পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88. দৈহিক স্বাধীনতা লোপের ভয়, পরিবার ও আত্মীয়দের । বিরহ, এবং প্রাণনাশের ভয় । সে ভয়কেও তিনি জয় করিয়াছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিবার প্রচেষ্টা উপলক্ষ্যে তিনি বারবার জেলে গিয়াছিলেন, সাংঘাতিক প্রহারও সস্থা করিয়াছিলেন। ভারতবর্ষেও চম্পারনে এবং কায়রায় জেলে যাইবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা সত্ত্বেও নিজের সঙ্কল্পিত কাৰ্য্য সমাধা করিয়াছিলেন। অসহযোগ প্রচেষ্টা উপলক্ষ্যে র্তাহার কারাদণ্ড হইয়াছে। তিনি বরাবর প্রফুল্লচিত্তে ইহার জন্য প্রস্তুত ছিলেনৃ। তিনি ইংরেজ রাজত্ব সম্বন্ধে মনের কোন চিন্তা ও ভাবকে গোপন না করিয়া এমন বিস্তর প্রবন্ধ লিথিয়াছেন ও এমন বিস্তর বকৃত করিয়াছেন, যাহার জন্য র্তাহাকে চিরনিৰ্ব্বাসূন দণ্ডে বা প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করিবার ইচ্ছা ভারতসম্পত্তি ইংরেজ আমলাতন্ত্রের থাকিলে তাহার সমর্থক আইনের ধারার অভাব হইত না । এই প্রকার গুরুতম মণ্ডের জন্তও মহাত্মা গান্ধী সৰ্ব্বদা প্রস্তুত। জালিয়ানওয়াল বাগে ও অন্য অনেক জায়গায় কোন কোন সরকারী কৰ্ম্মচারী মহিষকে বেআইনীভাবে যেমন গুলি করিয়া মারিয়াছে, সে প্রকারে নিহত হইবার জন্যও মহাত্মা গান্ধী বরাবর প্রস্তুত ছিলেন ও এখনও আছেন। এই নিৰ্ভীকতা তাহার প্রভাবের একটি প্রধান কারণ। কিন্তু শুধু প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকিলেই মাহ্য কোটি কোটি লোকের হৃদয়ের উপর এরূপ রাজত্ব করিতে পারে না । গুণ্ডার অপরকে মারিতে গিয়া বা দাঙ্গা হাঙ্গামা করিতে গিয়া মরিতেও প্রস্তুত থাকে ; বেতনভোগী সৈনিকেরাও এইরূপ নিৰ্ভীকতা দেখায়। অথচ তাহারা কেহ অগণ্য মানবের হৃদয়ের রাজা হয় না । কিসের জন্য মানুষ প্রাণ দিতে প্রস্তুত, তাহার উপর তাহার প্রভাবের পরিমাণ, ব্যাপকতা, ও স্থায়িত্ব নির্ভর করে। গান্ধী স্বার্থের জন্ত, সাংসারিক মুখ ও খ্যাতির জন্ত, সাংসারিক ঐশ্বর্ঘ্যের জন্য, নিৰ্ভয়ে প্রাণপণ করেন নাই। দেশের ও জাতির দুঃখ দুৰ্গতি পরাধীনতা অপমান দূর করিবার জন্য প্রাণপণ করিয়াছেন। তাই তিনি অসংখ্য মহুষের বাধ্যতা ও পুজা পাইয়াছেন। যাহার কোন আদর্শের জন্য সৰ্ব্বস্বপণ, সৰ্ব্বমুখপণ, . প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২৯ [ ২২শ ভাগ্য:১ঈখ৫ മു~ചാ প্রাণপণ করেন, তাহাদের অন্তরে যে একটি গভীর বিশ্বাস থাকে, তাহা তাহাদিগকে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী করে । পৃথিবীর ইতিহাসে নানা দেশে নানা যুগে দেখা গিয়াছে, যে, মহাপ্রাণ লোকের ধর্শের জন্ত, জাতীয় স্বাধীনতার জন্ত, কিম্বা কোন মহৎ আদর্শের জয় কারারুদ্ধ হইয়াছেন, নির্বাসিত হইয়াছেন, কিম্বা নিহত হইয়াছেন । র্তাহার । জানিতেন, যে, তাঁহাদের ব্যক্তিগত দৈহিক স্বাধীনতা লুপ্ত হইতে পারে, তাহারা নির্বাসিত হইতে পারেন, তাহাদের প্রাণ পৰ্য্যন্ত যাইতে পারে ; তথাপি তাহারা নিজেদের সঙ্কল্প ত্যাগ করেন নাই । তাহারা এরূপ চিন্তা করেন নাই, যে, “আমরা কারাদণ্ড, নিৰ্ব্বাসন বা প্রাণদণ্ড দ্বারা আমাদের কার্য্যক্ষেত্র হইতে অপসারিত হইলে আমাদের কাজ কে করিবে ? অতএব যাহাতে কারাদগু, নিৰ্ব্বাসন, বা প্রাণনাশ না হয়, এইরূপ ভাবে কাজ করা যাক।” তাহার কারণ, তাহারা জানিতেন, মনুষ্যবিশেষ উপলক্ষ্য মাত্র ; বিশ্ববিধাত কেবল মাত্র একজন বা কতকগুলি মাহুষের দ্বারা নিজের কাজ করাইতে পারেন, তাহাদের অবর্তমানে তাহার কাজ অচল বা পণ্ড হয়, বা স্থগিত থাকে, এমন নয় ; তিনি জ্ঞাত বা অজ্ঞাতকুলশীল কত মাতুষের দ্বারা ও কল্প প্রাকৃতিক ঘটনার দ্বারা নিজ কাৰ্য্য সিদ্ধ করিতে পারেন, মানুষ তাহ জানে না।" এই হেতু জগতের মহৎ কৰ্ম্মীরা বিশ্বনিয়ন্ত, বিশ্বনিয়ম ও বিশ্বশক্তির উপর নির্ভর করিয়া নিরুদ্বেগে কাজ করিতে থাকেন। পরব্রহ্মে বিশ্বাসী নহেন এমন কোন কোন মহৎ কৰ্ম্মীও, জগতের গতি মঙ্গলের দিকে বলিয়া উপলব্ধি করিয়া, সত্যের, ন্যায়ের, ও মঙ্গলের জয়ে দৃঢ় বিশ্বাসের সহিত কাজ করিয়া গিয়াছেন। - - র্যাহাদের নির্ভীকতা, সৰ্ব্বস্বপণ, সৰ্ব্বস্থখপণ, ও প্রাণপণ বিশ্বের অচল মঙ্গল নিয়মে বিশ্বাস হইতে উদ্ভূত, বিশ্বশক্তিই উহাদের শক্তির উৎস । to মহাত্মা গান্ধীর প্রভাবের আর একটি কারণ, তিনি দুঃখী তাপী দরিত্রের আন্তরিক দরদী। ইহা মুখের কথার বক্তৃতার দরদ নয়, খবরের কাগজের বা বহির লেখার দরদ নয়। ইহা হৃদগত, জীবনগত দরদ। তিনি ছিলেন ধনী, কিন্তু খান, পরেন, গরীবের মত। শ্ৰীনিবাস শাস্ত্রী লিখিয়াছেন,