পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'অগ্রহণয়ণ বলিল, “আঞ্জে, যা হবার আমার বুকের উপর দিয়ে হবে, ধেীরাণীমা ভয় পাবেন না, আপনার ঠাকুর আমি ঠিক এনে দেব ।” চন্দ্ৰজ্যোতি বলিলেন, “আচ্ছা, আনিস্ আনিস্, রেতেভিতেই আনিস্, যাতে মিথ্যে হাঙ্গাম একগাদ না হয়। চুপেচাপে ঠাকুর বসিয়ে দিলে ভোরে উঠেই আমি ফুলবিল্পিত্তর দিয়ে পুরুত ডেকে তখনকার মত লোক-জানাজানি করে দেব ।” চুপি চুপি পরামর্শ হইল, কিন্তু পুকুর-পাড়ে কুলুঙ্গি গড়িতে দেখিয়াই স্বরেশ্বরীর কৌতুহল উগ হইয়া উঠিল, “এই আবার ছোট গিল্লির কি কুবুদ্ধি মাথায় খেলতে লেগেছে। দিনে রেতে ঘুম নেই, কি ক’রে আমাকে লোকের কাছে ছোট করবে কেবল সেই ভাবনা ।” এদিক ওদিক চরদূত পঠাইয় তিনি আসল খবর বাহির করিয়ু লইলেন। নিজে গিয়া চন্দ্রজ্যোতিকে বলিলে হয়ত সে কথা শুনিবে না, শুধু শুধু তাহার কাছে ছোট হইতে হুইবে । তাহার চেয়ে ভালমানুষ সাজিয়া শ্বশুরকে গিয়া পরিলে হয় । সুরেশ্বরী দপনারায়ণকে গিয়া বলিল, “রূপাই নদীর তীরের মহাকালকে মন্দির প্রতিষ্ঠা ক’রে রাখি, আমাদের বড় সাপ | আমাদের দুই জায়ের নামে মন্দির করলে কেমন হয়, আপনি একবার ওদের বলে দেখুন না।” দপনারায়ণ ভাবিলেন, অবসর-মত কাজ হইলেই চলিবে । তবু চন্দ্রজ্যোতিকে একবার ডাকিয়া পাঠাইলেন, কথাটা পুড়িবেন বলিয়া। চন্দ্রজ্যোতির টনক নড়িয়া উঠিল, বুঝিলেন কি উদ্দেশ্যে তলব, বলিলেন, “আজ আমার শরীর বড় কাহিল, কলি আমি নিশ্চয় দেখা করিব।” শঙ্কর তখনই গোপীনাথকে হুকুম করিল, আর দেরি নয়, খাজ রাত্রেই ঠাকুর আনিয়া ফেলা চাই। রাত্রে ডুলি লইয়। গোপীর দল চলিল নদীর ধারে জঙ্গলে । পল্লীগ্রামের পথ, প্রথম রাত্রেই প্রায় জনহীন, তার উপর নদীর ধীরে মনুষ্যবসতিহীন বনভূমিতে। গোপীনাথের বুকটা ছমৃ ছম্ করিতে লাগিল। দূরে সেটুমেন্টের তাবু পড়িয়াছিল, সাহেবের ক্রিগুলা গোপীর ডুলি দেখিয়া অন্ধকারে ঘেউ ঘেউ করিয়া ছুটি আসিল । তাৰু হইতে আমিনরা বাহির হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, "রাত্রে বনের ধারে ভুলি নিয়ে কোথা যাও?” -) মহাকাল ર૦૪ গোপী ভয়ে ভয়ে বলিল, “জমিদারের কাজে যাচ্ছি।” আমিনরা ঠাট্টা করিয়া বলিল, “চুরিচামারি নয়ত !” গোপী সাহস করিয়া বলিল, “চুরি করতে কি আপনাদের চোখের সামনে দিয়ে যাব ?” তথনকার মত ব্যাপার চুকিয়া গেল। গোপীরা যখন ঠাকুর লইয়া ফিরিল তখন রাত্রি গভীর, সেটলমেণ্টের তাবু, বড়রাণীর মহল, সব ঘুমে নিস্তব্ধ। শুধু শঙ্কর ও চন্দ্ৰজ্যোতি জাগিয়া। গোপীদের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী সেই রাত্রে গিয়া কুলুঙ্গি হইতে একটু দূরে একটা গৰ্ত্তে অন্ত কয়েকখানা পাথরের সঙ্গে মিশাইয় পাথরের মহাকালকে রাখিয়া আসিল । কাল ভোরে গোপীই পুরোহিতকে ডাকিয়া আনিয়া কুলুঙ্গির ভিতর যথাস্থানে ঠাকুর রাখিবে ও চন্দ্রজ্যোতি আসিয়া প্রথম পূজা দিবে। সারারাত চন্দ্রজ্যোতির ভয়ে ঘুম হয় নাই। কি জানি যদি স্বরেশ্বরী তাহার ঠাকুর লুকাইয়া ফেলে। তাহা হইলে তাহার এত চেষ্টা সব বৃথা যাইবে। ভয়ে ভাবনায় রাত্রি জাগিয়৷ ভোরের হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে অল্প একটু ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল । স্বৰ্য্যের আলে। ঘরে আসিয়া পড়িতেই শঙ্কর তাহাকে ঠেলিয়া তুলিয়া দিল, “ওঠ ওঠ, আজ বেলা ক’রে উঠে সব কাজ পণ্ড ক'রে দিও না।” চন্দ্রজ্যোতি ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিয়া দেখিল, সারা আকাশ রৌদ্রে ঝলমল্‌ করিয়া উঠিয়াছে। তাড়াতাড়ি কোনও রকমে স্নান সারিয়া পট্টবস্ত্র পরিয়া সে পুকুরপাড়ে চলিল, ঠাকুরকে যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিত করিতে। ইহারই মধ্যে সেখানে গোপীনাথ ও পুরোহিত-ঠাকুর সদলে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। তাহদের বিষন্ন ও উদ্বিগ্ন দৃষ্টি দেখিয়াই চন্দ্রজ্যোতি বুঝিতে পারিল, যে, কিছু একটা অঘটন ঘটিয়া গিয়াছে। চন্দ্রজ্যোতি ব্যগ্র হইয়া কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি হয়েছে গোপী, তোমরা অমন ক'রে দাড়িয়ে কেন ?” গোপী জোড়হাত করিয়া দাড়াইয়া বলিল, “আজ্ঞে, ঠাকুর কোথায় লুকালেন, তাকে ত দেখতে পাচ্ছি না। সব জায়গায় দেখলাম, কোথাও নাই, এ তার লীলাখেলা, কিছু বুঝতে পাচ্ছি না।” চন্দ্ৰজ্যোতি দপ করিয়া আগুনের মত জলিয়া উঠিল,