পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক পেশোয়ার ক্যান্টনমেণ্ট ষ্টেশনে আমরা রেলওয়ে সার শেষ ক'রে নামলীম ! আমাদের সম্বৰ্দ্ধনার জন্যে একটি ভদ্রলোক অপেক্ষা করছিলেন। সরকারের তরফে তিনি যে বিভাগের তার নাম করলাম না। যাহোক আমরা তার হাতে আমাদের আর মালপত্রের ভার দিলাম, কোন ভাল থাকবার জায়গায় পৌছে দেবার জন্তে । টোঙ্গাযাগে স্থানীয় সরকারী ডাকবাংলোয় হাজির হলাম। এখানে চীন হোটেল’ বলে বড় হোটেল আছে, খরচ বেশী শুনলাম কিন্তু পরে দেখলাম আমাদের ডাকবাংলো নামেই সস্ত, rামের বেলায় কম যান না । পেশোয়ারের সন্ধ্যা গরমে আর ধুলোর ঝড়ে অন্ধকার হয়ে এল । সামান্ত কাবাব রুটি পেয়ে বারাণ্ডায় খাটিয়া পেতে গরমের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ল’ ত কাটান গেল। সকালবেলায় আফগান পাসপোর্ট অপিসে হাজির হলাম আমরা দু-জনে। কাবুলীওয়ালার স্বাড়, অসম্ভব ভিড়, পস্তু ভাষায় হটগোল চলেছে । ভাষায় অনভিজ্ঞ আমরা আন্দাজে কোনরকমে যথাস্তানে পৌঁছলাম। স্পেনে শুদ্ধ ফারসী ভাষায় কারবার, ইংরেজীর চলন নাই, আর আমাদের ভাঙা উর্দু তাদের কাছে দুৰ্ব্বোধ্য না হলেও দের ফারসী বোঝা আমাদের অসম্ভব । শেষে আমাদের iনয়ে গেল তর্জমান সাহেবের কাছে । এই সাহেবের পেশা তৰ্জমা করা । ইনি ভাল ইংরেজী বলেন, ভারতীয় অন্য ভাষাও বেশ বুঝতে পারেন। ইনিই শেষে আমাদের শকুলের কাণ্ডারী হলেন। ইনি দুরাণী-বংশধর, ইহার পূর্বপুরুষ আফগানের আমীর ছিলেন। ইনি পাসপোর্ট আপিসে বিদেশীয়দের সাহায্য করেন আফগান সরকারের তরফ :কে । যাহোক এই ভদ্রলোক খোঁজখবর করে আমাদের নালেন যে আমাদের আফগান-সীমাস্ত পার হবার সুমতি আফগান-সরকার পাঠান নাই। আমরা মাথায় ত দিয়ে পড়লাম । সেদিন সকালবেলায়ই ছাড়পত্র য় কাবুল রওয়ান হবার মতলব ছিল। মোটরের গবস্তও ক'রে আসা হয়েছিল। সব পণ্ড হ’ল । তর্জমান ব বললেন যে, আমাদের কাবুলের ব্যবসায়ী বন্ধুর য়ু আফগান-সরকারের কাছে অন্তরোধ জানাতে ভুলেছেন, ত - কোন বন্দোবস্ত হয় নাই । তাছাড়া এ সব বন্দোবস্ত ই? দুই-তিন সপ্তাহ লাগে, পূৰ্ব্বে অনেক বিদেশী যাত্রী জামরুপ জনৈক খাসসাদার চিঠি লিগে করা ঠিক মাসাবধি অপেক্ষ ক'রে হুকুম পেয়েছে । উত্তর পেতে আট-দশ দিন লাগে—“তার হ’ল, তাছাড়া কাবুলের বন্ধুদের পেশোয়ার আপিসে খোজ করলে কাজ এগোতে পারে জানা গেল । তর্জমান সাহেবকে রাত্রে থানায় নিমন্ত্ৰণ ক’রে আমরা শহরে বেরিয়ে পড়লাম। বেরিয়ে দেখি চারদিকে খুব হুলস্থূল লেগে গেছে—খোজ নিয়ে জানা গেল কোয়েটার ভূমিকম্পের ব্যাপার। রাষ্ট্রে যখন কম্প হয়েছিল তামরা বুঝতে পারি নি। খবরের কাগজে জানলাম কি ভীষণ কাণ্ড হয়ে গেছে। পেশোয়ার কোয়েট হতে এমন বেশী দূর নয়, কিন্তু কম্পের কোন চিহ্নও দেখা গেল ন৷ এই পুরনো শহরে। আমরা শহর বাজার টোঙ্গ ক’রে ঘুরে কাজ শেষ করে ক্যান্টনমেণ্ট ডাকবাংলোয় ফিরে গেলাম ঘৰ্ম্মাক্ত কলেবর আর হতাশ হয়ে। কাবুল বন্ধুদের পেশোয়ার আপিস থেকে বোঝা গেল আমাদের কাবুল যাওয়া খুবই কঠিন হবে।