পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন কথা দিচ্ছি সদা, আর তাকে বকব না, কোথায় আছে বস্—গিয়ে তার পায়ে ধ’রে নিয়ে আসি— সদা কি বলিতে যাইতেছিল । তারিণী বলিল—জয়ার জন্যে কি হয়েছে দেখবি তবে ? এই দেখ সদা দেখ—বলিয়া তারিণী চশম খুলিল –এই দেখ— সদা দেখিল, চোখ দুটি লাল জবাফুলের মত রং ধরিয়াছে। চোখের চারিদিকে ফুলিয়া ঢাবা হইয়া আছে ; তারিণীর চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িতে লাগিল। ঝোল। মাংসের উপর জল পড়িয়া চোখ দুটি থল-থল করিতে থাকিল । সদ বলিল—ঠ্যাঙ দিয়ে খুঁচিয়ে দিয়েছে বুঝি ? জানোয়ার একটা । —ন রে সদ, তা কেন, কেঁদে কেঁদেই এইরকম, রাতে কি ঘুম আসে ? দুচোক বুজে পড়ে থাকি ; কথাটা রাখ সদ—যদি তার সন্ধান জানিস ত—খবরটা দে-আমি মলুম ! সদা কিছু বলিবার পূৰ্ব্বে মাখন হাপাইতে হাপাইতে আসিয়া হাজির ৷ বুঝা গেল অনেক দূর হইতে দৌড়াইয় আসিতেছে ; পায়ে তাহার ধূলা জমিয়া চামড়া ঢাকিয়৷ গিয়াছে । মাখন চোখ-মুখ দিয়া কথা বলিতে লাগিল—তুই এখেনে ? আর সবাই যে বসে তোর জন্যে ; সব হাজির— ইকো কলকে—সব—আর শোন— মাখন আড়ালে গিয়ে চুপি চুপি বলিল—জয়া এসেছে— আমাদের জয় রে—আজকে পোয়া বারে । আজি সারা রাত চলবে—বুঝলি ত ? সদানন্দ একেবারে অবাক হইয়া গেল । —জয়া এসেছে ? কোখেকে এল সে ? চুপ, চুপ, এদিক পানে আয় বলছি—তারিণীদাকে জানাতে বারণ করেছে। সদাকে টানিয়া লইয়া মাখন চলিয়া গেল । দোকানে বসিয়া তারিণীর আবার রামায়ণ পড়া চলিল । রামের শোকে দশরথ যেখানে খেদ করিতেছেন, সেইখানটা পড়িতে পড়িতে তারিণীর দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হইয়া আসিল । প্রেম নাই ኬሙ¢¢ গ্রাম ছাড়াইয়া যতদুর দৃষ্টি যায়, দু-একটা লোক চলাচল করিতেছে। তাহদের মধ্যে জয়া নাই। সারাটি দুপুর অলস দৃষ্টিতে তারিণীর মুখের পানে তাকাইয়। থাকে।—এমনি করিয়া একটি মাস—সেই যেদিন জয়া চলিয়া গিয়াছে—সেইদিন হইতেই । বাড়ির সামনে পেয়ারা গাছের পাশে ছোট একটু ঘেরা জমি। দু-টা ধানি লঙ্কার চারা, চারিট মানকচুর গাছ, কিছু কঙ্কা নটে-শাক—এই সব । ও-সবই জয়ার হাতের পোত ৷ জয়াও নাই, গাছগুলিও অযত্নে মরিতে বসিয়াছে। তারিণী দাড়াইয়া দেখিতেছিল— দেখিতেছিল আর ভাবিতেছিল— অনেকদিন আগে—জয়া তখন এই এতটুকুন, কোলে চড়িয় বেড়াইত । পেয়ার গাছের নীচের দিকের ডালগুলি ঝু কিয়৷ মানুষ-সমান নামিয়াছিল-পাড়ার ছোড়াদের জালায় গাছে একটা পেয়ীরাও থাকিবার উপায় নাই । কেমন করিয়া কি জানি একটা ডাস পেয়ারা পাতার আড়ালে তখনও পৰ্য্যন্ত আত্মগোপন করিয়া ছিল । তারিণী জয়াকে উচু করিয়া ধরিয়া তুলিয়া বলিল— হাত বাড়, ধর—ওই যে গোলপান পেয়ারাট ধর্—দূর বোকা ছেলে—পারলি নে ? তারিণী জয়াকে নামাইয়া লইল—আবার তুলিয়া ধরিয়া বলিল—এইবার নে—ওদিক পানে তাকা—নে ধর, ७्रवीद्र-लूद्र ! জয় তখন কাদিয়া উঠিয়াছে। তাহার আঙলে কি একটা কামড়াইয়৷ দিয়াছে। যন্ত্রণায় ছেলে ছট্‌ফট্‌ করিতে লাগিল ; চীৎকারে পাড়া মাং হইয় গেল । তারিণী তখন পাগলের মত হইয়া উঠিয়াছে। জয়াকে কোলে লইয়া নাচাইতে লাগিল । দিন-কতক পরে সেই আঙল ফুলিয়া উঠিল, ফুলিয়া আলুর মত হইল, আলুর মত হইয়া পাকিয়া উঠিল— তারপর একদিন বিপিন নাপিত আসিয়া নরুণ দিয়া চিরিয়া দিয়া গেল । তারিণী চাহিয়া দেখিল-পেয়ারাগাছের সেই ডালটি