পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন ধ্বংসকারী বন্যা’ আদি অনর্থের মূল কারণ। নদীর শাখা-প্রশাখা অর্থাং •নাল প্রভৃতি কদাচ বন্ধ বা আবদ্ধ করিতে নাই। নদীর চক্ষ আছে—বোধ হয় সেই জন্যই অনেক নদীকে আমরা এক্ষণে ‘কাণা করিতে পরিয়াছি! ভূপৃষ্ঠের ক্রমনিম্নত বুঝিয়া ও গড়িয়া নদী গন্তব্য পথে যাইতে জানে ; প্রকৃতির নিয়ন্ত্রিত কার্য্যসাধনে নদী সদাই আবেগময়ী। আমর পৃলিয়া গিয়া নিজেদেরই অমঙ্গল ঘটাইতেছি । হিন্দু ও মুসলমান রাজত্বকালে সেচনকাৰ্য্যাদির জন্য নদীজল যাহাতে সুলভে ও সমভাবে বিস্তারিত হযু তজন্য রাজকৰ্ম্মচারী ও ভূস্বামী নিযুত যত্নবান থাকিতেন এবং পুলবন্দী’ বা ‘পোস্তাবন্দী’ নামক প্রথাবলঙ্গনে নদীর সংস্কার-কাৰ্য্য নিয়মিতভাবে সমধি হইত। এখনকার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মনোযোগী না হইয়৷ কপাট ও বাধের কলকৌশল স্থাপনে জল-সংকোচের নিমিত্ত প্রাণপণে চেষ্টা করিয়া আসিতেছেন । ফলতঃ পৰ্ব্বতনিঃসৃত অপরিমিত ‘মিঠাপানি’ সংকার্য্যে ব্যবঙ্গত না হইয় অযথারূপে বতিয়া লোনা গাঙে' পড়িয় নষ্ট হইতেছে। এদিকে আমরা, দুগ্ধপোষ্য শিশুকে কেবল জল পাওয়াইয়া রাখার মত কৃষিকাৰ্য্যাদির জন্য দেশকে আকাশের বৃষ্টির উপর নির্ভর করাইয়। রাখিয়াছি। পল্লীথামের কৃষক এ কথা বুঝে, কিন্তু কথা শুনিবে কে ? নদীনালার গৌরব হ্রাস হওয়ার নেী জীবী ও মৎস্যজীবী সম্প্রদাধের অন্নসমস্ত বৃদ্ধি পাইয়াছে। মৈমনসিংহ, ঢাকা প্রভৃতি জেলায় পূৰ্ব্বে জনসংখ্যার প্রায় এক-অষ্টমাংশ কেবল নদীসংক্রাস্ত কার্য্যে ব্যাপৃত থাকিত ; সুতরাং মংসালোভী বাঙালীর খাদ্যস্থখ যথেষ্ট ছিল । এক্ষণে নদীবক্ষে জেলে-ডিঙ্গির পরিবর্তে কচুরী-পান পরিলক্ষিত হয় । কেহ কেহ মনে করেন বাংলা দেশের অনেক নদী মরিয়া গিয়াছে। এই ধারণ সম্পূর্ণ ভূল। বস্তুতপক্ষে অবহেলাপ্রযুক্ত বা কৌশলক্রমে আমরাই অনেক নদীকে মারিয়া ফেলিতেছি। নদীর উৎপত্তি-স্থানে বা গর্ভে বা মোহানায়, বা একাধিক স্থানে বাধাল ও অন্যান্যরূপ অবরোধ দেওয়ার ফলে নদীতে জলপ্রবাহ বন্ধ খাল এ কথা নদীমাতৃক বঙ্গদেশ ե-(tՎ) বা হ্রাস হইয়া নদী ক্রমশঃ ভরাট হইয়া আসিতেছে। ছোট সেতু ও অপরিসর সাকোর প্রভাবে নদীনালার যে কি সৰ্ব্বনাশ করা হয় তাহ কর্তৃপক্ষ ও জনসাধারণ অনেক সময় উপলব্ধি করেন না। নদীর গর্ভে পোস্ত বাধিলে বা নদীর পার্থে লম্ব বাধ দিলে নদীর ক্ষতি হয় ইহা সকলেই জানেন, কিন্তু প্রতিকারের চেষ্টা করেন কয়জন ? যে-সকল বিল ও জলাভূমিতে উদ্ধ স্ত্ৰ নদীজল কিছু সময়ের জন্য সঞ্চিত থাকিয়৷ চতুস্পার্থের ভূমিকে সরস রাখে, আমরা সেই সকল জলভাগুtকে জলাগম বন্ধ করিয়া অকালে সেগুলিকে চাষের জমিতে পরিণত করিতে উদ্যত হইয়াছি । সমুদ্র হইতে জোয়ারের জল যথেষ্ট পরিমাণে নদীমুখ দিয়া প্রবেশ করিতে পাইলে ভাটার সময় জলের বেগে নদী আপনি পরিস্কৃত হয় ; কিন্তু খাসমহলের ‘আবাদ জমিতে লোন জল প্রবেশ করিবার আশঙ্কায় নদীর ক%প্রদেশে ক্রমাগত বঁধে দিয়া দক্ষিণ-বঙ্গের অবস্থা এরূপ শোচনীয় করিয়াছি যে, নদীগর্ভ ও সমুদ্রতট ক্রমশ: উচ্চ হইয়া যাওয়ায় খুলনা ও ২৪-পরগণা প্রদেশের বৃষ্টির জল সম্যক নিকাশ হইতে পারে না । একদিকে জলভার কমাইবার উদ্দেশ্যে স্বভাবজ নদীনাল। উৎখাত করা হইতেছে, অপরদিকে জলসম্ভার বাড়াইবার নিমিন্ত নদীর স্থানে বহু বায়ে কাট খাল প্রস্থত হইতেছে। মায়ামুগ্ধ হইয়া আমরা মরীচিকার অনুসরণ করিতেছি । আমাদের দেশে নদী মরিয়া গিয়াছে বা স্বাভাবিক নিয়মে মজিয়া যাইতেছে— ইহা শিখান কথা, সত্য নহে । নদীগহবর স্বাভাবিক নিয়মে পূর্ণ হইয়া গেলে নদীর গতি পরিবর্তন হয়, এবং গহবর বিদ্যমান থাকিতে নদীর কার্য্য শেষ হয় না বা নদী মরে না । আমরা বাংলা দেশের প্রাকৃতিক তত্ত্ব একবার ভাবিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারি যে, যতদিন উত্তর দিকে হিমগিরি এবং দক্ষিণ দিকে মহাসাগর বর্তমান থাকিবে ততদিন এ দেশের নদী মরিবে না ও মরিতে পারে না। আলোচ্য বিষয়ে পাণ্ডিত্যাভিমানী না হইয়া বহু শতাব্দীর অভিজ্ঞতা ও সহজ বুদ্ধির উপর আস্থা রাখাই শ্রেয়। বঙ্গীয় রাজস্ব-বিভাগের বর্তমান সদস্য ( Hon-ble Mr. F. A Sachse, C.I.E, Í C.S.) VERKF RfRRtTER