পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণয়ণ মহাকাল Re్స ছেলে যাকে তাকে খণ্ডর শাশুড়ী বলে টিপ, টিপ, ক’রে পায়ের ধুলো নিতে পারবে না।” দর্পনারায়ণ এবার হাসিয়া উঠিলেন, “ওরে আমার নবাবপুকুর রে!” কালো মেয়েকেই বিষ্ণুপ্রিয় বউ করিলেন ; কিন্তু এবাড়িতে কালো বউ কখনও আসে নাই বলিয়া কৰ্ত্তার মনে দুঃখ থাকিয় গেল । তিনি বলিয়া রাখিলেন, “বড় ছেলের বউ তুমি করলে তোমার মনের মত, ছোট ছেলের বউ আনবার ভার কিন্তু আমার । দেখো, শঙ্করের যে বউ আনব, তার রূপে আঁধার ঘরেও আলে৷ জ'লে উঠবে। তোমাকে হার আমি মানাব।” একথা স্বরেশ্বরীর কানে গিয়াছিল । একে শ্বশুর, তাহাতে আবার অতবড় প্রতাপ, কাজেই স্বরেশ্বরী মুখের উপর কিছু পলিতে পারিলেন না ; কিন্তু রাগে ও অপমানে তাহার বুকে যেন আগুন লাগিয়া গিয়াছিল। বাপের বাড়িতে চিরকাল শুনিয়াছেন, রূপের অভাবে তাহার বিবাহের দেরি হইয়৷ গিয়াছিল ; রূপবতী জ্যেষ্ঠ ভগিনীদের কাছে এ অপমান তবু না-হয় মাথা নীচু করিয়া সওয়া যায়, কারণ র্তাহার। ত স্বরেশ্বরীর অপেক্ষ দরিদ্র পিতার কন্যা নন । কিন্তু তাই বলিয়া দর্পনারায়ণের কন্যাপুত্রের মুখেও কি ওই কথা শুনিতে হইবে ? রূপ ত লক্ষ্মেীয়ের বাইজীদেরও আছে, কিন্তু বংশমৰ্য্যাদা তাহার মত বাংলা দেশে কয় জন দেখাইতে পারে ? ঘর ছোট হইলেই লোকে জাক দেখাইবার জন্য রূপ রূপ করিয়া মরে । রূপবতীর হাতের জল বেশী মিষ্ট, না চালচলন বেশী উচু ? দেখা যাইবে শঙ্করের বউ আসিলে। শঙ্করনারায়ণের বিবাহের সময়ও হইয়া আসিল । বৈঠকখানা-বাড়িতে দর্পনারায়ণের শয়নকক্ষে পাথরের কুজায় ফল ও চন্দনের পাখা লইয়া পট্টবস্ত্রপরিহিতা গৃহিণী যখন প্রতি পধ্যায় স্বামী-সম্ভাষণে যাইতেন, তখন দর্পনারায়ণ ঠাট্টা Hরয়া বলিতেন, "এবার যা স্বন্দরী বউ আনব গিৰী, দেখে '5, তোমার রূপের খ্যাতি একেবারে ঢাকা পড়ে যাবে। '3 ছেলের বউ এনে কান ভরে দু-বেলা নিজের রূপের থখান শুনেছিলে, এবার সে সাধ তোমার আর পূরবে s; f" গৃহিণী হাসিয়া বলিতেন, “তাক্ট করে গো, তাই করে, বুড়ে বয়সে বউ-মেয়ের রূপের হিংসা না করে আর আমার কোনও কাজ নেই কিন, তাই আমার উপযুক্ত শাস্তি দিও।” বিলাসপুরের জমিদারের বড় ছেলের মেয়ে, নাম চন্দ্ৰজ্যোতি, কাজেও তাই। মেয়ের রূপ নয় ত পূর্ণিমার আলো ; লোকে বলিত, ‘মেয়ের গায়ে সোনার গহনা দিলে খুজিয়া পাওয়া যায় না, বিধাতা যে স্বয়ং তাঁহাকে সোনা দিয়াই গড়িয়াছেন।” দর্পনারায়ণ লোকমুখে খবর পাইয়া বলিলেন, “এই মেয়ের সঙ্গেই শঙ্করের বিয়ে দেব।” বিষ্ণুপ্রিয়া বলিলেন, “বেশ হবে, তোমার মনের মত হলেই আমি খুলী। একটু দূরদেশ বটে, কিন্তু ঘরেও ত বড় বৌমার চাইতে ছোট হবে না।” বিবাহের কথাবার্তা ঠিক হইতে হইতেই কিন্তু বিষ্ণুপ্রিয়া সিন্দুর ও রক্তচেলী পরিয়া তাহার সাধের সংসারের মায় কাটাইয়া চলিয়া গেলেন। দর্পনারায়ণ আপনার দপ-রক্ষা করিতে পারিলেন না, নুতন বউ আনিয়া গৃহিণীকে হার মানানো গেল না। শেষ বিদায়ের সময়ও মুখে মুখে এই কথাই চারিধারে রাটল, “এত বয়সেও এত রূপ এ-বংশে কোনও বউ-ঝির কখনও দেখা যায় নি। শ্মশানের আগুনও যেন ছুতে ভয় পাচ্ছিল।” তার পর আসিল চন্দ্রজ্যোতি, তাহার রূপের কিরণে চতুর্দিক হাসাইয়া। স্বরেশ্বরীই তপন বাড়ির গৃহিণী, বন্ধুবরণ করিবার সময় রূপার থালায় দুধআলতা গুলিয়া কনেকে দাড় করাইতে পা দুখানি যেন সত্য সত্যই রক্তপদ্মের মত ফুটিয়া উঠিল। স্বরেশ্বরী ঈর্ষিত দৃষ্টিতে দেখিলেন, সত্যই এমন রাজরাজেন্দ্রাণীর মত রূপ মানুষের চোখে না লাগিয়া যায় না। সকলে চোথে আচিল দিল, “আহ, এমন প্রতিমার মত বউ শাশুড়ী দেখলেন না।” স্বরেশ্বরী মুথে কিছু বলিলেন না, মনে মনে বলিলেন, “পোড়া বিধাতা, মেয়েমানুষ ক’রে যদি পাঠালে ত ঐটুকু বাদ দিয়ে কেন পাঠালে ?” একেই ত তাহার রূপের অভাবটা বংশমর্য্যাদা অপেক্ষ বড় করিয়া দেখাতে শ্বশুরবাড়ির উপর সুরেশ্বরী প্রসন্ন ছিল না; তাহার উপর আবার এমন চোখ-ঝলসানো রূপ দেখিয়া প্রথম দিন হইতেই সে চন্দ্রজ্যোতির উপর বিরূপ হটয়া বসিল ।