পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇN9R প্রবাসী SNలి8R উপায় নাই। ত্রিলোচনের কথায় নায়েব সেই বেলাটা তার ভয়ের কথা ছিল বটে। কোটালে সব মাটি ভাসিয়ে নিয়ে ঘরের মধ্যে রান্নাবান্না করিলেন। বিকালে তিনি রূপগঞ্জের যেত। তোমার জন্যেই হ’ল ত্রিলোচন। দিন-রাত খেটেছ, এক কুটুম্বের বাড়ি চলিলেন, রাত্রিটা সেখানে কাটাইবেন। বলিলেন—এক কাজ কর, ত্ৰিলোচন। কাছারী-টাছারী হবার ত দেরি আছে—যে কদিন না হচ্ছে, আমায় ছুটেছুটি করতে হবে এই রকম। দু-বেটী বরকন্দাজ এনেছি, কিছু বোঝে না, নোনা দেশে তারা এই প্রথম এল । কাজকৰ্ম্ম সমস্ত তুমি দেখাশুনে কর। আমি এ-সম্বন্ধে ব্যবস্থা করব । কৃতার্থ হইয় রিলোচন ঘাড় নাড়িল । এখন গাঙে টন বেশী নাই। ত্রিলোচন শুইয়া শুইয়া অনেক দিনের পর আশার স্বপ্ন দেখিতে লাগিল । নাকে কেমন কেমন যেন ধানের জোলে গন্ধ আসে । ঘরের পাশে বালুচরের উপরে নৈশবাতাসে ধানের পাতার শিরশির শব্দ ভাসিয়া আসে, শুষ্টয়া শুইয়া দৃষ্টির সম্মুখে দেখে ঘননীল ধানের সমুদ্র আবার দিগন্ত অবধি চলিয়াছে। ঠকঠক করিয়া তার মধ্য দিয়া তীর-গতিতে তালের ডোঙা চুটিয়াছে, কত সাপলা ফুটিয়াছে, কত কলমীফুল শোলার ঝাড়—আলের উপরে ঝির ঝির করিয়া জল যায়, খলসে পুটি সব খলবল করিয়া উজাইয় উঠে । ...উঠান ঢাকিয় ফেলিয়া আবার ঘর উঠিয়াছে, গোল উঠিয়াছে ; রূপার খাডু পায়ে বউ এঘর-ওঘর করিতেছে, ন-পিসি, রাণী, তারিণী, ফুলি যে যেখানে ছিল সব আসিয়াছে, ছেলেপিলের চীংকারে গণ্ডগোলে ঘুমাইবার আর জে৷ থাকিল না ; লাঠি-হাতে একলাফে ত্রিলোচন ঘরের দাওয়ায় নামিয়া চেচাইয়া উঠিল—ওরে হারামজাদারা। সব হারামজাদারা ভয়ে পলাইয়া গিয়াছে, নিঃশব্দ, নির্জন, খালের ধারে অপরূপ বিজনতায় শেযরাত্রি থমৃ থম্ করিতেছে । জলেরও টান নাই, কেমন যেন চুপচাপ ভাব। ত্ৰিলোচন হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল—বডড যে জালাতন ক’রে মারিস, ওরে হারামজাদারা। এখনও হয়েছে কি ! বাধ আগে হয়ে যাক, তখন টের পাবি— কঁচা বাধ শেষ হইতে হইতে আবার কোটাল আসিয়া গেল। বিকালবেলা দেখিয়া শুনিয়া নায়েব খুশী মুখে রায় দিয়া গেলেন—না, আর ভয় নেই। কাজ বাকী থাকলে লোক খাটিয়েছ, তবেই হয়েছে। নিজের একটু ইয়ে না থাকলে, ভাড়াটে লোক দিয়ে হয় এ-সমস্ত, বাবুকে আমি লিখে দেব তোমার কথা । বঁধে নদীর একেবারে মোহনার কাছে। পূর্ণিমায় সেদিন নদী বড় উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল। সন্ধ্যাবেল ত্রিলোচন নূতন বঁধের উপর দিয়া ঘরে ফিরিতেছিল, বাধের গায়ে জলতরঙ্গ তখন অপরূপ নৃত্য আরম্ভ করিয়াছে। লক্ষ লক্ষ—কোটি কোটি সাগরপারের শিশু—জীবস্ত,প্রাণচঞ্চল—হাসিয়ানাচিয়া কতক্ষপে তারা মন ভুলাইতে চায়। ত্ৰিলোচন অন্যমনস্ক হইয়া চলিয়াছিল, তরঙ্গ আসিয়া হঠাৎ পা ভিজাইয়া পরনের কাপড় ভিজাইয় দিয়া খলবল করিয়া পলাইয় গেল। ত্রিলোচন ঘাড় বাকাইয় দেখিয়া হাসিতে হাসিতে বলিতে লাগিল—কেমন রে ? কেমন ? কেমন জব্দ এবার বল দিকি, ওরে হারামজাদারা ! সে রাত্রে ত্ৰিলোচনের ঘুম নাই। রাত্রি বাড়িতে লাগিল, চাদ মাথার উপরে, চারিদিকে অতল নিঃশব্দত, সেক্ট অনেক দিন আগেকার পিসির বাড়ির মত। পৃথিবীর বুকের শেষ স্পন্দনটুকুও যেন এ রাত্রে থামিয়া গিয়াছে। তার মনে কিন্তু আনন্দের আর পার নাই ; আনন্দভরা মনে বার-বার ভাবিতেছিল—আর কি, আর ত কোন অসুবিধা রহিল না। ধীনে ধানে ক্ষেত ভৰ্ত্তি, গোলা ভৰ্ত্তি ; মানুষে মামুষে বাড়ি ভৰ্ত্তি; আর ভাবনা কি ?...তার পর উঠিয়া তামাক সাজিয়ালইল, ফড় ফর্ড করিয়া তামাক খাইতে লাগিল, সে তামাক শেষ হইয়া গেল। পায়ে পায়ে সে খালের ধারে আসিল । হে। হো করিয়া হাসিয়া গাঙ-পার অবধি শুনাইয়া গুনাইয়া সে চেচাইয়া বলিল—ওরে হারামজাদার দল, বড় যে জালিয়ে মারতিস! থাক আটকা পড়ে ঐদিকে । ঠাও হাওয়ায় শেষে শীত ধরিয়া যায়। ঘরে আসিয় কাথা মুড়ি দিয়া পড়িল। মানুষ-জন নাই, হাওয়া নাই, জলের কলধ্বনি নাই, এমনি রাত্রে ত ঘুমের স্ববিধা। কিন্তু ঘুম আঙ্গ কোথায় উড়িয়া গিয়াছে। সমস্ত রাত্রি ত্রিলোচন একবার ঘর —একবার খালধার-এই করিয়া বেড়াইতে লাগিল। নিশিপাওয়া লোকের মত চাদের আলোয় খালের ধার দিয়া অনেক দূর অবধি চলিয়া যায়, আৰার ফিরিয়া আসে।