পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b్నుe

  • প্রবামনী ;

S9విశ> “তাহলেও ত একটা কাজ হয়।" “তুই গিয়ে একদিন নেচে দিয়ে আসি। খুব ত তুই কাজের মেয়ে, পিসীমাকে চাটি খেতে স্থদ্ধ দিতে পারিস নি। যাবার সময় এত ক’রে ব’লে গেলাম।” ঐন্দ্রিলা বসিয়া বসিয়াই বলিল, “এইরে, এক্কেবারে ভুলে গেছি। রাহুসর্দার একবার এসে জুটলে কিছু কি আর মনে থাকৃতে দেয় ? আমি না-হয় এক্ষুণি যাচ্ছি।” বীণা বলিল, “থাক, তোকে আর যেতে হবে না, আমিই যাচ্ছি কাপড়চোপড় ছেড়ে ।” ঐন্দ্রিলা লুকাইয়া নিষ্কৃতির নিঃশ্বাস ফেলিল। কলিকাতায় ফিরিয়া অবধি পারতপক্ষে মায়ের কাছে সে ঘেষে না । হেমবালাও তাঁহাকে বড়-একটা কাছে ডাকেন না। ইহাতে মনে মনে সে খুশীই হয়। হেমবালা কলিকাতায় আসার সূত্রে তাহার জীবনে এবার যাহা বহন করিয়৷ আনিয়াছেন বহু চেষ্টা করিয়াও সে মহা-পরিবর্তনকে নিজের মনের মধ্যে সে গ্রহণ করিতে পারে নাই, মাকে দূরে দূরে রাথিয়া সেই সংশয়াকুল অবস্থাটার বিরুদ্ধে নীরবে সে বিদ্রোহ জানায়। ঐটুকু বিদ্রোহই তাহার স্বভাবের পক্ষে ছিল প্রচুর, কিন্তু সেটুকুরও প্রয়োজন হইত না, পিত অপরাধ করিয়াছেন ইহা যদি নিশ্চয় করিয়া সে বুঝিতে পারিত। মায়েরই নিকট হইতে উত্তরাধিকারসূত্রেপাওয়া তাহার স্বভাবের কঠোর ন্যায়নিষ্ঠ তাহার সমস্ত সংশয়-বেদনাকে তাহা হইলে মুহূৰ্ত্তে আড়াল করিয়া দাড়াইত। হেমবালারই মত নিজের বিবেকবুদ্ধি দিয়৷ যাচাই করিয়া চিরকাল সে পৃথিবীর বিচার করিত, যেখানে শাস্তি পাওনা সেখানে শাস্তিবিধান করিতে কোনও দিনই সে কুষ্ঠিত হইত না । কিন্তু তাহার স্বভাবে পিতা নরেন্দ্রনারায়ণের স্বভাবের উপকরণও বড় কম ছিল না । পিতার নিকট হইতে একটি জিনিষ সে অত্যন্ত বেশী করিয়া পাইয়াছিল। তাহ সৰ্ব্বত্র সমস্ত অবস্থায় অত্যন্ত সরাসরি বিচারযুক্তিহীন একধরণের সত্যাচুরক্তি । সত্য যাহা তাহা যে প্রকাশ পাইল না, নীরবতার আড়াল তাহাকে প্রবঞ্চনার মত হইয়া ঘিরিয়া রহিল, এজন্য কাহাকে সে দোষী করিবে ভাবিয়া পাইল না, কিন্তু তাহার সমস্ত মন তিক্ত হইয়া রহিল । বীণা কাপড় ছাড়িতে শুইবার ঘরে ঢুকিলে ঐন্দ্রিলাও তাহার অনুসরণ করিল। শাড়ী জামা পাট করিয়া আলমারীতে উঠাইয়। রাখিতে রাখিতে বীণা বলিল, “আজ একজন নূতন লোকের সঙ্গে আলাপ হ’ল।” তাহার বিছানার একপ্রাস্তে আধশোয়া হইয়া বসিয়া ঐন্দ্রিলা কহিল, “কে ?” “অজয় রায় ।” “সে আবার কে ?” “ঐ যে কাগজে লেখেন, গানও খুব ভাল করেন শুনেছি ।” “ছাপার অক্ষরে নামটা দেখেছি মনে হচ্ছে বটে, লেখা যদিও পড়িনি একটাও । গান যে শুনিনি তা জোর ক’রেই বলতে পারি।" “নিশ্চয় পড়েছিল, তোর মনে থাকে না। ভারতবর্ষে বাঙালীরাই চিরকাল সবচেয়ে লড়িয়ে জাত, এসম্বন্ধে এর একটা লেখা পড়ে আমরা খুব হেসেছিলাম, মনে নেই ?” "ও, হ্যা, মনে আছে বটে। খুব কি বীরপুরুষের মত দেখতে ?” “ঠিক উল্টে, তালপাতার সেপাই, তার উপর আবার ভাজা মাছটিও উন্টে খেতে জানেন না।” “ত ওরকম হয় ।” “তুই ত কতই জানিস। কটা মানুষকে দেখেছিস ? একদিন আয় না ।” “কি হবে ?” “অজয়বাবুকে দেখবি ।” ঐঞ্জিল। একটু হাসিল, কহিল, “তোমার বর্ণনা শুনে ত মনে হচ্ছে না খুব বেশী দেখবার মত।” বীণা একখানি কেঁচানো ঢাকাই শাড়ী আলনা হইতে পাড়িয়া লইয়া পরিডে পরিতে বলিল, “আহা, দেখবার মত আবার কি, দুটো শিঙ আছে, না শুড় আছে ? তবে ভারি মজার কিন্তু, তোর ঠিক ভাল লাগবে দেখিস ।" “আমার ভাল-টালে কাউকে লাগে না বাপু,” বলিয়৷ ঐন্দ্রিলা গা-মোড়ামুড়ি দিয়া উঠিয়া পড়িল । বীণা তাহার ঘর হইতে চলিয়া গেলে চিঠিমৃদ্ধ বইথানিকে বালিশে চাপ দিয়া রাথিয়া হেমবালাও উঠিয়া