পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শৃঙ্খল ঐসুধীরকুমার চৌধুরী & শরতের প্রভাত । মুদুমিল্ক বাতাসে রহিয়া রহিয়া শস্তসমূদ্ধ প্রান্তরের সৌরভ ভাসিয়া আসিতেছে ! বহু কণ্ঠের সমবেত গুঞ্জন । নিরামিষ রন্ধনশালার প্রশস্ত বারান্দায় এক ঝলক রোদ আসিয়া পড়িয়াছে, কিন্তু নীলাকাশের নিজস্ব যে নিৰ্ম্মল নীল আলো তাহ আজ কোনও দিকে কোনও বারণ মানিতেছে না । ভিতরে মুগডাল সিদ্ধ হইতেছে, থাকিয়া থাকিয় তাহার স্বগন্ধ পল্লীলক্ষ্মীর অদৃশ্ব অঞ্চল গন্ধের সঙ্গে মিশিতেছে। নিস্তার বড় বড় চারিটি ঝুড়ি হইতে তরকারী বাছিয়া নামাইতেছে। নিস্তার কৃশকায় গু:মাঙ্গী রূপসী । ক্ষেস্তি রূপসী নহে, চট্টল, তাহারও গায়ের বর্ণ খাম, সে পরিপূর্ণদেহা। বাছা তরকারীগুলিকে সে ভাগে ভাগে তিনটি বঁটির মুখে আগাইয় দিতেছে। বেগুন, পেঁপে, বাধাকপি, শসা, ডাটা, লাউ-ডগ, জলপাই –হালকা গভীর নানাস্তরের সবুজ, ফিকে এবং গাঢ় লাল, বেগুনী, হলদে, সাদা, নানারঙের কোট। তরকারী থাক থাক হইয়৷ ভাগে ভাগে জমিতেছে। বাবুদের জন্য এক ভাগ, কাছারীবাড়ির আমলাদের জন্য এক ভাগ, বি-চাকরদের জন্য এক ভাগ, তিন ভাগে রান্ন, ইহার উপর রাধাগোবিন্দজীর ভোগের এক ভাগ আছে। ভোর না হইতে সুরু হইয়াছে, এক প্রহর বেলা বহিয়া গেল, তবু বঁটি চলিতেছে, সঙ্গে সঙ্গে মুখও চলিতেছে। অন্যদিন ডাকঠাক করিয়া কথা চলে, উপস্থিত অনুপস্থিত পৃথিবীর প্রায় সমস্ত লোককে লইয়া সোৎসাহ আলোচন। আজ মুখ চলিতেছে, কিন্তু গলা তেমন করিয়া খলিফুে না। শনিবাঁধানে প্রকাও উঠান পার হইয়া তবে ভিতরের মহলের দেউড়ি, উপরের সমস্তগুলি জানালার সার্সি খড়খড়ি বন্ধ, তবু সকলেরই মুখেচোখে কেমন একটু সমস্ত ভাব ; এদিক ওদিক সচকিত চাওয়াচাওয়ি, ইসার-ইঙ্গিতের আদানপ্রদান চলিতেছে। বঁটি লইয়া যাহার বসিয়াছে, তাহদের মধ্যে মুক্তোর-পিসি সেকেলে মানুষ ; ক্ষেন্তি যখনই একটু বেসামাল হইবার উপক্রম করিতেছে, বৃদ্ধ তাহাকে চাপাগলায় শাসন করিয় থামাইয়া দিতেছে। তারপর ক্ষেস্তিরই কথার ধুয়া ধরিয় গলার স্বর যথাসম্ভব মৃদু করিয়া নিজেই বারবার বলিতেছে, “মূখে ঝাড় মারতে হয় বৈকি, মুড়ে বাট, মুড়ে কাট, পোড়া কপাল আবাণীর—” একরাশ তরকারির খোসা জমিয়াছিল। শ্রোত্রীদেরও ঔৎসুক্য অপেক্ষ উৎকণ্ঠ বাড়িয়া উঠিতেছে দেখিয়া, কালে কস্তাপাড় শাড়ীর অণচলটি কোমরে জড়াইতে জড়াইতে ক্ষেন্তি উঠিয়া পড়িল । খোসাগুলিকে স্তুপাকার করি চাপিয়া একটা বারকোসে উঠাইয় লইয়া সেটাকে বঁ হাতের তেলোয় চাপাইয় সে অন্দরের দীঘির ওপারে গোয়ালঘরের দিকে চলিল। খিড়কির কাছে একটা কুকুর খাবারের থালা মনে করিয়া ছুটিয়৷ আসিয়াছিল, সেটাকে লক্ষ্য করিয়া একটা লাথি ছড়িয় তারপর দরজা ঠেলিয়া বাহির হইয়া গেল । পশ্চিমের ঘাটে সরকারদের একটি বউ জল লইতে আসিয়াছে, ক্ষেন্তিকে দেখিয়া দু-হাত ঘোমটা টানিয়া দাড়াইল। এ-গ্রামে ক্ষেন্তির সম্মানিত স্থান প্রায় কত্রীঠাকুরাণীর পরেই। ক্ষেন্তি দাড়াইল না, বউটর দিকে একবার মাত্র চাহিয়া "এত বেলা করে জল-নিতে এসেছ কেন গ,” বলিতে বলিতে দীঘির কোণ পার হইয়া গেল। মূলতানী ও দো-আসল মন্থর রোমন্থনরত গুটি ছয়েক গাই আর ছটফটে তেজীয়ান দুইটি ষাড় ঘরের দুই দিকে দুই সার করিয়া বাধা । এক কোণে বঁাশের তৈয়ারী খোয়াড়ের মধ্যে ছোটবড় নানা রঙের কতকগুলি বাছুরের