পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ শৃঙ্খল 4vම් আদায়-ওয়াশীল-বকেয়ী-বাকির কড়া পাহার কাটাইয় প্তাহার মস্তিষ্কে প্রবেশ লাভ করিল। সহসা সচকিত হইয়। চোখ হইতে নিকেলের চশমাটি খুলিতে খুলিতে কহিলেন, “কি ক্ষান্ত ?” ক্ষেন্তি বলিল, “রাণীমা কি বলতে চান, আপনি একবার অস্থিন ৷” দেওয়ানজী বিপুল দেহভার লইয়া ই ই করিয়া উঠিয়াপড়িলেন, ত্রস্তে চটিজুতায় পা ঢুকাইতে ঢুকাইতে কহিলেন, “আমি যাচ্ছি যাচ্ছি, তুমি তাকে বলগে যাও।” ভিতর-বারান্দার দিকের দরজার এপাশ হইতে দেওয়ানজা গলা থাকার দিলে ওপাশ হইতে পরিষ্কার কণ্ঠে শোনা গেল, “আমার যাবার ব্যবস্থা সব ঠিক হয়েছে ?” “ই মা, ব্যবস্থ সব করা হয়ে গিয়েছে। মাঝির কাল রাত্রেই রাণী-বজরা ধুয়ে মুছে ঠিক ক’রে রেখেছে, পালফুটে দু-একজায়গায় ছিড়ে গিয়েছিল, সারিয়ে নিতে বলেছি, এতক্ষণ হয়ে গিয়ে থাকবে ।” হেমবাল কহিলেন, “বজরায় গেলে কাল রাত্রের আগে নাসিরগঞ্জে পৌছন যাবে না। আমি ভোরের ষ্টীমার ধরতে চাই, জমিদারী চালের চাইতে তাড়াতাড়ির চালটা আমার এখন বেশী দরকার ।” দেওয়ানজী একলা ঘরেই ঘামিয়া উঠিলেন, কুষ্ঠিতস্বরে বলিলেন, “তাহলে কি করব মা ?” তীক্ষুকণ্ঠে উত্তর আসিল, “সেও কি আমায় ব’লে দিতে হবে ? ঘাসি, ডিঙি, যাহোক একটা হলেই হবে, দু-একটা মাল্লা বেশী নিতে বলবেন ।” “আচ্ছ, আমি এখুনি সব ব্যবস্থা করছি। খাওয়াদাওয়ার পরেই কি বেরবেন ?” - “ই, কিন্তু তার ত বেশী দেরী নেই ? আপনি নিজে তৈরী হয়ে নিয়েছেন ?” “আমি ত তৈরীই, কেবল এই সদর খাজনার বাকী হিসাবটা বাবুকে বুঝিয়ে—” “কলকাতা থেকে ফিরে এসে বোঝাবেন ।” দেওয়ানজী নীরবে নতমস্তকে তাহার বিরল কেশে অঙ্গুলিচালনা করিতে লাগিলেন। হেমবালা একটু পরে কহিলেন, “আমি উপরে যাচ্ছি, নৌকো এবং পালকির ব্যবস্থ হয়ে গেলেই আমাকে খবর পাঠাবেন ।” এতক্ষণ হেমবালা অপরদের তাড়া দিয়াছেন, এবার মনে পড়িল, তাহার নিজেরই যাবার জোগাড় বিশেষ-কিছু এখনও করা হইয় উঠে নাই । এ বাড়ি হইতে এককাপড়েই বাহির হইয়া যাইবেন, কাল সন্ধ্য অবধি তাহাই ঠিক ছিল। কিন্তু রাত্রির স্তব্ধতায় নিজের মনের সঙ্গে নূতন করিয়া তাহার বোঝাপড়া হইয়াছে। অনাবশ্যক রূঢ়ত-প্রকাশের দ্বারা নিজের দুর্বলতাই প্রমাণ করা হইবে । মূল্যবান কিছুই লইবেন না, কিন্তু তাহার সর্বদা ব্যবহারের যাহ-কিছু সামগ্রী তাহ৷ সঙ্গে লইতে কোনও দোষ নাই। তেইশ বৎসর আগে এ সংসারে যখন প্রবেশ করিয়াছিলেন তখন শূণ্ঠহাতে আসেন নাই ; তারপর এই দীর্ঘকাল ধরিয়া এই সংসারের কাছ হইতে গ্রাসাচ্ছাদন হিসাবে যাহা গ্রহণ করিয়াছেন, নিজের কৰ্ম্মনিষ্ঠায় কৰ্ম্মিষ্ঠতায় তাহার বহুগুণ মুল্য তিনি ফিরাইয়া দিয়াছেন ; আজ যখন স্বেচ্ছায় এই গৃহের আশ্রয় ত্যাগ করিয়া যাইবেন তখনই বা শূন্যহাতে তাহাকে কেন যাইতে হইবে ? লোক-জানাজানি যাহা হইবার তাহা হইবেই, কিন্তু কলিকাতায় তাহার দেবোপম ভ্রাতার নিকট হইতে কথাটা যতদিন গোপন রাখা যায় রাখিবার চেষ্টা তিনি করিবেন, এ-সঙ্কল্পও র্তাহার মনে ছিল। তাহার বয়স্থ কন্যা ঐন্দ্রিলা কলিকাতায় মামার কাছে থাকিয়া পড়াশোনা করে, মামী নাই, মেয়ের অভিভাবিকারূপে এখন কিছুদিন তাহারই সেখানে থাকা আবহাক, সেজন্যই তিনি আসিয়াছেন, কলিকাতায় ভাইকে এবং অন্যান্ত সকলকে ইহাই তিনি বুঝিতে দিবেন স্থির করিয়াছেন । দুরে ঠাকুরদালানের পাশে আমলকি গাছের নীচে খাস বৈঠকখানার বারান্দার কতকটা চোখে পড়িল । সবগুলি দরজা বন্ধ, মনে হইল সকাল হইতে বন্ধই আছে, চাকরবাকরদেরও কেহ সেদিক মাড়াইতেছে না। চকিতে চোখদুটাকে ফিরাইয়া লইয়া ক্ষিপ্রগতিতে শানবাধানো উঠানটা পার হইলেন। ঐজিলা কি