পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন একটা ট্রাম, এবারেও চড়িল না। সকালে উঠিয়৷ যে-গানটা হুরু করিত সমস্ত দিন একনিষ্ঠভাবে সেইটাই গাহিয়া চলা তাহার স্বভাব ছিল, গুনগুন করিয়া গাহিতে লাগিল, “I can’t find a home till the morning time, One two three and four. I try to be good...” এবারে আর-একটা বাস যাইতেছে, একটি সুন্দরী যাত্রিণীর কবরীর কতকটা দেখা গেল, উঠিয়া পড়িল । একটু জায়গা করিয়া বসিয়াসহযাত্রী এবং সহযাত্ৰিণীদের ভাল করিয়া দেখিয়া লইতেছে, হঠাৎ চোখে পড়িল, যাহার পাশে বসিয়াছে সে-ব্যক্তি নন্দ । শিবনেত্র হইয়া মনে মনে কহিল, ‘নাঃ, আজ নিতান্তই শেয়াল বায়ে ক’রে বেরিয়েছি, আজ কপালে মুখ নেই। মুখে কহিল, “নন্দ যে, এতরাত্রে কোথায় চলেছ ?” নন্দ স্বজনহীন নিৰ্ব্বান্ধব একটি ছেলে । বয়স আঠারোউনিশ । কলেজে পড়ে । কোমল, তরুণীজনোচিত চেহারা । বা চোখের কোণে বড় একটা কালে তিল সমস্ত মুখটিতে যেন একটা বিষাদকরুণ ছায় বিস্তার করিয়াছে। তাহার ছোট দেহটি লইয়। সে খুব অল্প স্থানই অধিকার করিয়া বসিয়াছিল, তবুও প্রাণপণে গাড়ীর দেয়াল ঘেষিয়া সরিয়া বসিবার চেষ্টা করিতে করিতে বলিল, “পড়িয়ে ফিরছি।” বিমান কহিল, “তুমি আবার ছেলে পড়াও বুঝি } ঝকৃমারী কাজ ।” নন্দ মুখ কাচুমাচু করিয়া একটু কেবল হাসিল । “কদূর যাচ্ছ ?” “শেয়ালদা ।” “সেইদিকেই থাকো বুঝি ?” “আঞ্জে হ্যা", বলিয়। নন্দ খুকধুক করিয়া কাশিতে লাগিল । বিমান দেখিল, নন্দের মুখ অতিশয় শুষ্ক দেখাইতেছে, সম্ভবত সমস্ত দিন সে কিছুই আহার করে নাই। ভাবিল "রাতটা যখন মাটিই হ’ল তখন ভাল ক’রে ছেলেটার খবর নিতে হচ্ছে । যা ওর অবস্থা দেখছি,

  • لاً سب سے 8 e ۵

শৃঙ্খল Ե-ֆձ বেশীদিন আর টিকবে ব’লে ত মনে হয় না।’ কহিল, “কোনদিকে যাই ভাবছিলাম, তা বেশ ভালই হ’ল, তোমার ওখানে গিয়েই খানিকক্ষণ আডডা দেওয়া যাকৃ।” নন্দ অত্যন্ত কাচুমাচু করিতে লাগিল। বিমান কহিল, “কি হে, খেতে দিতে হবে মনে ক’রে ভয় পেয়ে গেলে নাকি ? না-হয় ঘরে যা আছে দু-জনে ভাগ ক’রে খাব ।” নম্ব তথাপি নীরবে মাথা নীচু করিয়া আছে দেখিয়। হাসিয়া কহিল, “ন, না, তুমি ভয় পেও না, আমি সত্যিই তোমার বাড়ী যাব মনে ক’রে কথাটা বলিনি।” অকস্মাৎ মুখ তুলিয়া নন্দ কহিল, "আপনি বুঝতে পারছেন না, পার্বার কথাও নয়।...আমার বাড়ী কোথায় যে আপনাকে নিয়ে যাব ?” বিমান কহিল, “সে কি হে? বাড়ী কোথায় কিরকম ? এই যে একটু আগে বললে শেয়ালদার দিকে থাকি ?” কোলের উপর ময়লা কম্বলে জড়ানো সরু বালিশের মত একটা জিনিষ দেখাইয়া নন্দ কহিল,"এই বিছানা নিয়ে শেয়ালদার প্লাটফৰ্ম্মে শুতে চলেছি, রোজ তাই করি।” “জিনিষপত্র কোথায় থাকে ? খাওয়া-দাওয়া কোথায় কর ?” “যখন সুবিধে হয় একটা হোটেলে খাই, জিনিষপত্র বইটই তাদেরই কাছে থাকে, সেখানেই স্নানটানও করি ।” বিমান এমন বিস্মিত মুখ করিয়া নন্দের আপাদমস্তক দেখিতে লাগিল, যেন এমন অসম্ভব কথা ইতিপূৰ্ব্বে জীবনে আর কখনও শোনে নাই। এই নিরীহ ছেলেটারও পেটে পেটে যে এত ছিল তাহা কে জানিত। কহিল, “কিন্তু শেয়ালদার প্লাটফৰ্ম্মে রোজ রাত্রে নিয়ম ক’রে কেউ শুতে যায় এ আজ আমি এই প্রথম শুনছি।” নন্দ একটু হাসিয়া বলিল, “মুটেমজুররা অনেকেই ত শোয়, তাদের মধ্যে মিশে যাই, কেউ লক্ষ্য করে না ।” “কলেজে পড়ছ, না পড়াশোনা খতম করেছ ?” “পড়ছি ।” "কখন পড়, কোথায় ব’সেই বা পড় ?” “প্লাটফৰ্ম্মে বেশ আলো পাওয়া যায়, সেখানেই শুয়ে শুয়ে পড়ি। দিনের বেলাটা বিশেষ-কিছু হয় না ।”