পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্রনাথ ও বৈষ্ণব কবিতা শ্ৰীনগেন্দ্রনাথ গুপ্ত রবীন্দ্রনাথ শৈশবকাল হইতেই কবিতা রচনা করিতে আরম্ভ করেন। সেকালে বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব কবিতার বিশেষ সমাদর ছিল না। চৈতন্তের যুগে ও তাহার পরে কিছুকাল পর্য্যন্ত বৈষ্ণব কবিতার যে কিরূপ অপ্রতিহত প্রভাব ছিল সে-কথা অধিকাংশ লোকে বিস্তৃত হইয়াছিল । এক বৈষ্ণব সম্প্রদায় ব্যতীত সাহিত্যে বা অন্ত সমাজে বৈষ্ণব কবিতার চচ্চর্ণ হইত না । বাঙালী কবিদের মধ্যে বিশেষ প্রতিষ্ঠা ছিল ভারতচন্দ্র রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের। কাশীরাম দাসের মহাভারত ও কৃত্তিবাসের রামায়ণ ঘরে ঘরে, দোকানে হাটে পঠিত হইত। বৈষ্ণব কবিতা শুনিতে পাওয়া যাইত কেবল সংকীৰ্ত্তনে, হরিবাসরে ও বৈষ্ণব সভায় । মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ও রামেশ্বর ভট্টাচার্য্যের কাব্য রচনায় বৈষ্ণব কবিদের প্রভাব লক্ষিত হয় না। জয়দেবের গীতগোবিন্দ সৰ্ব্বত্র পঠিত ও গীত হইত, কিন্তু র্তাহার রচনা সংস্কৃত ভাষায় এবং ভারতের সর্বত্র ব্যাপ্ত হইয়াছিল। গীতগোবিন্দ বাংলা সাহিত্যের অন্তর্গত নয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হইতে বাংলা সাহিত্যে আর এক যুগের আরম্ভ। ব্রজাঙ্গন৷ কাব্যে মধুসূদন রাধাকৃষ্ণ সম্বন্ধে গীতিকবিতা রচনা করিয়াছেন, কিন্তু তাহাতে বৈষ্ণব কবিতার কোন আভাস নাই। চতুর্দশপদী কবিতাবলীতে কাশীরাম দাস, কীৰ্ত্তিবাস কত্তিবাসের রূপান্তরিত নাম ), জয়দেব, কালিদাস ও ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের যশ কীৰ্ত্তন করিয়াছেন, কিন্তু জয়দেব ব্যতীত আর কোন বৈষ্ণব কবির নাম করেন নাই । বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যে শিক্ষানবিশি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কাছে ; প্রথম প্রথম তিনি ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রে কবিতা লিখিতেন। বৈষ্ণব কবিতা যে তিনি পড়িয়াছিলেন তাহ তাহার রচিত দুই চারিটি গান হইতে বুঝিতে পারা যায়। शाक्ने शाक्ने उल्ले भा? किष्ट्रि ििब्रष्ट्र रुइ cझण। কাহামােকো বলধারায়ণে। ইহা বৈষ্ণব কবিতার ব্রজবুলির অনুকরণ। বঙ্গদর্শনে বহুমুখী সাহিত্যের অবতারণা হয়। কাব্য ও সাহিত্য সমালোচনা বঙ্গদর্শনের একটি প্রধান অঙ্গ। বঙ্কিমচন্দ্রই সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ সমালোচক, তাহার তুল্য সমালোচক এ পর্য্যস্ত ংলা ভাষায় আর কেহ হয় নাই। কিন্তু তিনি অথবা বঙ্গদর্শনের আর কোন লেখক কোন বৈষ্ণব কবির রচনা সমালোচন করেন নাই। তথাপি বঙ্গদর্শনে একজন প্রধান বৈষ্ণব কবি সম্বন্ধে সংশয় নিরাকৃত হইয়াছিল। বিদ্যাপতিকে সকলে বঙ্গবাসী বলিয়া জানিত, কোন কোন পুস্তকে তাহার উপাধি ভট্টাচাৰ্য্য নিৰ্দ্ধারিত হইয়াছিল। রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় গ্রিয়াসনের সহায়তায় ও স্বতন্ত্র প্রমাণ দ্বারা সিদ্ধান্ত করেন যে, বিদ্যাপতি মিথিলাবাসী ও র্তাহার পদাবলী মৈথিল ভাষায় রচিত। যে-বয়সে রবীন্দ্রনাথ কবিতা লিখিতে আরম্ভ করেন সেকালে বটতলা ছাড়া বৈষ্ণব কবিতা আর কোথাও পাওয়৷ যাইত না । বটতলার ছাপা ভুলে ভরা, কিন্তু কেবল বটতলার প্রসাদে পদকল্পতরুর ন্যায় অমূল্য গ্রন্থ লুপ্ত হয় নাই। অক্ষয়চন্দ্র সরকার কর্তৃক সম্পাদিত প্রাচীন কাব্যসংগ্রহে চণ্ডীদাস, গোবিন্দদাস নামধারী সকল কবি ও বিদ্যাপতির রচনা প্রকাশিত হইয়াছিল, অপর কোন বৈষ্ণব কবির পদাবলী সন্নিবেশিত হয় নাই। বঙ্গদর্শনের যুগে লব্ধপ্রতিষ্ঠ কবিগণের মধ্যে কে মিল্টন, কে বায়রণ সেই কথার আলোচনা হইত। সমসাময়িক সকল শ্রেষ্ঠ বাঙালী কবির গ্রন্থাদি সমালোচিত হইত না। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরচিত স্বপ্নপ্রয়াণের ন্যায় অতুলনীয় গ্রন্থ বঙ্গদর্শনে সমালোচিত হইয়াছিল এরূপ স্মরণ হয় না। বিহারীলাল চক্ৰবৰ্ত্তীর কোন কবিতা কখনও বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হয় নাই, কেবল ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হইত। বৈষ্ণব কবিতার যে শুধু সমাদর ছিল না এমন নহে তাচ্ছিল্য ভাবও লক্ষিত হইত। একজন খ্যাতনাম কৰি,