পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧ડેર (Sc ) আষাঢ়ের প্রথম মেঘের সঙ্গে সঙ্গে নবদম্পতী কলিকাতায় আসিয়া পড়িল । রজত রম, কে তাহার মামার বাড়ীতে আনিয়া তুলিল। বৰ্দ্ধমানে তাহার'কাকা মক্কেল চরাইয়া ও প্রতিবৎসর সংসার বৃদ্ধি করিয়া পরম মুখে বাস করিতেছিলেন। দেশের গ্রামে তাহার জেঠামশাই ভাঙ্গা ভিটে স্ট্রাকৃড়াইয়া সপরিবারে ম্যালেরিয়ায় ভুগিয়া গ্রামে প্রতিদিন দলাদলি বাধাইয়া জীবনের শেষদিনগুলি পরম শাস্তিতে কাটাইতেছিলেন—ইহাদের চিরন্তন বাধাপথের সংসারযাত্রার মধ্যে রমলাকে এক মূৰ্ত্তিমতী ফাঙ্কনহাওয়ার মত লইয়া যাইতে রজতের সাহস হইল না । স্বতরাং সে রমলাকে মামার বাড়ীতেই উঠাইল । ' অবগু মামার বাড়ী বলিতে যাহা বুঝায়, এবাড়ী তাহী নহে—প্রৌঢ় ডিসপেপৃসিয়ায় শীর্ণ, অবিবাহিত এক প্রফেসার মামা আর র্তার ছোট ভাড়াটে বাড়ী ! রজতের মামা তার মার প্রায় সমবয়সী ছিলেন, দুইজনে ছেলেবেল হইতেই খুব ভাব, আর এই সংসারে বৈরাগী ভাইটির ভার রজতের মাকে আজীবন বহিতে হইয়াছিল। তুলসীবাবু কলিকাতায় বরাবর রঙ্গতের মা-বাবার কাছেই ছিলেন। তার পর তারা যখন মারা গেলেন, মাতৃপিতৃহীন রজতকে তিনি বুকে তুলিয়া লইয়া স্বর্গগত বোনের এই মধুর স্মৃতিটিকে আজীবন পরমস্নেহে মাহৰ করিয়া আসিয়া ছেন। নববধূ লইয়া রজত তাহার কাছেই উঠিল। তুলসী-বাবু কেন বিবাহ করেন নাই, অহা লইয় নান। লোকে নানা কথা বলিত । এখন তার কাচাপাকা চুল, ছোট দাড়ি, তেলচুকচুকে টাক আর তালপাতার মত পাংলা দেহ দেখিয়া, এ লোকটা বিবাহ করিল না কেন সে বিষয় কেহ ভাবে না। কিন্তু প্রথম যৌবনেই যখন তিনি কলেজের ডিমন্‌ষ্ট্রেটার হইতে প্রফেসার হইলেন অথচ সংসার পাতিলেন না, তখন তার সম্বন্ধে নানা আলোচনা হইত। তুলসী-বাবু সম্বন্ধে যে-সব গল্প প্রচলিত ছিল, এখন সেগুলি প্রাচীন কথাসাহিত্যের মত লুপ্ত হইয়া গিয়াছে। শুধু একটি গল্প মাঝে মাঝে লোকের মনে জাগিয়া উঠে । ব্রাহ্মসমাজের নাম করিলেই তুলসী-বাবুর মুখে যেন বিদ্ধং থেলিয়া যায়। যৌবনে তিনি প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩২৯ [ २२° ७ां★, s* पं७ ব্রাহ্মসমাজের প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হইয়াছিলেন ; কেশবচন্দ্র, শিবনাথ, আনন্দমোহন ইত্যাদি মহাপুরুষদের সহিত বিশেষ অন্তরঙ্গ ছিলেন, দেশে ধৰ্ম্ম ও সমাজের পুনরুখানের জন্য অদম্য উৎসাহে লাগিয়াছিলেন। সহস র্তাহার মধ্যে আশ্চৰ্য্যকর পরিবর্তন ঘটিল। ব্রাহ্মসমাজের সব সংশ্ৰব ছিড়িয়া তিনি ঘোর নাস্তিক হইয়া উঠিলেন। লোকে বলে তৎকালীন এক প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মবিবাহ নাকি এই যত পরিবর্তনের কারণ। সে যাহাই হউক, তুলসী-বাবু এতদিন হেকেল, কোমৃতের গ্রন্থাবলী, বৈজ্ঞানিক পত্রিক, রিসার্চ-ওয়ার্ক, নূতন নূতন ছেলের দল, রজতের খেয়াল, জীবাণুতত্ত্ব আর অন্ন অজীর্ণতা লইয়া পরম আনন্দে দিন কাটাইতেছিলেন। কলেজে বিজ্ঞান সম্বন্ধে বক্তৃত৷ দেওয়া ছিল তাহার প্রাণ, আর মদের নেশার মত জীবাণুতত্ব র্তাহার নেশা ছিল। কলিকাতায় ভদ্রবাঙ্গালীপাড়ায় একটি ছোট গলিতে ছোট বাড়ী। গলিটি উত্তর হইতে দক্ষিণে গিয়া এক বড় রাস্তায় পড়িয়াছে। বাড়ীটি পূৰ্ব্বমুখী । উপরে তিনখানি, নীচে তিনখানি ঘর। একতলায় সামনে বসিবার ঘরখানি বেশ বড়, সমস্ত পূৰ্ব্বদিক জুড়িয়া, ঘরের পাশ দিয়া সিড়ি দোতলায় উঠিয় গিয়াছে, সিড়ির পাশে উত্তরমুখে দুইখানি ছোট ঘর, একটিতে রান্না হয় আর-একটিতে চাকর থাকে ঘরগুলির সম্মুখে বারান্দা, তার পর স’নবাধানে ছোট উঠান। উত্তরদিকটা পাশের বাড়ীর দেওয়াল দিয়া একেবারে চাপা, পশ্চিমদিকটা আরএকখানি পাশের বাড়ীর অন্দরমহলের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে । ঢুকিবার দরজা সম্মুখের বড় ঘরের উত্তরদিকে এক কোণে । দোতলায় তিনখানি ঘর, পূৰ্ব্বদিকের বড় ঘরখানিতে মামাবাবু থাকেন, ঘরের তিন দিক বৈজ্ঞানিক বইয়ে ঠাসা আলমারিগুলি দিয়া ভর, আর-একদিকে তিনখানি লম্বা টেবিলে ভূতত্ত্ববিদ্যার নানা রংএর ছোট বড় পাথর, ম্পিরিট বা ফৰ্ম্মলে রক্ষিত নানা প্রকার মৃত জন্তর দেহ ভরা ছোট বড় শিশি, আর স্নাইড ভরা কাঠের বাক্স সাজানো রহিয়াছে, ইহাদের মধ্যে শোবার ছোট তক্তা যেন অনধিকার-প্রবেশ করিয়াছে। উত্তরমুখে ঘর দুখানির মধ্যে, একখানিতে রজত থাকে আর-একখানিতে