পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮২৬ S99ఖి) বিমান কহিল, "সে বেশ কথা, ডেপোমি রেখে এইবার নামে দেখিনি, এখানে গাড়ী বদলাতে হবে।” “কোথায় যাব ?” “আপাতত: ওয়েলিংটন স্কোয়ারে আমাদের বাড়ী, তারপর দেখা যাবে।” নন্দ কাকুতিমিনতি করিয়া তাহার নিজের ধবশে অনেক আপত্তি করিল, বিমান কিছুই কানে করিল না । অজয় যখন স্বভদ্রকে লইয়া ক্লাব হইতে বাহির হইল তখন মাধুর্য্যের প্লাবনে সন্ধ্যাবেলাকার সমস্ত ভয়াবহতার চিহ্ন তাহার মন হইতে নিঃশেষে ধুইয়। মুছিয়া গিয়াছে। সৰ্ব্বদাই এইরূপ হইত, যেমন অলক্ষ্যে এবং অকস্মাৎ নিজেকে সে হারাইয় ফেলিত তেমনই অকস্মাৎ আবার ফিরিয়াও পাইত, নতুব। প্রকৃতিস্থ মন লইয়া সাধারণ মানুষের মত পৃথিবীতে বিচরণ করাই তাহার পক্ষে সম্ভব হইত না। এই ত নিজেকে দিয়া তাহার বুক পরিপূর্ণ রহিয়াছে, তাহার চতুর্দিকের অন্ধকার ভরিয়া অদৃশ্য আলোর আবেশ কঁাপিতেছে। দুইট দীপ্তি-সমুজ্জল চোখ আজ যে তাহার চোখে চোখে চাহিল, একটি অপরূপ কণ্ঠস্বর সঙ্গীতের মত হইয় তাহার কানে বাজিল, ইহারই মধ্যে নিজের কোন অন্তরতম পরিচয় সে আজ যেন খুজিয়া পাইল । যেন সেই নামহীন অস্ফুট কামনার উপলব্ধিকে বহু জন্মজন্মস্তির নিজের মধ্যে সে বহন করিয়াছে, মৃত্যু হইতেও বেশী অর্থপূর্ণ করিয়া ইহাকে সে আজ অমুভব করিল। যে কুংসিত প্রাগৈতিহাসিক জীবের থাবা-দুইটার সঙ্গে নিজের হাত দুইটির সাদৃশ্য কল্পনা করিয়া সন্ধ্যায় সে ভয়ে বিহবল হইয়াছিল, তাহারও অস্তিত্বের কোন গহনতম কোণে এই মাধুর্যোর উপলব্ধি যেন প্রদীপের মন্ত জলিয়াছিল, বহুযুগব্যাপী বিবর্তনের অনিশ্চিত অন্ধকারে একবার ও তাই সে পথ ভুল করে নাই। স্বভদ্র কহিল, “ক্লাব কেমন লাগল ?” অজয় কহিল,"বেশ ।” আজিকার দিনে কি সে পাইয়াছে, এ জিনিষকে নিজের জীবনে কিভাবে গ্রহণ করিবে, এ প্রশ্ন তাহার মনে জাগিল না । কেবল অনুভব করিল, নুতন স্থধ্যোদয়ের আয়োজন হইতেছে, কোন মায়াকাঠির স্পর্শে ধীরে এক জ্যোতিলোকের দ্বার খুলিয়। যাইতেছে, আলোকের মহোৎসব স্বল্প হইতে আর দেরি নাই। সেখান হইতে সঙ্গীতের ঝঙ্কারে কি গভীর আহবান কানে অসিতেছে, কিন্তু সে কাহার আহবান তাহ জানিতে আজ তাহার মন ব্যগ্র হইল না। উংসবের ক্ষেত্রে জ্যোতিরাসনে বিশেষ-কোনও মানুষকে বসাইল না। কিন্তু সম্পূর্ণ পরিতৃপ্ত চিত্তে নীরবে পথ অতিবাহিত করিতে লাগিল । ক্লাব অজয়ের ভাল লাগিয়াছে শুনিয় স্ন ভদ্র উৎসাহিত হইয়া উঠিয় সারাপথ সেই বিষয়েই অনর্গল বক্তৃতা করিতে করিতে চলিল। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে নানারূপ জল্পনা, ক্লাব ঠিকমত গড়িয়া উঠিলে তাহা হইতে দেশের ভাগ্যে কত অসংখ্য অসম্ভব-সম্ভাবনার সূত্রপাত হইবে তাহার হিসাব, কিন্তু অজয় শুনিল মাত্রই, মৃ ভদ্রের একটা কথাও তাহার মনকে কোনও দিক্ দিয়া স্পর্শ করিল না। ওয়লিংটন স্কোয়ারের এক কোণে একটা সরু গলির মধ্যে মস্ত কয়েকট বাড়ীর আওতায় ছোট দুইতলা একটি বাড়ী । বাহিরট। অনাড়ম্বর কিন্তু পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর, আধুনিক স্থাপত্যের আদর্শে বড় বড় দরজ এবং জানাল চারিদিক্কার দেয়ালের প্রায় চোদ আনা জুড়িয়াছে । এক পাশে দেয়াল-ঘের একফালি জায়গা, তাহারই এক প্রাস্ত জুড়িয়া ভিতরে ঢুকিবার দরজ। ঢুকিয়াই বদিকে একতলায় বসিবার ঘর। দেয়ালে একই মাপের গুট-দশবারে ওয়াটার-কালার ছবি, কয়েকট। বিমানের আঁকা, বাকীগুলি তাহার বন্ধুদের দিয়া আঁকানে । পোকায় খাওয়া জীর্ণ, চেপিসানো পত্র-পল্লবের মধ্যে একগুচ্ছ তাজ। বনমল্লিক, এবং নীলাভ আকাশের গায়ে একটি রামধন্থ বর্ণের জলবুদ্ব দ যে বিমানের আঁকা তাহ। সহজেই বোঝা যায় । মেহগনি কাঠের মোটা চৌকাধরণের গুটি-কয়েক চৌকি এবং একটি টেবিল, সেগুলিতে রং অথব পালিশ নাই। জানালায় নীল পদ, চৌকিগুলিতে নীল রঙের কুশন। এক পাশে সবুজ বেজে’ আস্তুত একটি ছোট লিখিবার ডেস্ক । স্বভদ্র দুইবেল স্নান করিত, চাকরকে গরম জল দিতে বলিয়। সে উপরে চলিয়া গেলে অজয় চিঠির কাগজ এবং