পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ ভিড় । উদগ্রীব হইয়া সেগুলি বেড়ার উপর মাথা জাগাইয়া আছে। একটি খয়ের রঙের বাছুর বাহিরে ; বংশীধর এক হাতে তার গলার দড়ি শক্ত করিয়া চাপিয়া ধরিয়া বসিয়াছে এবং অপর হাতে গামছা নাড়িয়া ডাশ তাড়াইতেছে। দুই হাটুর মধ্যে বালতি চাপিয়া বসিয়া অপৰ্ব কালে চাদকপালে গাইটাকে দুহিতেছে। বাছুরট। মাঝে মাঝে আচমকা দড়ি ছাড়াইবার জন্য হুড়াহুড়ি বাধাইতেছে, বংশীধর নানা প্রকার আত্মীয়-সম্ভাষণে তাহাকে আপ্যায়িত করিতেছে, কখনও বা কিঞ্চিৎ উত্তমমধামের ব্যবস্থাও করিতেছে । গাইটা হুম্ হুম্ শব্দে আপত্তি জানাইতেছে । চাদকপালে গাইটাকে ক্ষেস্তি দু-চক্ষে দেখিতে পারিত না । এই গাইট দুধ দিত আর-সব গাই হইতে বেশী, কিন্তু ফাক পাইলেই তেঁতুল-তলার ছোট মাঠটি পার তুষ্টয়। ক্ষেন্তির বড় আদরের তরকারীর বাগানে গিয়া চুকিত, তারপর নির্দয়ভাবে লাউমাচ ভাঙিয়া, কপির চার ম"ইয়া, ডাটা-ক্ষেত নিম্মুল করিয়া রাখিয়া আসিত । তদুপরি ক্ষেস্তিকে সে ভয় ত করিতই না, দেপিতে পাইলেই উন্টিয়া শিঙ বাগাইয় গুতাইতে আসিত। তাই তরকারীর থোস, বাড়তি ভাত, ভাতের ফেন প্রভৃতি উপরি থাবারগুলি অন্ততঃ ক্ষেস্তির হাতে চাদকপালীর চাদকপালে বড় একট জুটত না । আজ বারকোস-সুদ্ধ সমস্তগুলি সুখাদ্য তাহারই উৎসুক মুখের সম্মুখে ধপ করিয়া নামাইয়। রাখিয়া ক্ষেস্তি বলিল, “শুনেছিস ?” বংশীধর বাছুরটাকে টানিয়া লইয়া একটু কাছে ঘেষিয়া আসিল, অপৰ্ব দুধ দোয়া না বন্ধ করিয়াই ঘাড় ফিরাইয়া বলিল, “শুনলাম ত, কিন্তু কি ব্যাপার বল দেখিনি ’ ক্ষেন্তি বলিল, “সে কি আর এককথায় বলা যায় ? রাধাগোবিন্দজীর মনে যে এও ছিল কে জানত ?” বংশীধর যে-হাতে গামছা নাড়িয়া ডাশ খেদাইতেছিল, সেই হাতে চট করিয়া একটা খালি বালতি উন্টাইয়। ক্ষেস্তির বসিবার ঠাই করিয়া দিল । আড়চোখে একবার বাহিরের দিকে দেখিয়া লইয়া ক্ষেত্তি কাপড়-চোপড় টানিয়া গুছাষ্টয়া বসিল । কিন্তু সবে সে কথা শুরু করিতে বাইবে এমন সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটিল। জাহারের সময় শৃঙ্খল Գ: ক্ষেন্তির এত নিকট সান্নিধ্যে চাদকপালে গাইটার সুস্থ বোধ না করিবার যথেষ্ট কারণ ত বিদ্যমান ছিলই, হঠাৎ ক্ষেস্তি অপৰ্ত্তের কানের কাছে মুখ লইয়া ঝু কিয়া বসিতেই সেটা মহা ভড়কাইয় ঘাড় নীচু করিয়া ক্ষেস্তিকে ঢু মারিতে গেল। বংশীধর ই৷ ই করিয়া উঠিয়া যেই ক্ষেস্তিকে আড়াল করিতে যাইবে তাহার অসতর্ক হাত হইতে ছাড় পাইয়। খয়ের রঙের বাছুরটা এক গোত্তায় অপর্কের দুই হাটুর মধ্য হইতে দুধের বালতিটাকে উণ্টইয়া দিল। দুধে প্রায় স্নান করিয়৷ অপৰ্ব উঠিয় দাড়াইল ; পাচ-ছাঁসের দুধ, এখনই কোথাও হইতে জোগাড় ন হইলে হয়ত রাধাগোবিন্দজীর ভোগ দেওয়াতেই বাধা ঘটিয়া যাইবে। খুব একটা হৈ চৈ বাধিয়া গেল। অপৰ্ত্ত বলিল, “বাছুর ত নয়, নরপিচেশ । দেব না কি শালকে এক ঘ} ?” বলিয়া লাথি মারিতে পা উঠাইয়া চট্‌ করিয়া পা নামাইয়া লইল । মনে পড়িল, বাছুর হইলেও সে গরুরই জাত, দেবী ভগবতীর অংশ, দেবতা । কহিল, “দেখেছিস্ কি দশ হয়েছে আমার কাপড়টার, এ্যাঃ ” ক্ষেস্তি কহিল, “দুধ যা নষ্ট করেছিস্ তাতে আমন দশ জোড়া কাপড় হয়, চুপ কর দেখি তুই ।” বকাবকি, চেচামেচি, পরস্পর পরম্পরকে দোষারোপ চলিতেছে, এমন সময় নিস্তার আসিয়া ক্ষেন্তিকে ডাক দিল । কহিল, “এতক্ষণ তোকে খুজতে পাইক-বরকন্দাজ বেরোল বোধ হয়। যা ওপরে, মা তোকে ডাকছেন।” খালি বারকোসট টান মারিয়া উঠাইয়া লইয়া শশব্যন্তে ক্ষেস্তি সেখান হইতে ছুটিয়া পলাইল। ভিতরের কাণ্ড দেখিয়া নিস্তার সেইখানে দাড়াইয়াই আর-এক পালা বকবকি সুরু করিয়া দিল । সরকার-বউ জল লইয়া কলসী-কাখে ফিরিয়া চলিয়াছিল । রৌদ্রপ্লাবিত বাধা-ঘাটের কাছে তারিণীখুড়ো হক নামাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “হ্যারে ক্ষেস্তি, সত্যি ?” ক্ষেত্তি না থামিয়াই বলিল, “দাড়াও বাপু, আমার এখন এত কথা বলবার সময় নেই। মা কি জন্তে ডাকছেন দেখি আগে, তারপর যদি নিরামিং বাড়িত্বে এলো ত সব শুনবে এখন" -- *