পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] লোকাধিক্য ও চাহিদার অভাবও ইহার হেতু না হয়, তবে তা কি ? কোন সে দানব জামাদের সাধারণকে পীড়িত করিয়া এমনি প্রচ্ছন্ন হইয়া আছে যে তাহাকে সহজে ধরিতেও জানি না ? আমার মনে হয় এই ছদ্মবেশী দানব struggle for existence—oxo-ostin I Csis footto ox! নামান্তর মাত্র । জীবনসংগ্রামে যোগ্যতমের জয় হইয়া থাকে। যোগ্যতমের জয়ই যে চরম লাভ তাহা আমরা জানিতাম না, আর এই জয়ই যে শেষ পৰ্য্যন্ত জয় তাহাও আমাদের প্রাচ্য সভ্যতা বলে না। বিলাতী সভ্যতার শক্তির মদ যখন আমাদের মস্তিষ্ক ঘোলাইয়া দিয়াছে, সেই সময় হইতে এই নৃশংস মন্ত্রগুলি এদেশে উচ্চারিত হইতে আরম্ভ হইয়াছে । এই কথাগুলিতে আমরা এতই অভ্যস্ত হইয়া পড়িয়াছি যে উহার কদৰ্য্যতা অতুভব করার মত শক্তিও অ'মাদের নাই। যখন এই ধরণের চলিত কথা লোকের মনকে পরুষ করিয়া হীন করিতে থাকে, তখন তাহার প্রতিবাদও অসহনীয় হয় । শক্তিবাদী বলিবেন struggle for existence জীবনসংগ্রাম বৈজ্ঞানিক সত্যবাদ। গাছের নীচে যদি ২৫টা চারা হয়, তবে দুই চারিটি জোরাল চার বাকী গুলিকে আবছায়ার আওতায় ফেলিয়া অপুষ্ট করিয়া স্বচ্ছন্দে বড় হয়। তারপর মাইক্রোস্কোপে এক বিন্দু জলকণার মধ্যে দেখা যায় কত শত সহস্র প্রাণী একে অন্তকে ঠেলিয়া মারিয়া নিজে বাচিতে চেষ্টা করিতেছে। যাহারা যোগ্যতম তাহারাই বাচিতেছে, বাকীগুলি মরিতেছে । এ ক্ষেত্রে জীবনসংগ্রামে যোগ্যতমের জয় একবারে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ হইতেছে। ইহার উপর আর যুক্তিপ্রয়োগ অসম্ভব। কিন্তু একটু তলাইয়া দেখিলেই এই বড় বড় বিলাতী বৈজ্ঞানিকবাদের নৃশংসতা ধরা পড়ে। শক্তিবাদী বলিবেন মজুর দশ আনায় পাই বলিয়াই রোজ দশ আনা দিয়া থাকি, তাহীতে যদি তাহার পরিবারস্থ লোক খাইতে না পায় তবে সে ভাবনা নিষোক্তার নহে । মজুরের যদি সাধ্য থাকে তবে বেণী পর্দা করিয়া লউক—যদি আদায় করিতে পারে ভাল কিন্তু নিযোক্ত ৱিধিমত বাধা দিবে, আর ভোগের অনাচার 8ꬃፋ যদি চেষ্টা করিয়া দলবদ্ধ হইয়াও আদায় করিতে না পারে তবে নিযোক্তা এবং শক্তিমন্ত্রে দক্ষিত নিযোক্তার সমাজ পরাজিত শত্রুর সাজা দিবে। কিন্তু খাস বিলাতেও ইহার কদৰ্য্যতা ও অমাহুষিকতা উপলব্ধ হইতে আরম্ভ হইয়াছে। মানুষ ত আর গাছপালা ৰ৷ জলবিন্দুস্থ সহস্র প্রাণীর একটি নয়। মানুষের বুদ্ধি আছে, বিবেক আছে, সমাজ আছে, মাতুষ বলিবে বাচাও, দশজনকে বাচিতে দাও । মানুষ বলিবে অহিংসা পরমধৰ্ম্ম । মানুষ বলিবে সমাজ প্রেমের উপর প্রতিষ্ঠিত । যদি তাহাই না হয় তবে সন্তান পালনের বিড়ম্বনা লই কেন ? মংস্তের মত, বিড়ালের মত, সরীসৃপের মত আত্মজকে হত্য করি না কেন ? অসহায় শিশু ত যোগ্যতমের বিপরীত। আর যত জীব আছে তাদের তুলনায় মহিষের শিশু ত সৰ্ব্বাপেক্ষা অসঙ্গায়। এমন বংসরের পর বৎসর ধরিয়া আগুনে সেকিয়া কাপড়ে ঢাকিয়া কাহাকেও বড় করিতে হয় না। এমন অসহায় জীবকে মারিয়া না ফেলিয়া বঁাচাইয়া রাথিবীর জন্য চেষ্টা কোথায় হইতে আসিতেছে ? ইহার কারণ মাহুষের সমাজ বিলাতী নৃশংসবাদ অপেক্ষা অনেক পুরাতন। যে প্রেম সন্তানে প্রকাশ হয় তাহাই দশে বিতরণের জন্য মান্সবের অন্তরাত্মা চিরকাল আকাঙ্ক্ষণ করিয়া আসিতেছে । তাহাকে বিলাতী নৃশংসতায় আচ্ছন্ন করিতে পারে না । সামাজিক জীবনে এই নৃশংসবাদ আমাদিগকে কেমন কঠিন করিয়াছে তাহা যদিও সৰ্ব্বত্র অন্তভূত হইতেছে এবং উহাই স্বাভাবিক বলিয়া মানিয়া লইয়াছি, তথাপি দুই এক জায়গায় নিতান্ত নিদ্রিত সমাজের নিকটেই উগ বিসদৃশ বলিয়া ধরা পড়ে। যুদ্ধের সময় কাচ পাটের রপ্তানি বন্ধ হয়। চট্‌ বা থলে বিক্রয়ের অনুমতি সৰ্বকার দিয়াছিলেন । যুদ্ধের জন্য পাটের বস্তার চাহিদা খুব বাড়িয়া গিয়াছিল, তা ছাড়া সাধারণ ব্যবহারের জন্যও পাটের বস্তা ভারতবর্ষ হইতে মিত্রশক্তির জন্য যোগান হয় । যুদ্ধের মাল যোগাইয়া কিছু লাভ করার কথা । কিন্তু এই ব্যাপারে বাংলাদেশের চাষীদের সৰ্ব্বনাশ হইয়া .গেল । তাহার দারিদ্র্য ও তঞ্জনিত অনাহারে কদাহারে রোগগ্ৰস্ত হইয়া দলে দলে মরিতে লাগিল। . পাটের