাখ্যা দিয়াছি, তাহা দ্রষ্টব্য। এই কয়টি শ্লোক ব্যতীত গীতায় আর কোথাও সাংথ্য শব্দের উল্লেখ নাই । উপরি উক্ত আলোচনা হইতে দেখা যাইবে যে, সাংখ্য মার্গকে জ্ঞানমার্গ বলাই যুক্তিসঙ্গত । কাপিল সাংখ্য এই জ্ঞানমার্গেরই অন্তর্গত। সাংখ্য ও যোগ অর্থাৎ জ্ঞান ও কৰ্ম্মরূপ সাধন গীতারও বহু পূৰ্ব্ববর্তী কাল হইতে ব্ৰহ্মলাভের উপায় বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছিল । শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে ৬॥১৩ শ্লোকে আছে— নিত্যোহ নিতানাং চেতনশ্চেতনানাম্ একো বহুনাং যে বিদধাতি কামান । তৎকারণং সাংগাযোগাদিগম্যং জ্ঞাত্ব দেবং মুচ্যতে সৰ্ব্বপাশৈঃ ॥ অর্থাৎ, যিনি অনিত্য বস্তুসমূহের মধ্যে নিত্য, চেতনাশীলদের মধ্যে চেতনা, এক হইয়াও যিনি অনেকের কাম্যবস্তুসমূহ বিধান করেন, সাংখ্য ও যোগাদিগম্য সেই কারণরাপা দেবকে জানিলে সৰ্ব্বপাশের মোচন হয়। কারুণরূপী দেব ব্রহ্ম। র্তাহাকে জানিবার সাংখ্য ও যোগ এই দুই প্রকার সাধনের কথা এই শ্লোকে উক্ত হইয়াছে। ব্ৰহ্মলাভের সাধন কেন দুই প্রকার বলা হইল তাহ বিচাৰ্য্য। জীব যতক্ষণ বহির্জগতের মায়ায় আবদ্ধ থাকে ততক্ষণ ব্ৰহ্মদর্শন হয় না। বহির্জগতের স্বরূপ উপলদ্ধ হইলে তাহা জীবকে আকৃষ্ট করে না ও তখনই ব্ৰহ্মদর্শনের সম্ভাবনা উপস্থিত হয় । বহির্জগতের সহিত মমুষ্যের দুই প্রকার সম্বন্ধ বর্তমান—এক আদান ও অপরটি প্রদান । একটির দ্বার জ্ঞানেন্দ্রিয়, অপরটির দ্বার কৰ্ম্মেন্দ্রিয়। বহির্জগৎ জ্ঞানেন্দ্রিয়ের মধ্য দিয়াই প্রতিভাত হয়, এবং আমরা কৰ্ম্মেন্দ্রিয়ের সাহায্যেই বহির্জগতকে নিজ আবশ্বকাচুযায়ী পরিবর্তিত করিবার চেষ্টা করি। জ্ঞানেন্দ্রিয় যদি আমাদের বহির্জগতের স্বরূপ উপলব্ধি করাইতে পারে তবে মন অস্তমুখ হইয়া ব্ৰহ্মদর্শন করায়। এইজন্য জ্ঞানের দ্বারা ব্রহ্মদর্শন সম্ভব। অপর পক্ষে যদি আমরা কৰ্ম্মেন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুষ্ঠিত কৰ্ম্মসমূহের স্বরূপ জানিতে পারি তাহ হইলেও বহির্জগতের সহিত সম্পর্কের তত্ত্বজ্ঞান উৎপন্ন হয়, ও তখন ব্ৰহ্মদর্শন সম্ভব হয় । যেসমস্ত জ্ঞানের প্রাধান্য আছে সে-সমস্তই সাংখোর SSD9āు অন্তর্গত। আর যাহাতে কৰ্ম্মের প্রাধান্য আছে তাহাই যোগের অন্তর্গত। কৰ্ম্মের দ্বারা আমাদের বহির্জগতের সহিত বস্তুগত সংযোগ হয় বলিয়াই এই মার্গকে যোগ বলা হয় । কপিল সাংখ্য যেমন সাংখ্য মার্গের অন্তর্গত, সেইরূপ পাতঞ্জল যোগও যোগমার্গের অন্তর্গত। গীতায় পাতঞ্জলযোগ, বুদ্ধিযোগ ইত্যাদি সমস্ত কৰ্ম্মপ্রধান ব্ৰহ্মলাভের উপায়কে যোগের অন্তভুক্ত করা হইয়াছে। বহির্জগতের সহিত আদান-প্রদানের যেমন দুই ভিন্ন তিন মার্গ নাই, তেমনি ব্ৰহ্মলাভেরও দুই ভিন্ন তিন মার্গনাই। এইজন্য শ্বেতাশ্বতরে ব্রহ্মকে সাংখ্যযোগাদিগম্য বল। হইয়াছে। গীতায় যে-সকল নিষ্ঠ বা সাধনের উল্লেখ আছে তাহা জ্ঞান বা কৰ্ম্মের প্রাধান্ত হিসাবে এই দুই বিভাগে ফেলা যায় । সাংখ্যমাৰ্গ : – সংন্যাস, কাপিল সাংখ্য, অন্তকালে ব্রহ্মস্মরণ, ওঁকারের ধ্যান, ধ্যান বা আত্মার স্বরূপ চিন্তন, অবতারবাদ, অহোরাত্র বিদ্যা, অধ্যাত্ম ও অধিযজ্ঞবাদ, ক্ষেত্ৰক্ষেত্রজ্ঞবাদ । যোগমার্গ –পাতঞ্জল যোগ, প্রাণায়াম, যজ্ঞ, ইন্দ্রিয় সংযম, ব্রহ্মচৰ্য্য, তপ, বেদপাঠ, উপবাস, দান, দেবতাপূজা, পিতৃপূজা, ভূতপ্রেত পূজা, পত্রপুষ্প ইত্যাদি উপচারে পূজা, মন্ত্র, ঔষধ, রাজবিদ্যা। সাংখ্য ও যোগ মার্গান্তর্গত সাধনপদ্ধতিগুলির যেবিভাগ উপরে দেখান হইল তাহ নির্দোষ নহে। এমন অনেক মার্গ আছে—যথা ইন্দ্রিয়সংযম বা ইন্দ্রিয়প্রত্যাহার— যাহা দুই মার্গের মধ্যেই পড়িতে পারে ; ধ্যান সম্বন্ধেও সে কথা বলা চলে। সাংখ্য ও যোগমার্গকে সাধারণ ভাবেই পৃথক বলা যাইতে পারে ; শ্ৰীকৃষ্ণ নিজেই বলিতেছেন, অৰ্ব্বাচীনগণই এই দুই মার্গের পার্থক্য দেথে ; জ্ঞানিগণের নিকট এই দুই মার্গই এক ( ৫৪-৫ )। কৃষ্ণের মতে উপযুক্তভাবে কৰ্ম্মামৃষ্ঠানে যে জ্ঞান জন্মে তাহাতেই ব্ৰহ্মপ্রাপ্তি হয়। জ্ঞানেই মুক্তি অর্থাৎ মুক্তি সাংখ্যলভ্য, কিন্তু জ্ঞান কৰ্ম্মলভ্য, অতএব এই দুই মার্গকে পৃথক করা যায় না। কৰ্ম্ম নিঃশেষে বর্জন করিয়া কেবল, জ্ঞানের চর্চা সম্ভব নহে ; জ্ঞানমার্গেও কৰ্ম্মত্যাগ হয় না ...