পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ পত্রধার। (૧ উপর দিয়েই যত ফাকি চালিয়ে দিয়ে মাহ্য আপন বুদ্ধিকে আপন মন্ত্যত্বকে বিদ্রপ করে ; আপন সাধনাকে দুৰ্ব্বল ও লঘু ক'রে দেয়। পুনশ্চ ব্যাখ্যা করবার সময় বলা হয়, যার অজ্ঞান তাদের পক্ষেই এই বিধি। কিন্তু যারা অজ্ঞান তাদের অজ্ঞানকে প্রশ্রয় দিয়ে চিরস্থায়ী করার দ্বারাই মুক্তির পন্থা সুগম করা হয় এ কথা মানতে পারিনে। চিরজীবন পাঠা বলি দিয়ে এবং বলির সংখ্য ভীষণভাবে বাড়িয়ে তোলার রক্তসিক্ত পথ দিয়ে কয়জন পূজক অবশেষে বাহিরের ঐ পাঠ থেকে অস্তরের পাপের ঠিকানায় পৌছেচে ? যারা জ্ঞানী তাদের ত কোনো ভাবনাই নেই, তার সকল ক্ষেত্রেই স্বতই ঠিক পথ বেয়ে চলে, ধার। অজ্ঞান তাদের মুগ্ধ করে রাখলে মোহের অন্ত তারা পাবে না। এই কারণেই এদেশে বহু যুগ থেকেই পুণ্যলুব্ধ মানুষ পাণ্ডার পায়ে মোহর ঢেলে আসচে, দেশের লোকের গভীর দুঃখ ঘেখানে সেখানকার জন্তে, ন৷ মন, ন৷ ধন, কিছুই রইল বাকি। এ সম্বন্ধে দোষ দেবার বেলা আমরা আর এক প্রতীক পাকুড়াও করেচি, সে হচ্চে ঐ বিদেশী। সন্দেহ নেই বিদেশীর হাত দিয়ে মার খেয়ে থাকি, কিন্তু সেই বিদেশীদের দিয়ে আমাদের আঘাত করাচ্চে কে ? আমাদের ভিতরকার সেই পাপ সেই কলি যে চিরদিন দেশের মামুকে নানাপ্রকারে বঞ্চিত ক’রে এসেচে–তার সপূর্ণ পরিচয় পাবার মত কৌতূহলও যার নেই। যেমারের জমি বহুকাল থেকে আমরা নিজের হাতে তৈরি করেচি সেইখানেই আজ বহুকাল ধরে বিদেশী মারের ফসল বুনে আসচে। আমাদের ধৰ্ম্মকে যদি সত্য করতে পারতুম, পূজার মধ্যে যথার্থ বীৰ্য, সেবার মধ্যে যথার্থ ত্যাগ থাকত, আমাদের সাধনা যদি যথার্থ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মাস্থ্যকে সম্পূর্ণ আত্মীয়তার সঙ্গে স্বীকার করতে পারত তাহলে কখনই দেশকে এত যুগ ধরে এত দৈন্ত এত অপমান সইতে হত না, দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্য্যন্ত এত দুভর অজ্ঞানের চাপে সমস্ত দেশের লোক এমন অসহায় ভাবে দৈবের দিকে তাকিয়ে মরত না ! তুমি মনে করে না, বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিগত মানুষ আমার সাধনার লক্ষ্য। চিরন্তন বিরাট মানবকে আমি ধ্যামের দ্বারা আমার মধ্যে গ্রহণ করবার চেষ্টা করি—নিজের ব্যক্তিগত মুখ দুঃখ ও স্বার্থকে ডুবিয়ে দিতে চাই তার মধ্যে, অনুভব করতে চাই, আমার মধ্যে সত্য যা-কিছু, জ্ঞানে প্রেমে কৰ্ম্মে, তার উৎস তিনি। সেই জ্ঞানে প্রেমে কৰ্ম্মে আমি আমার ছোট-আধিকৈ ছাড়িয়ে যাই, সেই ধিনি বড় আমি, মহান আত্মা, তার স্পর্শ পেয়ে ধন্ত হই, অমৃতকে উপলব্ধি করি। সেই উপলব্ধির ঘোগে আমার পূজা আমার সেবা সত্য হয় আত্মাভিমানের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয়। কৰ্ম্মই বন্ধন হয়ে ওঠে এই উপলব্ধির সঙ্গে ঘদি যুক্ত না হয়। যুরোপে এমন অনেক নাস্তিক আছেন ধারা বিশ্বমানবের উপলব্ধির দ্বারা তাদের কৰ্ম্মকে মহৎ ক'রে তোলেন,—তারা দূর কালের জন্য প্রাণপণ করেন, সৰ্ব্বদেশের জন্তে । তারা যথার্থ ভক্ত। যারা আচারে অনুষ্ঠানে সারাজীবন অত্যন্ত শুচি হয়ে কাটালেন ভাবরসে মগ্ন হয়ে রইলেন, তারা তো নিজেরই পূজা করলেন–র্তাদের শুচিত তাদেরই আপনার, তাদের রসসম্ভোগ নিজের মধ্যেই আবৰ্হিত, আর মুক্তি বলে যদি কিছু তারা পান তবে সেটা তো তাদেরই পারলৌকিক কোম্পানির কাগজ । ইতি ১২ আষাঢ়, ১৩৩৮