পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারিনি, আজ তোর পায়ে হাত দিয়ে বলছি না দিলে আমার পর্বনাশ হয়ে যাবে!” ইন্দিরা সপাহতের মত চম্কে সরে গিয়ে বললে, "দাদা, এ তুমি কি করলে ?” অনুপম বললে, “তুই যে পাষাণী, মানুষের কথায় ত তোর মন কোনোদিন গলবে না, তাই অমন কাজটা জামায় করতে হল। আমার কথা রাখ, তোর পাপ কেটে যাবে।” ইন্দির বললে, “কার টাকা তুমি চাইছ জান ? একি সত্যি আমার যে তোমায় দেব! তুমি কি জান না যে আমি শুধু বড়মানুষের ঘর-সাজানো একটা আসবাব ?” অনুপম বললে, “স্বামীর ধনে স্ত্রীলোকের চিরকালের অধিকার ; তার উপর এ ত তোর নিজের নামেরই টাকা ।” ইন্দিরা বললে, “কিন্তু স্ত্রীর ভায়েরও কি তাতে অধিকার আছে ? তোমায় পরের টাকার পাপে আমি কেন ডোবাতে যাব ? আমার বাপের নামে কালি দিতে আমি তোমায় সাহায্য করতে পারব না।” কিছুক্ষণের জন্য অনুপমের বাক্যস্রোতে বাধা পড়ে গেল। তার যুক্তির এমন উত্তর সে মোটেই আশা করেনি। কিছুক্ষণ মাটির দিকে চেয়ে সে চুপ করে দাড়িয়ে রইল, কি একটা কথা বার বার তার ঠোঁটের আগায় এসে যেন ফিরে ফিরে যাচ্ছিল । অনেকক্ষণ ইতস্তত করে অনুপম বললে, “কিন্তু ইন্দির, জগতে কি ওই একটি মানুষের নামই কেবল তুমি নিষ্কলঙ্ক দেখতে চাও ? ওর বাড়া কি তোমার আর কেউ নেই ?” কি একটা ভয়ে ইন্দিরার মুখখানা ফ্যাকাশে হয়ে গেল ; সে বললে, “দাদা তুমি কি বল্ছ, আমি কিছু বুঝতে পারছি না।” অনুপম ইন্দিরার কানে কানে কয়েকটা কথা বললে । তারপর নীরবে তারা কতক্ষণ চুপ করে বসে রইল। নিন্তব্ধতায় দুজনের নিশ্বাসের শব্দ দুজনে শুনতে পাচ্ছিল। ইন্দিরার স্বন্দর মুখখান শ্বেতপাথরের মত শাদা হয়ে গিয়েছিল, তাতে রক্তের লেশমাত্র দেখা যাচ্ছিল না। অনেকক্ষণ পরে মুখ তুলে সে বললে, “এখন যাও, কাল যা করবার তা আমি করব।” প্রবালী—আষাঢ়, ১৩২৯ [ ૨રમ છોજ, >મ શહ অনুপম বললে, “কিন্তু ইন্দির, আমাকে—” ইন্দির দরজার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললে, “বলছি আমি ব্যবস্থা করব, তুমি এখনি যাও, নইলে চেচামেচি লাগিয়ে দেব ।” উঠে দাড়িয়ে ভীতমুখে অনুপম বললে, ‘ইন্দির, আমি যে তোর জন্তে এত করলাম আমার একটা কথা—” ইন্দির দরজার দিকে এগিয়ে দাড়িয়ে বললে, “আমি ডাকৃছি দরোয়ানকে ৷” - ভিক্ষাভর চোখদুটি ইন্দিরার মুখের উপর রেখে অনুপম দরজার দিকে অগ্রসর হতে লাগল। ইন্দিরার চোখ জলে ভরে আসছিল, সে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইল। সত্যি, যে তার জন্যে অত করল, তার একটা ভিক্ষা শোনবারও তার ক্ষমতা নেই। ভগবান, কেন তাকে ভিক্ষার উদ্ধে করলে না। ভাইকে উপহার সে দিতে পাৰ্বত, কিন্তু ভিক্ষ কেমন করে দেবে ? - সে রাত্রে কিশোরীমোহনের সঙ্গে ইন্দিরীর কোন কথা হয়নি। পরদিন সকালবেল কিশোরীমোহন যখন বিছানা ছেড়ে মোটে ওঠেন-নি তখনই বিকে ডেকে ইন্দিরা বললে, “খাজাঞ্চি মশায়কে একবার ভিতরে ডাক ৷” ঝি অবাক হয়ে বধূঠাকুরাণীর মুখের দিকে চাইলে। ইন্দিরা তাকে কোনো প্রশ্ন করবার অবসর না দিয়ে বললে, “যাও, এখুনি সোজা গিয়ে তাকে ডেকে আন, পথে দাড়াবে না, তাকে ও দাড়াতে দেবে না।” - বৃদ্ধ থাজাঞ্চি-মহাশয়ের সঙ্গে বাড়ীর সব মেয়েই কথা বলত। ইন্দিরার ডাকে বিস্মিত হয়ে এসে তিনি চিকের বাইরে দাড়ালেন। ঝি বললে, “কি বলতে হবে বল বউমা ।” ইন্দিরা বললে, “আমার মুখ আছে আমিও কথা কইতে জানি, তুই যা নীচ থেকে আমার পানের বাটা দুটো মেজে আন।” ঝি চলে গেল। ইন্দিরা বললে, “খাজাঞ্চি-মশায়, আমার নামে কত টাকা জমা আছে, বলতে পারেন কি ?” থাজাঞ্চি বললে, “হ্যা মা পারি, পঞ্চাশ হাজার আছে ।” 1.