পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন হুইস্ল দিল । বড়বাৰু কাগজটা মুঠার মধ্যে মুড়িয়া দুটিয়া গিয়া উঠিয়া পড়িলেন । • পথের সময়টুকু দুশ্চিন্তার মধ্যে কখন কাটিয়া গেল টেরও পাইলেন না। গাড়ি হইতে নামিয়া সটান ষ্টেশন ঘরে গিয়া দেখেন যদুনন্দন ভয়ে, সিদ্ধির নেশায় একেবারে জবুথবু হইয়া বসিয়া আছে। যাইতেই হাত-পা নাড়িয়া বলিল,—“হামার জরু কহলা ভেজী হায়, বড়াবাৰু. আপকা ঘরমে, এয়সা এক দারোগী হামকে নেহি বোলানেসে হাম কেঁও যায়গা ?.*হাম কেয়া কিয়া হয় ?..” যদুনন্দন যে হীরু নয় এ জ্ঞান যদিও বড়বাবুর তখনও ছিল, তথাপি অনেকক্ষণ পরে একজনকে সামনে পাইয়া, হাত-দুখানা যদুনন্দনের মুখের কাছে নাড়িয়া, খি চাইয়া বাংলাতেই বলিয়। উঠিলেন—“সব পাসকরা ভলণ্টিয়ার বউ রাখে।–চরখা কাটো-হতভাগ অামায় মৃত্যু জেরবার করলে রে---” হন হন করিয়া বাহির হইয় গেলেন । বড়বাবুর ঘরে দরজা ও বারানার দিকের জানলা বন্ধ করিয়া সুচারু সাজিতেছিল ।...নিশ্চয়ই নিঃশব্দে খানাতল্লাসি চলিতেছে .দরজায় আস্তে আস্তে দুইটি ঘা পড়িল, এবং কম্পিতম্বরে আওয়াজ হইল—“হুজুর, দারোগ সাহেব !:--” স্বচারু পায়ে পটি বাধিতেছিল,—একটু মৃদু হাস্য করিয়া স্বর যথাসম্ভব পরুষ করিয়া বলিল,-“সবুর করে, দিক্‌ করে। মং..” মুহুর্তের বিরাম, তাহার পর আরও ময়ম্বরে মিনতি হইল—“হুজুর, মেহেরবানি করকে.হাম ঘরকা মালিক হায়--ভলণ্টিয়ার তো হীরু বাবুক ঘরমে:-” পটির গেরো দিতে দিতে সুচারু বলিল,—“আঃ, জ্বালালে কালামুখী ।...তোমায় না বললাম কিরণ-ঠাকুরঝি, যে আমার না হ’লে...আর এই পটি বাধা এক হাঙ্গাম...” দুয়ার খুলিয়া, মৰ্দ্দান কায়দায় বুকে হাত দুইটা জড়াইয়া বলিল—“দেখো, চিনতে পারতী হায় ? গোফ দেখকে ডরতা...ও কি, তুই যে নিৰ্ব্বাক হ’য়ে গেলি, দেখ কাণ্ড ছুড়ীর ।...” বড়বাবুর বিস্ময়ে নিশ্বাস রোধ হইয়া আসিতেছিল, অক্ষুটস্বরে বলিলেন,—“এ কি ব্যাপার!” শিক্ষা-সঙ্কট ե-օԳ সুচারু হাফপ্যাণ্টের কোমর বন্ধটা কষিয়া দিতে দিতে হে হো করিয়া হাসিয়া বলিল,—“চমৎকার । তোর দাদা সামনে পড়লেও ঠিক ওমনি হতভম্ব হয়ে গিয়ে ঐ কথাই জিগ্যেস করত...আর চেহারাও ত ঠিক করেচিস্— মায় মাথার টাকৃটি পর্য্যস্ত.কই, পরচুলার সঙ্গে টাকু ত দেখলাম না..একেবারে অবিকল দাদাটি—.দখিস্, বৌদিদি না ভুল করে..." বড়বাবু হাপাইতে হাপাইতে বলিলেন,--“আপনি না হীরুবাবুর স্ত্রী ?” সুচারু আরও সজোরে হাসিয়া উঠিল ; বলিল,--- “আজ্ঞে ষ্ট্য, হীরুবাবুর ইস্তিরি, দস্তুরিভুক্‌ মাষ্টার-মশায় ।” —সঙ্গে সঙ্গে বড়বাবুর কাধের উপর একটা প্রচণ্ড চড় বসাইয়া বলিল,—“ব্রেভো ! তুই ভাই সিনেমাতে যl, লুফে নেবে , টকিতেও তুই মাং ক’রে দিবি...উ, আমারই সন্দেহ ধরিয়ে দিচ্চিস্, তা অন্তের আর কথা কি-না, আমি আর লোভ সামলাতে পরিচি না—তোর দাদাকে ত কখনও সামনে পাব না, তোর ওপর দিয়েই গায়ের ঝাল মিটিয়ে নি, জয়চন্দ্র যেমন নকল পৃথ্বীরাজের ওপর দিয়ে আশ মিটিয়ে নিয়েছিল.আয়.” বিমূঢ়, অসহায় বড়বাবর আর বাকৃষ্ণুষ্টি হইতেছিল না । “আয়” বলিতে এক পা পিছনে বাড়াইলেন । সুচারু হাতটা ধরিয়া হিড় হিড় করিয়া ভিতরে টানিয়া আনিয়া জোর করিয়া সামনের চৌকিটার ওপর বসাইয় দিয়! বলিল,—“দারোগাকা হুকুম নেহি মানত ; বস্ এমনি করে.মনে কর তুই, ধেন তোর দাদা আর আমি যে দারোগ। তাও একটু ভুলে যা ; এইবার শো-দেখুন মশায়, আপনার অত্র ষ্টেশনের জীবগুলি হচ্চেন কুয়োর ব্যাং, আর আপনি হ’চ্চেন আবার ধেড়ে ব্যাং । ‘ধেড়ে ব্যাং’ কথাটার ওপর যদি আপনার আপত্তি থাকে ত ‘বুড়ে তোতা’ বলতেও রাজী আছি.তা নিজে ডানার ব্যবহার ভুলে থাকেন, নতুন বুলী না শিখতে পারেন, আমার স্বামীদেবতাটিকে অমন করে...না ভাই, উঠিস্ নি, আমার দিব্যি, ব’লে নি দু-কথা আরাম করে.এই যে ঠানদি’–ও, মাইরি, তোমায়ু যা মানিয়েচে !...” “কি বকচি নিজের মনে ? আমি বলি বুঝি পার্ট