পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ - - RNరి$ দুটাইয় পড়ে। জিলোচন তখন ঘরের মধ্য হইতে হাকিতে থাকে—এই!—এইও ! হঠাৎ বা চীৎকার করিয়া গালি দিয়া ওঠে—ওরে হারামজাদারা, ঘুমুতে দিবি নে আজ ? জলতরঙ্গ থামে না। তার পর বড় অসন্থ হইয়া উঠিলে লাঠি লইয়া বাহির হয়, উন্মাদের মত চরের উপর জলে জলে তাড়া করিয়া বেড়ায়, যেদিকে জলোচ্ছ্বাস প্রবল হয় লাঠি লইয় ছুটে, আবার বা হিহি করিয়া হাসিতে হাসিতে লাঠি ফেলিয়৷ বালুর উপর একেবারে লুটাইয় পড়ে। হয়ত বা এমনি সময়ে দূরে মানুষের কথাবার্তা শোনা যায়, মাছের নৌক সব আসিতেছে, কখনও বা ঝুপঝাপ দাড় পড়ে, কখনও ব৷ গুণ টানিয়া আনায় গুণটানা মানুষের হাতে হেরিকেমের আলো জুলিয়া দুলিয়া চলে । ত্রিলোচন অমনি ভালমানুষ হুইয়া দাওয়ায় আসিয়া ওঠে, হুকা-কলিকা লইয়া তামাক সাজিতে বসে, আপন মনে গজ-গজ করে--চিরটা কাল এক ভাবে গেল। গুয়ে স্বস্তি নেই বেটাদের জালায়। দুপুর রাতেও জড়াজড়ি ক’রে মরছে, ঘুম নেই একটু চোখে ? চুপ করতে পারিস নে, ওরে হারামজাদার ? নৌকাগুলি সরিয়া গেলে, আবার শাসাইয়৷ চীৎকার করিয় ওঠে—র’—জবা করছি। কালই যাব ঐ রূপগঞ্জের দিকে। বলছিল ত নেত্য মোড়ল—জায়গা দিচ্ছি, এস, সব বাধো। যেমন কুকুর তেমনি মুগুর হয় তা হ’লে । দেখি তথন কাকে জালাতন করিস। কেঁদে পথ পাবি নে –হ্যা । জোরে জোরে টানিয়া তামাক শেষ করিয়া বিরক্ত মুখে সবশেষে বুড় গুইয়া পড়ে। কিন্তু ঘুম আসে না । হঠাৎ একদিন সঞ্চালবেল এক দল পশ্চিমী কুলী অনেক পুড়ি কোদাল লইয়া আসিল ; সঙ্গে নায়েব-মশায় আসিয়াছেন । অনেক দিনের পর দেখা, ব্রাহ্মণ মানুষ, ত্রিলোচন গিয়া সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিল। নীয়েব বলিলেন-—খবর ভাল, ত্ৰিলোচন ? তীরে আরে একি চেহারা হয়েছে তোমার ? আবার এইখানে এসে কুঁড়ে বেঁধেছ—বলি, বাড়ির সঙ্গে বচস হয়েছে বুঝি ? যিলোচন কাদ-কাদ হইয়া বলিল-খেতে পাচ্ছি না, নায়েব-ম্শায় । নায়েবের মনে বড় লাগিল। মনে ত আছে, এই মাতব্বব প্রজার কি প্রতাপ ছিল একদিন ! সাত্বনা দিয়া বলিলেন— আর দুঃখ থাকবে না, বাপু কৰ্ত্তবাবুকে জপিয়ে জপিয়ে রাজী করেছি। মঞ্জুর হয়ে গেছে, খাল বাধা হয়ে লক-গেট হবে এইখানে। আজকে ভাটা কখন রে ? হিসাব করিয়া দেখা গেল, ভাট পড়িতে প্রায় সন্ধ্যা হইয়। যাইবে । নায়েব সঙ্গের লোকজনকে হুকুম দিলেন—তবে বঁাশগুলো এই এখানে এনে জমায়েত কর। আজকের দিনটে খোটা পুততেই যাবে। মাটি পড়বে কালকের থেকে। এদিকে নদীর পথে চুণ-স্বরকী ও লোহালক্কড় বোঝাই নৌকা আসিয়া জমিতে লাগিল। নৌকা খালের মধ্যে আনিয়া বাবলাগাছে বাধা হইল। মাটির বাধ দেওয়া হইয়া গেলে এসব তার পর লাগিবে । নায়েব বলিলেন—আর ভাবনা কি, ত্রিলোচন। যার যে জমি ছিল, সব জরীপ আলবন্দী ক'রে দেওয়া হবে। এক ছটাক এদিক-ওদিক হবে না। বাবু আমাদের সদাশিব । তিনি একেবারে লিখিত হুকুম দিয়ে দিয়েছেন। এই ধর-- পাচ-সাত মাস, তার পর লেগে যাও চাষবাসে। চোখের উপর সে নিরশ্ন, ভিখারী হইয়া গেল, একবাড়ি মানুষ একে একে সব মরিয়া গেল, ত্ৰিলোচন নির্জনে কি করিত কে জানে, কিন্তু মানুষের সামনে কেহ তার চোখে এক ফোটা জল দেখে নাই। এতদিন পরে কি হইল— নায়েবের সামনে একেবারে সে ডুকরাইয়া কাদিয়া উঠিল। বলিল—-চাষ করব নায়েব-মশায়—থাবে কে ? রাকুসী গাঙ জমি ফিরিয়ে দেবে, মানুষ ত ফিরিয়ে দেবে না আর— একটা-একটা করিয়া সমস্ত কাহিনী সে বলিয়া গেল । নায়েব তামাক খাইতে থাইতে নিশ্বাস ফলিলেন । বলিলেন—- ভগবানের মার, তুমি আমি করব কি? যাই হোক—কুছ পরোয় নেই। বয়সটা আর কি তোমার ! চল্লিশ পেরোয় নি—বিয়ে-থাওয়া কর আবার । আমি তোমার বিয়ে দিয়ে দেব ; টাকা না থাকে, বিঘে দুই জমি ছেড়ে দিও.. হু হু ক’রে জমির দাম বেড়ে যাবে এখন— ত্রিলোচন ই না কিছু বলিল না। কাছারী-ঘরের খড় উড়িয়া গিয়াছে, বেড়া খসাইয়া লোকে ভাঙিয়া লইয়া গিয়াছে, নূতন ঘর না-বাধা পৰ্য্যস্ত কাছারীতে গিয়া দাড়াইবার