পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন তালগাছগুলি কালে জলের উপর ততোধিক কালে কালে ছায়া ফেলিয়া নির্বাক-দৃষ্টিতে দাড়াইয়া আছে। তারিণীও যেন উহাদেরই একজন হইয়া চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল—দাড়াইয়া ভাবিতে লাগিল : জয় যদি ওই জলেই ডুবিয়া থাকে ! না, ডুবিবার ছেলে ত সে নয় । অতি গভীর দৃষ্টিতে কাকচক্ষু জল তাহার দিকে চাহিয়া আছে । তারিণী আস্তে আস্তে নীচের পৈঠাতে নামিয়া আসিয়া তারপর মাথায় মুখে খানিকটা জল ছিটাইয়। দিল । চারিদিকে অন্ধকার ঘনাইয়া আসিল । এখন জয়াকে খুজিয়া বাহির করা শক্ত-বাড়ি ফিরিতে হইলেও রাত্রিটা এখানে থাকিতে হয় । তারিণী স্থির করিল, আজ রাত্রিট হাটেই থাকিবে—তারপর মাঝরাত্রে যখন রেলবাজার হইতে গাড়ীর দল ফিরিবে— সেই গাড়ীতেই উঠিয়া পড়িবে। বদন তাহাকে ফেলিয়। যাইবে না। কিন্তু সত্য সত্য মাঝরাত্রে তাহার যাওয়া হইল না। বাধা পড়িল প্রথম রাত্রেই— হাটের ভিতর বিস্তর লোক শুইয়া থাকে ; দেরিতে হাট ভাঙিয়া গেলে কেহ আর বাড়ি ফিরিয়৷ যাইতে পারে ন ; ওইখানেই এক কোণে পড়িয়া থাকে, তারপর রাত থাকিতে থাকিতে পরদিন কথন কে কোথায় চলিয়া যায় কেহ জানিতে পারে না । গুপীযন্ত্রের সঙ্গে ভুগি তবলা লইয়। কয়েকটা লোক ওদিকে তখন বেশ আসর জমাইয়া তুলিয়াছে , হৈ হৈ করিয়৷ তাহারা সারা আটচালাখানিকে সরগরম রাখিয়াছে। তারিণী একটা অপেক্ষাকৃত নির্জন স্থান বাছিয়া সেইখানেই চাদর বিছাইল । আশেপাশে বহু লোক শুইয়া ; কেহ ঘুমাইয়া নাক ডাকাইতেছে, কেহ তখনও ল্যাম্প জালিয়া মালের হিসাব মিলাইতেছে। ছাড়া গরুগুলি ওধারে শুইয়া সজোরে নিশ্বাস ফেলিতেছে—লারা রাত তাহার লেজ নাড়িয়া মশা তাড়ায়। তন্ত্রার মধ্যে তাহাদের মশা তাড়াইবার ছপাৎ ছপাৎ শব্দ তারিণীর কানে আসিতে লাগিল। প্রেম মাই مرخصی চারিদিকে একটি বিশ্রী আবহাওয়া ; তা হউক, সারাদিনের পরিশ্রমের পর তারিণীর ঘুম আসিতে দেরি হইল না। কত রাত্রে ঠিক হস্ ছিল না ; কি একটা শব্দে তারিণীর ঘুম ভাঙিয়া গেল ; একটা গোঙানির শব্দ ; কোন দিক্ হইতে যে আসিতেছে তারিণী তাহ অনুমান করিতে পারিল না। শবট হয়- খানিক থামে–আবার স্বরু হয় ; তারিণীর কেমন ভয় করিতে লাগিল । তারিণী উঠিয় বসিল । উঠিয়া বসিয়া চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, গুপীযন্ত্রের আওয়াজ তখন থামিয়া গিয়াছে। অন্ধকার চারিদিকে ; গাঢ় নিশুতি নামিয়৷ সন্ধ্যার সেই কোলাহল-মুখর হাটখানিকে একেবারে নিস্তেজ করিয়া দিয়াছে। শুধু সেই শব্দটা মাঝে মাঝে তারিণীর কানে আসিয়া বিধিতেছে । ঘুমের ঘোরটা ভাল করিয়া কাটিয়া যাইতেই তারিণী বুঝিতে পারিল শব্দটা আদিতেছে তাহারই বাম দিক হইতে। অস্পষ্ট নজর দিয়া তারিণী বুঝিতে পারিল—কে যেন ওখানে নর্দমার ধারে বসিয়া আছে, এবং যে বসিয়া আছে, শব্দটা করিতেছে সে-ই ! হঠাৎ কি একটা সন্দেহ হইতেই তারিণী উঠিয়৷ দাড়াইল ; আস্তে আস্তে লোকটির পিছনে গিয়া তারিণী সজোরে ডাকিল—জয়া ! জয়া পিছন ফিরিতেই তারিণী আবার বলিল-- গোঙাচ্ছিস্ যে—জর হয়েছে ? জয় কিছু উত্তর দিবীর পূর্বে তারিণী জয়ার কপলি স্পশ করিল । না, জর তাহার হয় নাই । জয়া বলিল-বডড মাথাটা কামড়াচ্ছে । তারিণী বলিল-আয়ু—উঠে আয়—আমার কাছে গুবি আয়—আয়— জয়াকে ধরিয়া তুলিয়া আনিয়া তারিণী তাহাকে চাদরের উপর শোয়াইল । বলিল-নে ঘুমে, কাল সকালে বাড়ি নিয়ে যাব তোকে—বুঝলি ? জয় একান্ত বাধ্য শিশুর মত চাদরের উপর চুপ করিয়া শুইয়া রহিল –এতটুকু আপত্তি করিল না ; তারিণী তাহার পাশে শুইয়া চাহিয়া দেখিল জয় যেন এই