পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ইন্দিরা বললে, “সে সব টাকাই কি আমার ? আমি ইচ্ছা করলেই কি খরচ করতে পারি ?” খাজাঞ্চি বললে, “ম আপনি মালিক, ভৃত্যকে লজ্জা দিচ্ছেন কেন ? আপনি আজ্ঞা করুন, আমি কড়া-ক্ৰান্তি সব আপনার পায়ে ঢেলে দিয়ে যাচ্ছি ?” ইন্দিরা বললে, “আমার, এখুনি পচিশ হাজার টাকা চাই ।” খাজাঞ্চি স্বপ্নেও মনে করেনি যে ইন্দির এক কথায় অকস্মাৎ অতগুলো টাকা চেয়ে বসবে। সে বললে, “একবার বাবুকে বলে দেখলে—” ইন্দিরা ব্যস্ত হয়ে বললে, “না, ন, বাবুকে বলবার এখন সময় দেই। টাকা আমার এখনি চাই, তার পর যাকে বলবার পরে বললেই হবে।” খাজাঞ্চিকে অগত্যা যথাসম্ভব শীঘ্র টাকার ব্যবস্থা করতে হল । আঁচলে টাকা, নোট, মোহরের পুট্‌লি বেঁধে ইঞ্জির ঘরে ঢুক্ল । কিশোরীমোহন তখনও বিছানায় শুয়ে। ইন্দির তাকে ডেকে তুলে বললে, “কতকগুলো টাকা এক জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে।” কিশোরীর সঙ্গে কথা বলতে তার কণ্ঠে যে মাধুৰ্য্য ঝরে পড়ত, তার উৎস যেন আজ শুকিয়ে গিয়েছিল। বালিশের মধ্যে মুখটা গুজেই কিশোরী বললে,“কোথায়?” ইন্দিরা কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে রইল, তারপর শুষ্ককণ্ঠে বললে, “কাল রাত্রে দাদা আমার কাছে পচিশ হাজার টাকা চাইতে এসেছিল, সেই টাকা তোমায় দিচ্ছি।” কিশোরী কোনো উত্তর দেবার আগেই ইন্দিরা আবার বললে, “কাকে দিতে হবে দাদার কাছে জেনে নিও।” কিশোরী তখনও চোখ বুজে উপুড় হয়ে শুয়েছিল। সে কেবল বললে, “আচ্ছা” । টাকার পুট্‌লিটা তার মাথার কাছে রেখে দিয়ে ইন্দিরা বাইরে বেরিয়ে গেল। কিশোরী কথা বলবার জন্য কোনো ব্যস্ততা না দেখালেও ইন্দির যেন তার প্রশ্নের ভয়েই ক্ৰত পলায়ন করল । রোজকার মত স্ত্রীকে কিছু না বলেই আজও কিশোরীযেহন যথাসময় দেশের কাজে বেরিয়ে গেল' এ দিকে ক্ষ থেকে উঠেই বড়বাৰু যথাকলে পঁচিশ হাজার টাকার মানের দায় 8 e6: কথা শুনলেন ; তারপর শুনলেন গৃহিণী, তারপর শুনলেন সরযু, তারপর যমুনা সরস্বতী মানদ ক্ষেমদ, ইত্যাদি ইত্যাদি । বাবুদের বাড়ীর কাক-পক্ষীও সে-কথা নিয়ে আলোচনা স্বরু করল। মনটা ইন্দিরার আজ ভাল ছিল না । কিন্তু মন ভাল নেই বলে ত আর চন্দ্র-সূর্য্যের কাজে অবহেলা করা চলে না। নীহাটির বাবুরাও এ বিষয়ে চন্দ্র-সুৰ্য্যের গোত্রভুক্ত। মৃত্যুর পরোয়ানা দরজায় এসে দাড়ালেও সে বাড়ীর লোকের চুলের সিথি কাটতে কি সর ময়দা বেশমের প্রসাধন করতে কোনো ভুলচুক হয় না। ইন্দিরা যখন সকালবেলার সাজসজ্জার পর যথারীতি দ্বিপ্রহরের সজ্জার আয়োজনে ব্যস্ত তখন তার ঘরে আত্মীয়া কুটুম্বিনীর মিছিল করে এসে উপস্থিত হলেন। গৃহিণী বধুর ঘরে বড় যেতেন না, তিনি শাশুড়ী, বধুর কিছু দরকার থাকলে ত সেই তার কাছে আসবে, এই ছিল তার নিয়ম। সুতরাং আজ তাকে দূত পাঠিয়ে ঘরেই থাকৃতে হল। ঘরে ঢুকেই সৰ্ব্বাগ্রে সরযু বললে, “বোঁ আমাদের একেবারে নিৰ্ব্বিকার পরমহংস, অতগুলো টাকা যে গেল ত গ্রাহাই নেই, কেমন আপন মনে সাজসজ্জা হচ্ছে।” অবশ্ব সরযুর নিজের সাজসজ্জার যে কোন ক্রটি হয়েছিল তা নয় । ইন্দির চুপ করে আলন থেকে গিলে দিয়ে ক্টোচান শান্তিপুরে শাড়ীট তুলে খাটের বাজুর উপর রাখলে। তারপর রূপার খড়কে দিয়ে গন্ধ তৈলের সঙ্গে সিদূর গুলতে স্বরু করল। কথার উত্তর না পাওয়াতে সরযু অত্যন্ত চটেছিল। সে বললে, “ই বউ, তুমি না-হয় বড়মানুষ আছ, তা আমরা গরীব হলেও ত ঘরের লোক ; অতগুলো টাকা দিয়ে কোন কাঙ্গালের পেট ভরালে তা জানতেও কি আমাদের অপরাধ হবে ?” অপমানে ইন্দিরার মুখ-চোখ লাল হয়ে উঠল। সে তবু বললে, “আমার টাকা আমার যাকে খুনী তাকে দিয়েছি, সভা ডেকে তার কৈফিয়ং দেবার ত আমার কথা নয় ।" যক্ষা বললে, “ইল, বৌদির যে আজ বড় তেজ !"