পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] পল্পীজীবন অনুসন্ধান করিলে কোন না কোন প্রকারে এই অবস্থা বিদ্যমান দেখা যাইবে। যাহারা সাক্ষাৎ দাসত্ব করে তাহারা ছাড়া যাহারা বাকী রৰিল তাহার সকলেই পরোক্ষভাবে উৰ্দ্ধতন শতকরা দশজনের সমাজের দাসত্ব করিতেছে। বাহিক আবরণ ঠিক আছে বলিয়া . এবং কোনও ব্যক্তিবিশেষ . এই দাসত্বের ফল গ্রহণ করিতেছে না বলিয়া এই দশজনার নববইজনাকে দাস ভাৰে ব্যবহার করার কদর্ঘ্যতা ও দোষ চোপের আড়াল আছে । ক্ষেতে যতই শস্য হউক, রুযক যতই খাটুক, তাহার শ্রমফল টানিয়া লইবার ব্যবস্থা বেশ ভাল রকম আছে । মহাজনের ঋণের স্বদে, বদ্ধিত খাজনায় ও ট্যাক্সে, কাপড় মুন-তেলের চড়া দামে সে শ্রমের ফল তাহার হাতছাড়া হইয়া, তাহার অল্পবস্ত্রের অভাব হইবেই। কৃষকের শ্রমলব্ধ ফল ধনী সমাজের হস্তগত হইয়া তাহা যে প্রকারে ব্যয় হয় তাহাতে তাহা আর ঐ নব্বইএর মধ্যে ফিরিয়া যায় না। বড় লোকেরা বেশী ইন্‌কম ট্র্যাক্স দিতেছেন, তাহাতে সরকারের আয় বাড়িতেছে। কিন্তু সরকারের আয়ের সামান্য অংশই লোকহিতে ফিরিয়া আইসে। সরকার এই দরিদ্র দেশকে, চাষীর দেশকে শাসন করিতে আর সামরিক ঠাট বজায় রাখিতে এত ব্যয় করেন যে আর বিশেষ কিছু লোকহিতকর কাজে ব্যয়ের জন্য থাকে না । আর ভারতের আয়ের অধিকাংশ অর্থ রকম-বেরকমে বিলাতে চলিয়া যায়। ওদিকে আবার অর্থ ধনীর ঘরে আসিয়াই বিলাতী ভোগের বস্তুতে প্রচুর পরিমাণে বিলাতে চলিয়া যায়।. কাগজ-পেন্‌সিলে, রিষ্ট, ওয়াচে, মোটরকার-সাইকেলে, কাপড়ে, স্বভায়, রঙে, চিনিতে তাহা দ্রুত দেশের বাহির হইতেছে । বন্দরে বন্দরে ঘুরিয়া দেখুন জাহাজের গোল ভরিয়া কি যাইতেছে, আর তাহার খোল খালি করিয়া কি দ্রব্য উদিগরণ করিয়া যাইতেছে। আমাদের ভৌগলিপার “প্রেতই” কৃষকের সোনার ক্ষেত শুষিয়া লইতেছে। বিদ্যাচর্চায় জ্ঞান লাভ করিয়া মাছুষ প্রকৃতিঞ্চে আয়ত্তে আনিতে পারিতেছে, কিন্তু সেই . বিদ্য যে-পরিমাণে মাহুযে মাছমে অসমত স্বষ্টি করিতেছে ভোগের অনাচার 8bペ) সেই পরিমাণেই ব্যর্থ হইতেছে। যদি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে এই হয় যে এক দেশ আর-এক দেশের স্বাধীনতা হরণ করিয়া সেদেশের লোককে সাক্ষাৎ বা পরোক্ষভাবে দাসবং ব্যবহার করিবে, যদি বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ দ্বারা মানুষের সমাজ জ্ঞানে চরিত্রে ও ধৰ্ম্মে উন্নতিলাভ না করে, যদি তাহার ফলে এই হয় যে কে কাহার অল্প কাড়িয়া লইয়া নিজের ভৌগলিঙ্গা চরিতার্থ করিতে পারে সেই পথে সমাজের অধিকাংশ লোক চেষ্টা করিতেছে, তবে ধিক্ সে বিদ্যাচর্চায়, বৈজ্ঞানিক উন্নতিতে । আলে| বাতাস আর নদীর জল যেমন সাধারণ সম্পত্তি, কাহাকেও মূল্য দিয়া কিনিতে হয় না, বৈজ্ঞানিক উন্নতিতে তেমনি মানুষের সাধারণ সম্পত্তির প্রসার হওয়াই ত আবখ্যক । মাছুষ সমাজে জন্মিলেই সে খাদ্য ৪ পরিধেয় প্রাপ্ত হইবার অধিকার লইয়া জন্মিয়াছে, উন্নতির যুগে সমাজ ত ইহাই মানিয়া লইতে পারে। সহজ উপায়ে পণ্য চলাচল দ্বারা, অল্প পরিশ্রমে প্রভূত দ্রব্য গড়িবার ব্যবস্থা করিয়া, বাষ্প বিছাংকে কাজে লাগাইয়া যে স্থবিধা সমাজের হইয়াছে, তাহা ধনীর ভোগ-চরিত্রার্থতায় আবদ্ধ না রাখিয়া সাধারণের ব্যবহারে আনাই ত মানুষের কাজ । কিন্তু ফলে দেখা যাইতেছে সমস্ত সুবিধাই ধনীর ভোগচরিতার্থতায় নিয়োজিত হইতেছে । আমাদের দরিদ্রের দেশে আমরা জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে ভোগের পথে পা দিয়৷ কেবল দরিদ্রকে তাহার বাচিবার শত চেষ্টা সত্ত্বেও নিশ্চয়মৃত্যুর দিকে ঠেলিয়া দিতেছি । হিন্দুগণ র্তাহাদের সন্ধ্য-বন্দনাতে, মুসলমানগণ র্তাহাদের নমাজে যে সংকথা প্রত্যহই উচ্চারণ করিয়া থাকেন, সেগুলি সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়া জীবনে তাহার কথঞ্চিং ও আচরিত হইলে ভৌগলিপ কমিয়া আসিবে । অর্থোপার্জন করাই কাম্য না করিয়া সদুপায়ে উপার্জন করিয়া লোকহিতে অর্থৰ্যয় করাই কাম্য বলিয়া গৃহীত হউক । দেশের যে অবস্থা তাহাতে সাময়িক প্রয়োজনে সকলকেই চরকা কাটিয়া খাদি পরিয়া গৃহে গৃহে স্থত। তৈয়ারীর ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা আবশ্যক। তাহাতে