পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন তারিণী ফিরিয়া আসিল। ফিরিয়া আসিয়া দোকানের মাচায় উঠিয়া চাদর এবং ছাতি পড়িল । জুতা খুজিয়া মিছামিছি সময় নষ্ট, দরকার নাই, খালি-পায়েই বেশ যাওয়া যাইবে । দোকানের বাপ বন্ধ করিয়া তারিণী চাবি-তাল লাগাইল । এইবার যাত্র করিতে হইবে। মঙ্গলচণ্ডীর মন্দির হইতে মায়ের পূজার ফুল সঙ্গে লওয়া দরকার—তারিণী পথে নামিয়া ছাতা খুলিল । ধূলি-ধূসরিত পথ । পড়ন্ত-বেলার রোদ পড়িয়! তারিণীর আসিল । চারিদিকে বিস্তৃত মাঠ—মধ্য দিয়ু উচু সরকারী রাস্ত। একটা গ্রাম ছাড়াইয়া আবার কতক্ষণ পরে একট। গাম আসে, গ্রামে ঢুকিবার পথে কুকুরগুলি তারস্বরে চাংকার করিতে করিতে ছুটয় আসিল, তারিণী কোন রকমে তাহদের পাশ-কাটাইয়৷ চলিল । স্বপ্নাবিষ্টের মত চলিতে চলিতে তারিণীর কত কি মনে হইতেছে— বাতাসের সো-সে। শব্যের ভিতর জয়ার কাতরনিঃশ্বাস যেন বহুদূর হইতে ভাসিয়া আদিতেছে । কোথায় অনেক দুরে কাহাদের এক ঘাটের ধারে বসিয়। দিনাস্তে এত-কটা মুড়ি চিবাইয় এতক্ষণে জয়া হয়ত পুকুর হইতে ঢকু ঢক্‌ করিয়া খানিকটা জল গিলিয়া ফেলিল । অপরিস্কার জল ; তা হউক, সারাদিনের উপবাসের পর ওইটুকু যেন অমৃত। জয় জল খাইয় ফেলিয়া বঁচিল । জয়ার কাল্পনিক তৃপ্তি স্মরণ করিয়া তারিণী জোরে জোরে পা ফেলিতে লাগিল । তাহার মাথার বেদনাও যেন কমিয়া আসিল । সামনে বরাবর রাস্ত পড়িয়া রহিয়াছে—কতকাল ধরিয়া এমনি পড়িয়া থাকিবে ; এই পথ দিয়া তারিণী চলিতেছে—জয়া চলিতেছে. তারপর ? জয়ারও ছেলে হইবে ত! কিন্তু ওর ছেলে হইয়। উহাকে যেন এত কষ্ট না দেয় ! মাথা ধরিয়! একটা গভীর তৃপ্তির নিঃশ্বাস প্রেম নাই Ն6 খড়-বোঝাই গরুর গাড়ী সারবনী চলিতেছিল । গা ধুlখানের গাড়ী স্থাকাইতেছে আবার গানও গাহিতেছে। একজন বলিল—ও কৰ্ত্ত—একটু সরে দাড়াও দিকি, এ গরু তেমন নয়-- তারিণী সরিয়া দাড়াইল, বলিল-কদর যাবে গ তোমরা ? তাহারা যাইবে রেল বাজারে। কাহারও গাড়ীতে পাট, কাহীর ধড়, কেহ খালি টিন লইয়। ধাইতেছে বাজার হইতে কেরোসিন্‌ আনিবে । দল বাধিয়া যাইতেছে আবার দল বাধিয়া ফিরিবে। ফিরিতে অনেক রাত হইয়! যাইবে । বদন বলিল—তুমি কদ্ধর ? তারিণীর তখনই প{ ব্যথ। করিয়া উঠিয়াছে । সবে ত মাইল-খানেক রাস্ত আসা হইয়াছে—এখনও ইহার ডবল বাকী যে ! রোদের তেজ কমিয়া আসিলেও এতটুকু ছায়া কোথাও নাই । তারিণী বলিল—উঠব নাকি-বেশী দূর না—বুঝলে এই চাপাতলার হাট ! বলিয়া নিকটের অশ্বখ গাছটার দিকে আঙল দিয়া দেথাইয় দিল । ত বদন লোক ভাল, খানিকট পোয়াল বিছাইয়। গদী করিয়া দিয়া বলিল—বোস এইপেনে আয়েস ক’রে, বুড়ে মাচুর্য । ধন্তি সাহস বটে আজ্ঞে ।. পথে চলিতে চলিতে আলাপ জমিয় গেল । বদন ট কি হইতে বিড়ি বাহির করিয়া বলিল—চলবে নাকি ? ওসব তারিণী ছাড়িয়া দিয়াছে। বলিল—ছেলেটা যাবার পর থেকে আর খাইনে বুঝলে—ওই সল নিয়েই ত গগুগোল বাধল কি-না । সব শুনিয়া বদন চুপ করিয়া রহিল। বদনের মেজ ছেলেটাও অমনি গোয়ার-গোবিন্দ ছিল । আছে ত আছে বেশ আছে, খায়-দায় আড্ডা দেয়, কিন্তু হঠাৎ কি যে হইয়। যাইত একদিন সকলের উপর রাগ করিয়৷ কোথায় উধাও হইয়া যাইত, ছু-মাস তিন মাস কটিয়া যায়...তাহার পাত্তাই নাই। কিন্তু এখন সব রোগ একদম সারিয়া গিয়াছে, পীর সাহেবের ঔষধের গুণে : '