পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্য। ] বারংবার ক্ষম প্রার্থনা করিয়াছেন। উপনিষদের অাখ্যান হইতে জানা যায় ব্রাহ্মণগণ বিদ্যালোচনা করিড়েন, রাজারা তাহাদিগকে পোষণ করিভেন এবং আলোচনায় যোগ দিতেন ; পক্ষান্তরে রাজারা যজ্ঞ করিতেন, ব্রাক্ষণের ভtহাতে ঋত্বিক হইতেন । এইরূপে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় সৰ্ব্বদা পরস্পরের সহায় হইতেন (২০)। উrহাদিগের মধ্যে জাতিগত মতবিরোধের কল্পনা নিতান্তই অযৌক্তিক । আপ্যায়িকার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য । উপনিষদের আখ্যানগুলি ধীরভাবে পয্যালোচনা করিলে মনে হয় যে, অক্ষরার্থ ছাড়া এগুলির অন্তনিহিত অন্য উদ্দেশ্যও আছে । আখ্যায়িক হইতে আমরা নানারূপ উপদেশ পাইয়া থাকি। অংস্কারে ‘স্তব্ধ অনূচনমানী শ্বেতকেতু পিতার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন নাই (২১) । জনকের স aায় বিদ্যাভিমানী পণ্ডিতগণ সকলে যাজ্ঞবল্ক্যের নিকট পরাস্ত হইয়াছিলেন (২২) । 'দৃপ্ত বালাকি অজাতশত্রুকে উপদেশ দিতে যাইয়া স্বয়ং তাহার নিকট উপদেশ লইতে বাধ্য হইয়াছিলেন (২৩) । পরমব্রহ্মজ্ঞ জনকও যুগম ভাবিয়াছিলেন যে ধাজ্ঞবল্ক্য বোধ হয় তাহার নিকট উপদেশ লইতেই আসিয়াছেন, তৎক্ষণাৎ তাহাকে ঋষির নিকট নত হইয়৷ শিয্যত্ব গ্রহণ করিতে হইয়াছিল (২৪)। এই-সকল আখ্যানের তাৎপৰ্য্য এই যে বিদ্যাভিমানী প্রকৃত জ্ঞান লাভ করিতে পারে না। ঋগ্বেদাদি বহু গ্রন্থ পাঠ করিয়াও নারদ আত্মবিদ হইতে পারেন নাই (২৪)। ইহা হইতে জানা যায় যে অধ্যয়ন করিলেই পরাবিদ্যা লাভ করা যায় না। মহাধনশালী রাজা জনশ্রুতি অতি দীন রৈকের নিকট ঐশ্বর্ঘ্যের বিনিময়ে বিদ্যা গ্রহণ করিতে যাইয়া প্রথমবার প্রত্যাখ্যাত হইয়াছিলেন (২৫) । এই আখ্যায়িক দ্বারা উপদিষ্ট হইয়াছে যে বিদ্যা-সম্পদের নিকট পার্থিব ঐশ্বধ্য তুচ্ছ । ব্ৰাহ্মণ্য-গৰ্ব্বিত, শ্বেতকেতু পঞ্চালরাজ প্রবাহণের প্রশ্নের উত্তর দিতে অসমর্থ হইয়া পিতাকে লিতে বাধ্য হুইয়াছিলেন যে, তিনি একটা নিকৃষ্ট ক্ষত্ৰিয়ের উপনিষদে শিক্ষা-প্রণালী ও ব্রহ্মবিদ্যায় ব্রাহ্মণের প্রভাব ®8ჯა নিকট পুরাজিত হইয়াছেন (২৬)। এই আখ্যায়িকার স্পষ্ট উপদেশ এই যে, সামাজিক বিধানে নিম্নস্তরের ব্যক্তিও উচ্চজাতীয় ব্যক্তি অপেক্ষ অধিক জ্ঞানশালী হইতে পারেন। এইরূপে উপনিষদের প্রত্যেক আখ্যা য়িকার মধ্যে কোন না কোন নিগুঢ় উদ্দেশ্য নিহিত দেপ। মায় । কোন কোন পণ্ডিত বলেন যে, ক্ষল্লিয়ের নিকট ব্ৰাহ্মণগণের ব্ৰঞ্চবিদ্যা প্রাপির কথা এতই সত্য যে ব্রাহ্মণ-রচিত উপনিষদে ও সে কথা অনিচ্ছা-সত্বেও নিবদ্ধ করিতে হইয়াছে। কিন্তু উপনিষদেই বহুস্থলে বিদ্যালুম্প্রদায়ের উল্লেখ আছে ; বৃহদারণ্যকের চারিটি প্রকরণের শেষে (২৭) চারিটি বংশ বাহ্মণ পাওয় বায় । ঐ তালিকায় জনক, অজাতশত্র, অশ্বপতি, প্রবাহণ প্রভৃতি কোন ক্ষত্ৰিয়ের নাম নাই। মুণ্ডকোপনিষদে ব্রন্থবিদ্যার উৎপত্তির কথাতেও কেবল ব্ৰাহ্মণগণের নামই পাওয়া যায় । “প্রথমে ব্ৰহ্মা অথৰ্ব্বাকে ব্রহ্মবিদ্যা দান করেন। অথৰ্ব্ব আবার তাহ অঙ্গিরকে দিলেন, অঙ্গির ভারদ্বাজ সত্যবtহকে এবং সত্যবাহ অঙ্গিরাকে প্রদান করিলেন (২৮) ।” জাতিবিদ্বেষের বশবৰ্ত্তী হইয়াই যদি ব্রাঞ্চণগণ এ-সকল তালিকা হইতে ক্ষল্লিয়ের নাম বাদ দিয়া থাকেন, তাহ হইলে তাঙ্গর উপাধ্যান-ভাগেই ব৷ ক্ষল্লিয়ের নিকট স্বজাতির অপমানের কথা লিপিবদ্ধ করিবেন কেন, তাহা বুঝা যায় না । শঙ্করাচাৰ্য্য “রাজবিদ্য রাজগুহৃং পবিত্ৰমিদমুত্তমম্ এই গীতাবাক্যের (২৯) অর্থ করিয়াছেন “এই উত্তম -পবিত্র জ্ঞান বিদ্যার রাজা, এবং রহস্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ।” স্বাভিপ্রায় সাধনের জন্য ‘রাজবিদ্যা’ শব্দের রাজীর বিদ্য৷ অর্থাং ক্ষত্রিয়-প্রচারিত বিদ্য এরূপ অর্থ করিলে রাজগুহের কিরূপ অর্থ হইবে, তাহ ভাবিবার বিষয় । © উপসংহার। 略 এই আলোচনা হইতে আমরা দেখিতে পাই যে,— (১ম) অতি প্রাচীন কাল হইতেই অধ্যয়ন ব্রাহ্মণের অবশ্যকৰ্ত্তব্য বলিয়া পরিগণিত হইত ; উপনিষদের যুগ পৰ্য্যন্ত অধ্যয়ন ব্রাঞ্চণের অপরিহার্য্য কৰ্ত্তব্য ছিল না