পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سیbدسb S90áు এবং বাহিরের কারুকার্য্য পৰ্য্যন্ত নিজ হাতে মাপজোখ করিয়া আঁকিয়, দাড়াইয়া থাকিয় দেখিয়া এবং স্থপতিদের দেখাইয়া দিয়া, তাহার নিভৃত মনের বহু আশা-সাধ-প্রীতির দ্বারা মণ্ডিত করিয়া তিলে তিলে স্থষ্টি করিয়াছিলেন, সে-বাড়ীতে র্তাহাকেই বাদ দিয়া একাকী নিজে প্রবেশ করিতে হৃষীকেশের মন উঠে নাই । চারিপাশে অনেকখানি করিয় বারানা, ভিতরে ছোট ছোট তিনটি ধর, অপরিহার্য্য আসবাব-পত্র, একপাশে একটি স্বানের ঘর। নিজের পড়িবার ঘরেই পৃথক একটি ছোট টেবিলে একাকী তিনি আহার করেন। নিতান্ত প্রয়োজন ন হইলে এই স্বাধিকারের সীমা কদাচ লঙ্ঘন করেন না | গাড়ীবারানার নীচে আস্কিন সেডান হইতে নামিয়। মন্দিরার হাত ধরিয়া বীণা তাহার পড়িবার ঘরে গিয়া হাজির হইল । হৃষীকেশ একমনে সেদিনকার বিলাতী ডাকের প্রেততত্ত্ববিষয়ক একটি কাগজ পড়িতে ব্যস্ত ছিলেন, মন্দির ছুটিয়া গিয়া "দাদুমণি আমরা এসেচি” বলিয়। একেবারে তাহার কোলের উপর ঝাপাইয়া পড়িল । একটু হাসিয়া অতিসন্তপণে চোখ হইতে চশমাট খুলিতে খুলিতে হৃষীকেশ কহিলেন, “তোমাদের ক্লাবের মিটিং হয়ে গেল মা ?” বীণা কহিল, “শেষ হয়নি এখনও । মেয়েটাকে নিয়ে কি পারবার জে৷ আছে, পালিয়ে আসতে হ’ল ।” হৃষীকেশ হাসিয়া সস্নেহে মন্দিরার পিঠে হাত বুলাইলেন । র্তাহার মাতৃহীন কন্যা, পিতৃহীন৷ দৌহিত্রী ! পিতাপুত্রীতে আর-কোনও কথা হইল না । কাহারও সঙ্গেই একটি-দুইটির বেশী কথা বলা হৃষীকেশের স্বভাব নহে । আরও কিছুক্ষণ দাড়াইয়া থাকিয়া পিতার টেবিলেপড়া বইকাগজপত্র অন্যমনে নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিয়া বীণ৷ নিঃশব্দে মন্দিরাকে লইয়া চলিয়া আসিতেছিল, হৃষীকেশ তাহাকে ডাকিয়া ফিরাইয়া বলিলেন, “এই চিঠিখান। তোমার পিসীমাকে দিও, কেউ এদিকে ছিল না ব’লে এতক্ষণ পাঠাতে পারিনি।” হৃষীকেশ প্রয়োজন হইলেও দূর হইতে কাহাকেও ডাকিবেন না জানিয়া চাকরের। পারতপক্ষে তাহার দৃষ্টিপথের কাছাকাছি কোথাও থাকিত না। বীণ চিঠিটি হাতে করিয়া বাহির হইয়। যাইবার আগেই তিনি আবার কাগজে মনোনিবেশ করিলেন । দুতলাটার বেশীর ভাগ এতকাল খালি পড়িয়া ছিল। একটা ঘরে বীণার ভাই রাহু মাষ্টারের কাছে পড়া করিত, আর একটাতে ছিল মন্দিরার খেলার ঘরসংসার, বাকী ঘরগুলি বেশীর ভাগ সময়ই তালাবন্ধ থাকিত, অতিথিঅভ্যাগত কেহ আসিলে সেগুলির দরজা খোলা হইত, ধুলিঝুলে ঝাট পড়িত। হেমবালা আসার পর দুতলার সমস্তটা জুড়িয় তাহার বাস নিদিষ্ট হইয়াছে। রাহু এখন পড়াশোনার সময় ছাড়া দুতলাতেই তাহার কাছে দিনের অধিকাংশ সময় থাকে, তাহারই সঙ্গে শোয় । মন্দির। এতকাল তেতলায় মায়ের ঘরের পাশে আয়ার সঙ্গে শুইত, দুইদিন হইল ঝগড়া-ঝাটি করিয়া সেও দিদিমার সঙ্গে আসিয়া জুটিয়াছে। ফলে রাহু এবং মন্দিরার প্রায় সমস্ত ভারই হেমবালা লইয়াছেন, তাহার মনটার এখন এই ধরণের আশ্রয়ের প্রয়োজনও ছিল কম নয়। ভাইয়ের নিকট হইতে চাহিয়া-আনা ভক্তিতত্ত্ববিষয়ক কি একখানি বই হাতে করিয়া হেমবালা তাহাতে মনঃসংযোগের বৃথা চেষ্টা করিতেছিলেন । বীণ। ঘরে প্রবেশ করিতেই দেয়ালে ঝুলান ঘড়িটার দিকে আড়চোখে একবার চাহিয়া দেখিলেন। র্তাহার হাতে চিঠিটি এবং মন্দিরাকে অর্পণ করিয়া বীণা কহিল, “এই নাও তোমার চিঠি, আর এই নাও মেয়ে। আর কখনও যদি আমি ওকে সঙ্গে ক’রে কোথাও নিয়ে যাই ত কি বলেছি।” - হেমবালা হাত বাড়াইয়া চিঠিটি লইলেন, তারপর চিঠিস্বদ্ধ হাত সেইভাবে উচু করিয়া ধরিয়াই নতমস্তকে বইয়ের পাতা উন্টাইতে লাগিলেন । বীণা কহিল, “তুমি এখনও খাওনি পিসীমা ? ইলু যেন কি ! সব ক’রে রেখে গেলাম, একটু হাঁস ক’রে তোমার খাবারটা এনে দেবে তাও পারে না ?” পাতার ভাজের মধ্যে চিঠিটিকে রাখিয়া বই বন্ধ