পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

60 مسيb মতিলাল হিহি করিয়া হাসিতে লাগিল। ভূবন বলিল— দেখ দেখি মানুষকে ভয় লাগিয়ে দেয় । খোল বাপু তোর দাত খোল । মতিলাল পরম পরিতুষ্ট হইয়া প্রশ্ন করিল--তোরও ভয় লাগল ভোবন ? ভুবন বলিল- ষ্ট্যা-ভয় লাগতে আমার দায় । তু যে বললি ধৰ্ম্মরাজের মাজুলী এনে দিবি ? ট্যাক হইতে খুলিয়া মাদুলী বাহির করিয়া দিয়া মতিলাল বলিল একটে পাঠ কিনে রাখতে হবে আবার | হ’লে পাঠা লাগবে দেবাংশ বলেছে । পরদিন পূর্ণিমার অবসান সময়ে রতের উদযাপন । ঢাক শিঙা কাশী কাসরঘণ্টা শঙ্খ বাজাহয় শোভাযাত্রা বাহির হইল । প্রথমেই এক দল ঢাক ও বাস্থ্যভাণ্ড-তাহার পরই শ্রেণীবদ্ধ ভাবে বার-চৌদ্দ সারি ভক্তের দল ভাড়াল মাথায় করিয়া চলিয়াছে। ভাড়াল এক-একটি জলপূর্ণ মঙ্গল-কলস, কলসগুলির গলায় ফুলের মালা- -ভক্তের দলেরও প্রত্যেকের গলায় মোটা মোটা কন্ধে আউচ ও গুলঞ্চ ফুলের মালা । ভক্তদলের চারি পাশে সারি সারি ধূপদানী হইতে ধূপের ধোয়৷ উঠিতেছে। তাহার। ঢাকের বাজনার তালে তালে ভক্তনাচ নাচিয়া চলিয়াছে। আবার পিছনে এক দল ঢাক । তাহার পিছনে দশখানা গ্রামের নিয়শ্রেণীর নরনারী কাতারে কাতারে চলিয়াছে । মন্থগ্রামের "ভাড়াল’ আসিয়া বদ্ধিষ্ণু গ্রামখানায় প্রবেশ করিল। মছগ্রাম এই গ্রামের বাবুদেরই জমিদারী, চিরকাল ভাড়াল এ গ্রামে আসে। রাস্তার দুই পাশের ঘরের দাওয়ার উপর ভদ্র নর-নারীতে পরিপূর্ণ। ভাড়ালের দলের ভক্তদের সঙ্গে তালে তালে তাহাদেরই মত নাচিতে নাচিতে চলিয়াছে কত ছেলে, তাহার মধ্যে অগ্রবর্তী পাৰ্ব্বতী ও মদন । আপনাদের দাওয়া হইতে পাৰ্ব্বতীর মা ডাকিল-ওরে ও হতভাগ উঠে আয় । এই বোশেখ মাসের দুপুরে রোদ– উঠে আয় ! পাৰ্ব্বতী নাচিতে নাচিতেই মাকে এক ভেংচী কাটিয়া দিল । সমস্ত দলের পিছনে একখানা ঢাকের বাদ্যধ্বনি অকস্মাৎ শোনা গেল । সঙ্গে সঙ্গে এক ভয়াৰ্ত্ত কলরব ! পিছনের দিক হইতে ভিড় ভাঙিয়া চতুদিকে সব ছুটিয়া পলাইতেছিল। বামনবুড়ী গুল্পী মাত্র হাত দুই লম্ব, সে পলাইতে না কিন্তু ছেলে প্রবাসী $N98R পারিয়া একটা বাড়ির দেওয়ালে মুখ গুজিয়া মুদিত চোখে কাঠের মত লাগিয়া গেল ! ভয়েরই কথা ! ঢাকের সম্মুখে তালে তালে নাচিতে নাচিতে আসিতেছিল—বিকট এক মূৰ্ত্তি! মাথায় এক অণটি খড়ে কাল রং মাখাইয়া পরচুলা পরিয়াছে, বিকটাকার মুখে দুই গালের পাশে গজদস্তের মত দুই দাত, রাজ্যের ছেড়া কথা পরনে -জামু পৰ্য্যন্ত ঝুলিয়া পড়িয়াছে দুই স্তন— সৰ্ব্বোপরি ভয়াল তাহার দুই হাত- প্রত্যেকটি চার পাচ হাত করিয়া লম্বা এক হাতে এক ঝাটা ! কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভক্তদল ও বাদ্যভাণ্ড ছাড়া রাস্ত পরিষ্কার হইয়া গেল। মদন যে কোথায় পলাইল তাহার সন্ধান পাৰ্ব্বতী পাইল না। সে ছুটিয়া আসিয়া ঢুকিল মায়ের পিছনে । মাও ভয় পাইয়াছিল, তবু সে বলিল--যাবি, যাবি আর ? ডাকব ঝাটাবুড়ীকে ! শোন শোন—ও বর্ণটাবুড়ী ! ঋটিাবুড়ী ঘুরিয়া দাড়াইল। পাৰ্ব্বতীকে ঠেলিয়া সম্মুখে আনিয়া মা বলিল—এই দেখ—রাস্তায় পেলেই ধরবি একে। কাটাৰুড় পরমানন্দে নানা অঙ্গভঙ্গী সহকারে বিচিত্র নৃত্যু আরম্ভ করিয়া দিল সেইখানে । হারুবাবুর মা খপ করিয়া পাৰ্ব্বতীর চোখ ও কপাল আবৃত করিয়া বলিয়া উঠিলেন-পালাও, তুমি পালাও ! নাচিতে নাচিতে ঝাটাবুড়ী চলিয়া গেল। হারুবাবুর মা তখন বলিতেছিলেন–জল—জল—পাখা— পাথা ! মতিলাল বাড়জে-বাড়িতে বকশিশ পাইল দুই টাকা। বাৰু ভারী খুশী হইয়াছিলেন। তিনি নিজে ভয়ে বু-ৰু করিয়া উঠিয়াছিলেন। বাড়িতে সে তখন পোষাক ছাড়িতেছে—দত্তগুড়ো বাড়ি পধ্যস্ত আসিয়া তারিফ করিয়া বলিলেন—খুব ভাল হয়েছে মতিলাল। সবিনয়ে মতিলাল হি হি করিয়া হাসিল শুধু! দত্ত বলিল—বামন গুলপী বুড়ী থাকতে থাকতে ধপাস ক'রে পড়ে গেল। মুখুজেদের পাৰ্ব্বতীর চেতন করাতে ত ডাক্তার ডাকতে হয়েছিল। আর বাড়ুজ্জে-কত্তা ত— । চমকিয় উঠিয়া মতিলাল প্রশ্ন করিল—পাৰ্ব্বতীর চেতন হইছে ?