পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পত্রধারা ঐরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দাৰ্জিলিং কল্যাণীয়াস্থ ধৰ্ম্ম-সম্বন্ধে আমার যে মত,চিন্তাপ্রণালী দিয়ে তার সঙ্গে তোমার মিল হয়ত হবে না, কিন্তু ভাবের দিক দিয়ে মিল হবে তোমার হৃদয় ধে-গন্ধে আনন্দ পেল, হয়ত ঠিক জানল না সে-গন্ধ রজনীগন্ধার বন থেকে আসচে, কিন্তু আনন্দটি সত্য। যদি ঐখানেই শেষ হ’ত তাহ’লে কথা ছিল না, আনন্দ যদি একান্ত নিজের মধ্যে এসে অবসান হ’ত তাহলে ঢুকে ধেত । ওকে যে আবার কোনো-নাকোনো একটা আকারে ফিরিয়ে দিতে হয়, পূজায়, সেবায়। কিন্তু ঠিকান ভূল হ’লে আপশোষের কথা। আনন্দ যখন পাই তখন সেট কোথা থেকে পাই স্পষ্ট নাই-বা জানলুম, পেলেই হ’ল। কিন্তু তার পরিবর্তে সেবা যখন দিই তখন কোথায় গেল ন জানলে লোকসান। পোষ্টবাক্সে চিঠি ফেলে দিলুম সেট যথাস্থানে গিয়ে পৌছল এটা কি সেই রকম ব্যাপার? ঠাকুরকে কাপড় পরালুম, সে কাপড় কি পৌছবে বস্ত্রহীনের কাছে, ঠাকুরকে স্নান করাল্ম সেই স্নামের জল কি পাবে ঘে-মানুষ জলের অভাবে তৃষিত তাপিত ? তা যদি না হ’ল তাহলে এ সেবা কোন কাজে লাগল ? কেবল নিজেকে ভোলাবার কাজে ? নিজের ছেলেকে যখন কাপড় পরাই তখন তার মধ্যে দুটাে কথা থাকে, এক হচ্চে সে কাপড় যথার্থই ছেলের প্রয়োজনের কাপড়, দুই হচ্চে ছেলের প্রতি আমার স্নেহ সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করে নিজেকে সার্থক করে। খেলার সামগ্রীকে যখন কাপড় পরাই তখন কেবলমাত্র আমারই তৃপ্তি হ’ল, বাকিটুকু বাৰ্থ । তুমি লিখেচ ঠাকুরের সেবা এবং জীবের সেবা দুইই আমাদের পূজার অঙ্গ, কিন্তু দুৰ্ম্মতিবশত যে|- দুঃখ-নিবারণের জন্য সত্যকার কাজে লাগে বর্তমানকালে সেটা আমরা উপেক্ষ করেচি। ভাল ক’রে ভেবে দেখো কালক্রমে এ মোহ এল কেন ? তার কারণ, এই বিশ্বাস মনে মনে আছে যে, ঠাকুরকে অন্ন দিয়ে বস্ত্র দিয়ে একটা সত্যকার কাজ করা হ’ল । তা ছাড়া ঠাকুরের স্থান সৰ্ব্বাগ্রে, জীবের স্থান তার পরে, অতএব বড় কৰ্ত্তব্যটাকে সস্তায় সেরে বড় পুণ্যটাকে লাভ করা হয়ে গেলে বাকিট বাদ দিতে ভয় হয় ন, দুঃখ হয় না—বিশেষত বাকিটাই যেখানে দুষ্কর । জাতকুল দেখে ব্রাহ্মণকে ভক্তি করা সহজ, লোকে তাই করে,—সে ভক্তি অধিকাংশ স্থলে অস্থানে পড়ে নিষ্ফল হয় ; যথার্থ ব্রহ্মণাগুণে ধিনি ব্রাহ্মণ তিনি যে জাতেরই হন, তাকে ভক্তির দ্বারা সত্য ফল পাওয়া যায়, কিন্তু যেহেতু সেটা সহজ নয় এই জন্যই অস্থানে ভক্তির দ্বারা কৰ্ত্তব্যপালনের তৃপ্তিভোগ করা প্রচলিত হয়েচে । আমাদের দেশে মানুষ সৰ্ব্বত্রই বঞ্চিত, উপেক্ষিত, মামুষের প্রতি কৰ্ত্তব্য যদি বা শাস্ত্রের শ্লোকে থাকে আচারে নেই ; তার প্রধান কারণ ধৰ্ম্মসাধনায় মানুষ গৌণ। সস্তায় পাপ-মোচনের ও পুণ্যফল পাবার হাজার হাজার কৃত্রিম উপায়ু যে-দেশের পঞ্জিকায় ও স্মৃতিশাস্ত্রের বিধানে অজস্র মেলে সে-দেশে বীৰ্য্যসাধ্য সত্যসাধ্য ত্যাগসাধ্য বুদ্ধিসাধ্য ধৰ্ম্মসাধনা বিকৃত না হয়ে থাকতেই পারে না। যেটা অস্তরের জিনিব, যেটা চৈতন্তের জিনিষ সেটাকে জড়ের অনুগত ক’রে যদি নিয়ত তার অসম্মান করা হয় তবে আমাদের অন্তর-প্রকৃতি জড়ত্বে ভারগ্রস্ত হ’তে বাধ্য। দেবপ্রতিমার কাছে পাঠা বলিদানের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা যখন করি তখন বলে থাকি পাঠাট প্রতীকমাত্র, আসল জিনিষটা হচ্চে মনের পাপ, কিন্তু ব্যাখ্যাট মুখের কথা, কটাই বাস্তব, তাই পাপট যেখানকার সেখানেই থেকে যায় বরঞ্চ কিছু বেড়ে ওঠে। মাঝের থেকে হতভাগা প্রতীকটা পায় দুঃখ। প্রতীকেরই ৷