পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাত্তিক —আয় কাছে আয় । অরুণ শিবপ্রসাদের মাথার নিকট আসিয়া বলিল,— শরীরটা কি খারাপ মনে হচ্ছে ? --ন, না, ভালই আছি । ডেস্কের নীচের ড্রয়ারটা খোল ত । রোল-টপ বৃহৎ ডেস্ক। চাবি দিয়া অরুণ নীচের ড্রয়ার খুলিল । —চিঠির বাণ্ডিলের তলায় একটা ফটো দেখবি, নিয়ে আয়ু ত—ওই ফ্ৰেমে-বাধানোটা নয়, আর একটা ছোট ফটো । অরুণ একটি পোষ্টকার্ড ফটো বাহির করিল। —ই, ওইটা, মাথার আলোটা জেলে দে । শিবপ্রসাদ ফটােটি দৃঢ় হস্তে ধরিয়া কিছুক্ষণ দেখিলেন, তার পর অরুণের হাতে দিলেন । সমুদ্রতর। তটভূমিতে তরঙ্গগুলি ভাঙিয়া পড়িতেছে। সমুদ্ৰনীলনয়ন স্বরূপ এক ইংরেজ-ললন একটি ছোট পাথরের পাশে দাড়াইয়া, বাতাসে তাহার চুল উড়িতেছে, স্কার্ট উড়িতেছে । তাহার পাশ্বে কোটপ্যাণ্ট-পরিহিত একটি ভারতীয় যুবক। --ওই তোর কাকী। --কাকী ? --হুঁ, আমার স্ত্রী । এটা ওর বিয়ের আগের ফটো, আমরা টকিতে তুলিয়েছিলুম। অরুণ স্তন্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিল। —ওই রূপার ফ্রেমে বঁাধান ছবিটাও নিয়ে দেখ। চিঠির বোঝা হইতে অরুণ ফটোটি আনিল। আলোকের তলীয় দাড়াইয়া দেখিতে লাগিল, ওই ইংরেজ-মহিলার ফটো, মাথায় কৃত্রিম ফুলভরা টুপি, কলকাওয়াল কাশ্মীরী শাল হইতে তাঁর জামা ও স্কার্ট। ইনি অরুণের কাকীমা ! এখন কোথায় ইনি ? কেন ইনি কাকার সঙ্গে আসেন মই ? হয়ত ইনি জীবিত নাই | শঙ্কণ কিন্তু কোন প্রশ্ন করিতে পারিল না, চুপ করিয়া fাড়াইয় রহিল। -ছবিগুলো রেখে দে ডেস্কের ভেতর । কথাটা তোকে নিয়ে রাখলুম, যদি হঠাৎ মরে যাই। —কি যে বলে কাকা । এই চাবিট দিয়ে আমার জীবনাক্সন enسb —না, এ অস্বথটা কিছু না, সেরে উঠব, কিন্তু আমার হঠাৎ মৃত্যু হবে দেখবি। জীবন ত এই বুকের ধুকধুকানি, পাম্পের মত হার্ট সারাক্ষণ চলছে, কল একটু যদি বিগড়ায়, ব্যস্,-ফিনিস্—সব আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রেম স্বপ্ন শেষ । —কাকা । —ডেস্কটা বন্ধ কর । চাবিটা ওইখানেই রাখ। আচ্ছ, শুতে যা । আমি বেশ ভালই আছি। ভয় নেই। আর দেখ, একথা কাউকে আর জানাবার দরকার নেই। —নিশ্চয় । —আর ছকু খানসামাকে ডেকে দে। ওই জানালাট খুলে দে । —বাইরে বড় ঠাণ্ড বাতাস, আবার বৃষ্টি আরম্ভ হ'ল দেখছি । —আচ্ছা ছকুকে ডেকে দে। গুড নাইট। অরুণ ধীরে দরজা বন্ধ করিয়া বাহির হইল । ডাকিল না। ছকু গেলেহ, মদ আনিবার হুকুম হইবে। ছকুকে শুধু নিজ পরিবারের নয়, বন্ধুবান্ধবদের পরিবারের নানা সমস্তার সমাধান করিতে হয়। " এক সন্ধ্যায় মামীম অরুণকে নিভৃতে ডাকিয়া বলিলেন— উমা ত কিছুতেই বিয়ে করতে রাজী হচ্ছে না। অরুণ বিস্মিত জিজ্ঞাস্বভাবে মামীমার দিকে চাহিল, যেন উমার এ মতের জন্য অরুণ দায়ী। —ওঁর ইচ্ছ, উমার শীগগীর বিয়ে দিয়ে দেন। একটি ভাল ছেলেও পাওয়া গেছে । ছেলেটি কে অরুণ জিজ্ঞাসা করিল না। একটি নুতন উকীল তাহার মামার মোটর স্থাকাইয়া প্রায়ই আসে। কালে, মোটা, বেঁটে, মুখে কথার খই ফুটিতেছে, সে যে অত্যন্ত চালাক, ইহাই সবাইকে বোঝাইতে চায়। সে হইবে উমরি স্বামী ! অরুণ ধীরে বলিল—কি বলে উমা ? —ও বলে বি-এ পাস না ক’রে বিয়ে করবে না। আর উনি বলছেন, বি-এ পাস করলে উমার পছন্দ হয়ে যাবে উচু, সে আর সহজে বিয়ে করতে চাইবে না। —তোমার কি মত মামী ?