পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০২ প্রবাসী ১৩৪২ মেয়েট আর কোনও দিক্ দিয়া যদি তাহার চেয়ে নীচু হইত, তাহা হইলেও স্বরেশ্বরী তাহাকে একটু দাক্ষিণ্যের সহিত দেখিতে পারিত । কিন্তু তাহাও যে কপালদোষে হইল না । পিতৃগৌরব, পতিগৌরব, আত্মগৌরব, কোনও দিক্ দিয়াই সে স্বরেশ্বরীর ছোট নয়, বরং এই একটা সৰ্ব্বজন-ঈপিাত দিকে সে স্বরেশ্বরীর চেয়ে অনেক উৰ্দ্ধে স্থান করিয়া লইল ঘরে পা দিবা মাত্র। সুরেশ্বরীর অজ্ঞাতেই তাহার মনটা বদ্ধপরিকর হইয়া উঠিল, কি করিয়া চন্দ্রজ্যোতিকে এই উচ্চাসন হইতে নামানো যায় সেই চেষ্টায়। বধুবরণের পর ঘরে ঢুকিয়াই স্বরেশ্বরী স্বামীকে বলিল, “রূপসী বউ ত এলেন, ঘরে ঢুক্বার আগেই শাশুড়ীকে খেয়েছেন, এবার আবার কার মাথা খাবেন কে জানে ?” ইন্দ্রনারায়ণ ছথিত হইয়া বলিল, “ছিং, ও ছেলেমানুষ নূতন বউ আজ ঘরে পা দিয়েছে মাত্র, আমন ক'রে ওর নামে কলছ কেন ? আমাদের দুরদুষ্ট, তাই মা আমাদের ঘর অন্ধকার ক'রে চলে গেলেন। ও বেচারী এ মুল্লকে ছিল না, ওর সঙ্গে তার সম্পর্ক কি ?” স্বরেশ্বরী জলিয়া উঠিয়া বলিল, “রূপ দেখেহ গ’লে গেলে ত! পুরুষমানুষ হয়েছ আর তবে কি করতে ? ঐ রূপের লাথি যখন ভাইয়ের পিঠে পড়বে দুম দুৰ্ম্ম করে, তখন বুঝবে রূপসীর মহিমু !” ইন্দ্রনারায়ণ বলিল, “তুমি রক্ষেকালী হয়েও ত আমার পিঠে দিবারাত্রি চন্দন বুলোচ্ছ না? ও যদি রূপসী হয়েও না বুলোয় তাতেই বা এমন ক্ষতি কি ?” স্বরেশ্বরীর এত রাগ হইল, যে, মুখ দিয়া কথাই যেন বাহির হয় না। তবু সে বলিল, “আচ্ছ, এখনই দিন ফুরোয় নি, দেখা যাবে কে চন্দন বুলোয় আর কে বিছুটি বুলোয়।” স্বরেশ্বরীর স্বরূপ চিনিতে চন্দ্ৰজ্যোতির বেশ দিন লাগিল ন। বয়স তাহার বেশী হয় নাই, কিন্তু বুদ্ধি ছিল তীক্ষ্ণধার। বড় জ। তাহার উপর প্রসন্ন ত নহেনই, প্রথম দিন হইতেই তাহাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে গ্রহণ করিয়াছেন বুঝিবামাত্র চম্রাজ্যোতিও রণসজ্জায় সজ্জিত হইতে লাগিল ৷ শ্বগুরের ভিটায় বড় বৌরাণীকে মুখের উপর অসম্মান সে করিবে মা, কিন্তু তাই বলিয়া কাহারও জুতার স্থখতলা হইয়া থাকিবার জন্ত সে জন্মগ্রহণ করে নাই। " g তিনমহলা প্রকাও বাড়ি, প্রথম মহলে কাছারী, যত আমলা-গোমস্তার ভীড়, তার পর বকুল,কৃষ্ণচুড়, শিরীষ ফুলের বড় বড় গাছের বাগান, তার পর বৈঠকখানাবাড়ি, তার পর আবার ফুলের বাগান, করবী, টগর, রজন, গন্ধরাজ, চাপা, কন্ধে, জবা, শিউলি, হাজার ফুলের মেলা । সৰ্ব্বশেষ অন্দরমহল, তাহারই দক্ষিণে এই ফুলের বাগান বিষ্ণুপ্রিয় নিজ হাতে করিয়াছিলেন। মালী তাহার ছিল বটে, কিন্তু তবু অষ্টপ্রহর রাণীমা এই বাগান লইয়াই কাটাইতেন। কোনও গাছের তলায় একটি পার্তা পড়িয়া থাকিবার জো নাই, কোনও পথে ঝড়বৃষ্টির অত্যাচারে স্বরকির রং একটু ময়লা হইবার জে৷ নাই, গাছের ডালে মরা পাতা কি শুকৃনা কাঠি, ঝরা ফুল থাকা একেবারে নিষিদ্ধ । নন্দনকাননের মত র্তাহার ফুলবাগান সারাক্ষণ যেন আকাশ ও মাটি আলো করিয়া থাকে, এইদিকে বিষ্ণুপ্রিয়ার কড়া নজর ছিল। বাগান ছাড়িয়া যখন ঘরে আসিতেন, তখনও সৰ্ব্বদ দক্ষিণের বারান্দায় বসিয়া খুটিনাটি তদারক করিতেন। বিষ্ণুপ্রিয়ার মৃত্যুর পর দক্ষিণের ঘর ও বারান্দার সারি চাবি দেওয়াই থাকিত। ছেলেরা বলিত, “ওঘরে বাস করতে গেলে কোনও দিকে চোখ তুলে তাকানো যায় না ; দেয়ালে মেঝেতে আসবাবে কড়িতে বরগায় মায়ের নিঃশ্বাস, মায়ের দৃষ্টি মাখানো রয়েছে, অথচ মা নেই ; আমন ক’রে অনুক্ষণ মায়ের মৃত্যুকে জীবন্ত করে রাখতে পারব না ; একটু দূরে থেকে মরণকে ভুলতে দাও।” কিন্তু চন্দ্রজ্যোতি আসার পর মুরেশ্বরী বলিল, “ছোটবেী ত শাশুড়ীকে দেখে নি, আমরা যদি দক্ষিণের ঘরগুলে অমন ক’রে ফেলে রাথি ত দু-দিন পরেই ওরা সব দখল করে নেবে।" কাজেই চন্দ্রজ্যোতি দ্বিরাগমনের পর আসিয়া দেখিল, সমস্ত দক্ষিণ-মহল বড় বৌরাণী অধিকার করিয়াছেন, একথান ঘরও তাহার জন্ত বাকী নাই। ওখারের ঘরে যে চাবি বন্ধ থাকিত এবং তাহ ষে শাশুড়ীর ঘর তাহ চন্দ্ৰজ্যোতি বিবাহের সময়ই দাসীর মুখে শুনিয়া গিয়াছিল। উত্তরের ঘরগুলির কোলেও প্রকাও দালান, মাঝখানে চকমিলানো উঠান, জালে