পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫২২ বৈঁচি গাছের বনে কোনো কোনো মাঠ ভরা। পড়ন্ত রোদে গাছপালার তলার, ঘন ঝোপের মধ্যেকার ফাকা জায়গায় ছোট ছোট পার্থীর দল কিচ কিচ, কবৃছে, মাঝে মাঝে কোনো কোনো জঙ্গলের কাছ দিয়ে যেতে যেতে কোনো অজ্ঞাত বনফুলের এমনি স্বগন্ধ বেরুচ্চে, যে, তার কাছে খুব দামী এসেন্সের গন্ধও হার মানে । পায়ের শব্দ পেয়ে শুকৃনে পাতার রাশর উপর খস খস শৰ কবৃতে করতে দু একটা খরগোস কান খাড়া ক’রে রাস্তার এ পাশের ঝোপ থেকে ওপাশের ঝোপে দৌড়ে পালাচ্চে। মাঠের মাঝে মাঝে দূরে দূরে শিমুল-ফুলের গাছগুলো দখিন হাওয়ার প্রথম স্পর্শেই আবেশ-বিধুরা তরুণীর মত রাগ-রক্ত হয়ে উঠছে। অনেকগুলো গ্রাম ছাড়িয়ে যাওয়ার পর একজন দেখালে মাঠ ছাড়িয়ে এবার পড়বে চাপাপুকুর। গ্রামের মধ্যে যখন ঢুক্লুম, তখন গ্রামের পথ অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, আশপাশের নানাবাড়ী থেকে পল্লী-লক্ষ্মীদের সাজের শাখের রব নিস্তন্ধ বাতাসে মিশছিল। কোন ঘরটি আলো করে আছে আমার স্নেহের বোনটি? কোন গৃহস্থের আদিনার সাধার আজ দুর হোলো তার হাতে জালা সন্ধ্যা-দীপের আলোয়? কাদের গৃহতল আজ মুখর হয়ে উঠুলো তার সেবা-চঞ্চল চরণের শান্ত-মধুর-ছলে ? রাস্তার মধ্যে একজায়গায় কতকগুলো ছেলেকে দেখতে পেয়ে তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে তাদের মধ্যে একজন বল্লে, "আস্কন, আমি সে বাড়ী আপনাকে পৌছে দিচ্চি।” খানিক রাস্ত এগিয়ে গিয়ে সে পাশের একটা সরু পথ বেয়ে চললে । তার পর একটা বড় পরোনো বাড়ীর সাম্নে গিয়ে বলে, “এই তাদের বাড়ী। আপনি একটু দাড়ান, আমি বাড়ীর মধ্যে বলি।” একটু পরে একজন বৃদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে সে বাড়ীর মধ্যে থেকে বার হয়ে এলো। বৃদ্ধাকে বলে, “ইনি কলকাতা থেকে আসচেন, জেঠাই মা, আপনাদের বাড়ী কোথায় জিজ্ঞাসা করাতে আমি ওপাড়া থেকে নিয়ে আলচি।” বৃদ্ধ আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে আমার ভাল করে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমায় তো চিনতে

প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩২৯ [ ২২শ ভাগ, ১ম খণ্ড পারছিনে, বাবা, থেকে তুমি আমচো ?” কোন জায়গা আমি আমার নাম বহুম, পরিচয় দিতেও উদ্যত হলুম। বৃদ্ধ বলে উঠলেন যে আমায় আর পরিচয় দিতে হবে না, আমার আসা যাওয়া নেই বলে তিনি কখনো আমায় দেখেন নি, তাই চিনতে পারছিলেন না। আমি বাইরে এসে দাড়িয়ে আছি এতে তিনি খুব দুঃখিত হলেন । আমি কেন একেবারে বাড়ীর মধ্যে গেলাম না, আমি তো ঘরের ছেলের বাড়া, আমার আবার বাইরে দাড়িয়ে ডাকাডাকি কি, ইত্যাদি । র্তার সঙ্গে বাড়ীর মধ্যে ঢুকলুম। কেবল মনে হতে লাগলে, আট বছর—অাজ আট বছর পরে ! কি জানি উমরাণী কেমন আছে, সে কেমন দেখতে হয়েছে। আজ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে আমায় দেখে সে যে আনন্দ পাবে, সে আনন্দের পরিমাণ আমি একটু একটু বুঝচি, আমার বুকের তারে তার প্রতিধ্বনি গিয়ে বাজছে । আজ এখনি তার স্নেহমধুৰ ক্ষুদ্র হৃদয়টির সংস্পর্শে আসবে, তার কালে চুলে ভর মাথাটিতে হাত বুলিয়ে আদর করতে পারবো, তার মিষ্টি দাদা ডাকটি শুনবো, এ কথা ভেবে আনন্দ আমার মনের পাত্র ছাপিয়ে পড়ছিল। দেখুলুম এদের অবস্থা একসময় ভাল ছিল, খুব বড় বাড়ী, এখন সবদিকেই ভাঙ্গ ঘর-দোর, দেওয়াল ফেটে বড় বড় অশ্বখ-চারা উঠেছে। বাইরের উঠান পার হয়ে ভিতর-বাড়ীর উঠানের দরজায় পা দিয়েই বৃদ্ধ বলে উঠলেন, “ও বৌম, বার হয়ে দেখ, কে এসেছে।” “কে, পিসিমা ?” বোলে প্রদীপ হাতে যে ওদিকের একটা ঘর থেকে বার হয়ে এল, অস্পষ্ট আলোয় দেখলুম, তার মুখখানি আধ-ঘোমটা দেওয়া, ঘোমটার পাশ দিয়ে চুলগুলো অসংযত ভাবে কানের পাশ দিয়ে কাধের ওপর পড়েছে, পরনে আধ-ময়লা শাড়ী, চেহারা রোগা-রোগ একহারা। এই সেই উমারাণী ! তাকে দেখে প্রথমেই আমার মনে হোলা এ জাগের চেয়ে অনেক রোগ হয়ে গেছে, আর মাথায়ও অনেকটা থেড়ে গিয়েছে। " fi o