পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডলের সম্পাদিকার নিবেদন আজকার দিনে স্ত্রীশিক্ষ, আবশ্বক, এ কথা বলিবার আর কোন প্রয়োজন নাই। আমরা প্রতিদিনের জীবনে এই শিক্ষার অভাব এত অধিক অনুভব করিতেছি যে এই কৰ্ত্তব্য কত সত্বর স্বচারুরূপে ক্রমে অগ্রসর করিতে পারি তাহাই ভাবিবার বিষয়। দুর্ভিক্ষের দিনে মানুষ যাহা পায় তাহাই গলাধঃকরণ করে, তাহাতে সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রধান আবশ্বক প্রাণধারণ সম্ভবপর হয় ; কিন্তু দারুণ অভাবের দিন যখন অতীত তখন যেমন আহাৰ্য্য সম্বন্ধে আমরা সাবধান হই এখন শিক্ষা সম্বন্ধেও সেই সময় আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। অৰ্দ্ধ শতাব্দীরও উদ্ধকাল এদেশে পুরুষ-পরিচালিত স্ত্রীশিক্ষা চলিয়া আলিতেছে— ইহাতে আমাদের অনেক অভাব দূর হইলেও অনেক অভাবের দিকে তাহাদের দৃষ্টিমাত্র পতিত হয় নাই । র্তাহারা এ কাজ আরম্ভ করিয়াছিলেন আপন সুবিধার জন্য— আমরা এখন ইহা চাহিতেছি নিজস্ব শক্তির বিকাশের জন্য— স্ত্রী এবং পুরুষে যে বৈশিষ্ট্য বিধিদত্ত, তাহ রক্ষা না করিলে তাঙ্গ অশিক্ষা ন হইলেও কুশিক্ষায় পরিণত হয় । কাজেই শিক্ষা যেভাবে আরম্ভ হইয়াছিল, এখন আর সে ভাবে চালানো চলিবে না ; পরীক্ষা পাস করিয়া যে বিদ্যালাভ হয় তাহাতে আমাদের অভাব পুরে না, অনেক শিখিবার বিষয় পরে শিখিতে হয়, তাহাতে জীবনের সামঞ্জস্য হয় না । স্ত্রীশিক্ষা ও শিশুশিক্ষার ভার মাতৃজাতিকেই লইতে হইবে। এই অভাব পূরণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা ও অন্তঃপুর-শিক্ষার ভার গ্রহণ করিতে হইবে আমাদিগকেই । আজ দ্বাদশ বর্ষ ধরিয়া ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডল এই ভার গ্রহণ করিয়া দেশের সহায়তায় অগ্রসর হইয়াছে। অনেক ত্রুটিপূর্ণ ও বই অভাবগ্রক্স হইলে৭ এই কাজটির একমাত্র গৌরব—ইহা সম্পূর্ণ নারীশক্তিপরিচালিত। ইহার বিস্তার এবং শিক্ষা সম্বন্ধে সাধারণের আগ্রহ দেখিয়া আশা হইতেছে শু্যামলা বঙ্গভূমির বুকে এই যে ক্ষুদ্র বীজটি রোপিত হইয়াছিল, আজও যাহা অঙ্কুরের ন্যায় ক্ষীণ দুৰ্ব্বল e' স্বকুমারু তাহ একদিন মহীরুহে পরিণত হইয়া ছ মহিলা-মজলিস্—ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডলের সম্পাদিকার নিবেদন ২৬৯ আশ্রয়, ফুল-ফলদানে দেশকে নন্দিত করিতে পারিবে। আজ আমি ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডলের সেবিকারূপে আপনাদের সকলের সাহায্য ও সহানুভূতি ভিক্ষা করিতেছি। মনে নিশ্চিন্তু আশা পোষণ করি যে - কখনই বঞ্চিত হইব না। বর্তমানে ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডলের অধীনে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হইতেছে। পূৰ্ব্বে দুইটি ছিল, গত বৎসর চৈত্রের প্রথমে মির্জাপুর ষ্ট্রীটে একটি নূতন শাখা-বিদ্যালয় স্থাপিত হইয়াছে। প্রথম দিনে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫টি, এখন অনূ্যন ৫০টি। শিয়ালদহ কৃষ্ণভাবিনী বিদ্যালয়ের ছাত্ৰঞ্জীর সংখ্যা ডিসেম্বর মাসে ৭০টি এবং বহুবাজার কৃষ্ণভাবিনী বিদ্যালয়ে গত বংসরের শেষে ছিল ৬৫টি। মির্জাপুর স্কুলে দুইজন এবং শিয়ালদহ ও বহুবাজার বিদ্যালয়ে তিনজন করিয়া শিক্ষয়িত্ৰী নিযুক্ত আছেন। ভবানীপুরে অন্তঃপুর-শিক্ষ-বিভাগে ৭জন ও কলিকাতা অন্ত:পরশিক্ষা-বিভাগে ৫জন শিক্ষয়িত্ৰী শিক্ষা কাৰ্য্য পরিচালনা করেন। ভবানীপুরের অন্তঃপুর-ছাত্রীর সংখ্যা ৪০ আর কলিকাত অন্তঃপুর-বিভাগের ছাত্রী-সংখ্যা ৪৫টি। বংসরে দুইবার করিয়া স্কুলে ও অন্তঃপুরে পরীক্ষা করা হয এবং যোগ্যতা অনুসারে পারিতোষিক ও পদক প্রভৃতি দিয়া ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠের উৎসাহ বাড়াইবার চেষ্টা করা হয় এবং এক শ্রেণী হইতে অন্য শ্রেণীতে উন্নীত করিয়া পুস্তক পরিবর্তন করা হয়। তিনটি স্কুল ও দুইটি অন্তঃপুর-শিক্ষা-বিভাগ ব্যতীত ভারত-স্ত্রী-মহামগুলের নিজস্ব একটি শিক্ষয়িত্রী-ভবন আছে । ভtহার ব্যয় কতক ব্যাঙ্কস্থিত টাকার স্বদ হটতে ও কতক ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডলের আয় হইতে পূরণ করা হয়। সকলপ্রকার ব্যয়, বিশেষতঃ গাড়ীভাড়ার ব্যয় এত অধিক হইয়া পড়িতেছে যে কোনরূপ ব্যয়সঙ্কোচ না করিলে সমিতির বিশেষ কাৰ্য্যহানির সম্ভাবনা। তাই সাধারণের নিকট এই আশ্রম রক্ষা করিবার নিমিত্ত সাহায্য প্রার্থনা করি—যিনি যাহা দান করিবেন শ্রদ্ধার সহিত গৃহীত হইবে। 27) ঐপ্রিয়ম্বদা দেবী