পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] উচ্চতর ও উচ্চ রাজপদগুলি দখল করিয়া আছেন, র্তাহারা কি, ভারতবর্ষে যেমন তরূপ, অধিকাংশই ইংরেজ না কানাডার অধিবাসী । অষ্ট্ৰেলিয়াতে ঐসকল কৰ্ম্মচারী কি অধিকসংখ্যক অষ্ট্রেলিয়ান না ইংলণ্ডনিবাসী ? নিউজীলগুেই বার্তাহাদের কোন দল সংখ্যায় বেশী ? আমরা যতটা জানি, তাহারা প্রায় সকলেই কানাডিয়ান, অষ্ট্রেলিয়ান এবং নিউজিল্যাণ্ডার। স্বতরাং আমরা যদি ইউরোপীয়ের পরিবর্তে ভারতবাসীকে রাজকাৰ্য্যে নিযুক্ত কবিতে চাই, তাহা হইলে কেন যে তাহা আমাদের পক্ষে অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে, তাহা বুঝিতে পারিলাম না। উপনিবেশবাণীগণ ইউরোপীয়বংশোদ্ভূত মানুষ। তবুও তাহারা ইউরোপ হইতে মানুষ আমদানি করিয়া আপনাদের শাসন কাজ চালায় না। ইহাতে তাহারা অপরাধ করিতেছে বলিয়৷ কেহ মনে করে না। কিন্তু আমরা ইউরোপীয়বংশোদ্ভূত নই ; অথচ আমরা যদি ইউরোপ হইতে শাসক আমদানি না করিয়া আপনাদের কাজ আপনারাই করিতে চাই, তাহা হইলে সেটা এমন গুরুতর অপরাধ হইয় দাড়ায় কেন ? আমাদের ইচ্ছাটাই ত অধিকতর স্বাভাবিক । স্বাধীনতালাভপ্রয়াসী ভারতবাসীদের বিরুদ্ধে লর্ড লিটনের দ্বিতীয় অভিযোগ এই, যে, তাহারা কে কত কাজের লোক তাহ না দেখিয়া এবং সেই বিচার অনুসারে কৰ্ম্মী নিয়োগ না করিয়া কে কোন জাতির লোক তাহাই বেশী করিয়া দেখেন ও তদনুসারে কৰ্ম্মী নিযুক্ত করিতে চান। ইহা সত্য কথা নয়। ভারতবর্ষে ইংরেজের স্বয়ং এই দোষে দোষী। উপযুক্ত ভারতীয় থাকিতেও ইংরেজ রাজকাৰ্য্যে ইংরেজ নিযুক্ত করে। এই দোষটা আমাদের ঘাড়ে চাপাইয়া লর্ড লিটন উন্ট চাপ দিতে চাহিয়াছেন । - কোন ভারতবাসীই তিনি নরম বা চরম যে পন্থী হোন, ইহা ইচ্ছা করিতে পারেন না, যে, শাসনযন্ত্র কাজের অধোগ্য হোক। আমরা সকলেই চাই, যে, বৰ্ত্তমানে ইংরেজের হাতে শাসনযন্ত্র যেমন আছে, উহা তাহার চেয়ে কাৰ্যকর হয়। আমরা বিশ্বাস করি, যে, ক্রমে ক্রমে উহাকে ইংরেজপ্রবর্তিত শাসনযন্ত্র অপেক্ষা বিবিধ প্রসঙ্গ—স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বৃহৎ ব্রিটিশ লাঠির যুক্তি ఫిసెఇ শ্ৰেষ্ঠ করা যায়, যদিও প্রথম প্রথম কিছু , অধোগ্যতা প্রকাশ পাইতে পারে। ভারতবর্ষে ইংরেজের শাসনদক্ষতার ইংরেজরুত প্রশংসা অত্যন্ত অত্যুক্তিপূর্ণ। কিন্তু উহার যথার্থ মূল্য যতখানি, তাহারও লাঘব করিতে আমরা চাই না। ইংরেজ শৃঙ্খলা স্থাপন করিয়াছেন, সমগ্র দেশকে এক শাসনস্থত্রে গ্রথিত করিয়াছেন এবং ভারতবাসীদের মধ্যে সমান স্কায়বিচার করার দিকে লক্ষ্য রাখিয়াছেন, এ কথা স্বীকার করি। কিন্তু দেশের মুখত শোচনীয়, কৃষি ব্যবসা ও পণ্যদ্রব্য-উৎপাদন বিষয়ে উহা অনেক পিছনে পড়িয়া আছে। ভারতবর্ষ দরিদ্র, অস্বাস্থ্যের আলয়, মারীপীড়িত এবং পাশববলের ও বিভীষিকার দ্বারা শাসিত। একশত পঞ্চাশ বৎসর ধরিয়া ইংরেজ এদেশে রাজত্ব করিয়াছেন। এখনও দেশের এই অবস্থা। ইহাকে কি শাসনদক্ষতা বলে ? কিন্তু লর্ড লিটনের অভিযোগ যদি আমরা সত্য বলিয়া মানিয়াই লই, তাহাতেই বা প্রমাণ হয় কি ? ইয়োরোপের রাষ্ট্রীয় কৰ্ম্মীরা কি সকল স্বাধীন দেশে সমান সুযোগ্য ? নিশ্চয়ই নয়। ইংরেজরা দাবী করেন, যে, তাহারাই সৰ্ব্বাপেক্ষ উংকৃষ্ট শাসনকৰ্ত্ত, জাৰ্ম্মানরা বলেন কাজের শৃঙ্খলা ও বন্দোবস্ত খাড়া করিয়া তুলিতে তাহারা সবচেয়ে ওস্তাদ। কিন্তু অন্যান্ত স্বাধীন ইউরোপীয় দেশ যে আপন আপন অপেক্ষাকৃত অযোগ্য রাষ্ট্রীয় কৰ্ম্মী লইয়াই সন্তুষ্ট আছে, অতি উৎক্লষ্ট ইংরেজ শাসক দ্বারা শাসিত হইতে আকাঙ্ক্ষা মাত্রও করিতেছে ন, ইহাতে ত ইংরেজ কোনই অপরাধ গ্রহণ করেন না ? কোন শাসনযন্ত্র ও প্রণালী যে কতখানি যোগ্য, তাহার পরখ করিবার উপায়টা কি ? যে শাসনের অধীনে দেশের সকল লোক শিক্ষা পায়, কুসংস্কারমুক্ত হয়, ভাল থাইতে পরিতে ও ভাল থাকিতে পায়, সুস্থ সবল হয়, এবং সাহসী, স্বাধীন ও আত্মশাসনক্ষম হয়, তাহাকেই স্থযোগ্য শাসন বলা চলে। উপরোক্ত অাদর্শ অনুসারে বিচার করিলে, ভারতবর্ষে ইংরেজের শাসনকে স্বশাসন বলা চলে কি ? লর্ড লিটনের সমস্ত যুক্তিগুলিই এইরূপ পক্ষপাত-দোষ