পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ー、8の প্রবাসী SN98R দিল। বুদ্ধট বসিতে একটু ইতস্তত করিতেছিল; তাহার সঙ্গী এক জন বলিল, “বসি চল, দত্তোব৷ ” আমার বন্ধু আমার দিকে চাহিয়া একটু হাসিয়া বলিল, “গল্পটা নিশ্চয়ই লম্বা-চওড়া হবে ; শেষ পৰ্য্যস্ত ধৈৰ্য্য থাকবে ত, মিষ্টার চক্রবর্তী ?” আমি আশ্বাস দিলে বন্ধু লোকটিকে বলিল, “দত্তোব, তুমি মিথ্যে বললেই আমরা মিথ্যে বলে মেনে নেব ? অামাদের রামভাউয়ের মেয়ের কথা আগাগোড়া শোনাও, তাহলে বুঝতে পারব কোনটা ঠিক ” লোকটি আমাদিগকে আপলের কোর্ট মনে করিয়াছিল কি না জানি না। তবে একটা নিখুঁত সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করিবার আকুল ইচ্ছা তাহার প্রতি কথায় ব্যক্ত হইতেছিল। সে গভীর আগ্রহে নিজেদের কাহিনী বলিয়। যাইতে লাগিল । এগার ক্রোশ দূরে তাহাদের গ্রাম বটগাঁও। গাঁয়ে ব্রাহ্মণ আছে, মারাঠা আছে, শিম্পী ( দজ্জি ) আছে, আর লোহারেরা আছে, একটা মস্ত পাড়া লোহারদের, গায়ের এক পাশে । রামভউ সে জাতের নেতা। সকলে তাহাকে শুধু মানে না, আন্তরিক বিশ্বাস করে। রামভাউয়ের তিল কুড়ি বৎসরের জীবনের মধ্যে এক দিনের তরেও কেহ বলিতে পরিবে না যে সে কাহাকেও প্রবঞ্চিত করিয়াছে । তাহার যেমন কথা তেমন কাজ । একবার দত্তোবাকে ডাকিয় বলিল, “দত্ত পাণ্ডুরং তোকে খারাপ লোহা দিয়েছে। এবার থেকে কোলাপুর গিয়ে নিজের লোহা কিনে আনব।” রাম ভাউ বাইশ মাইল নিজের বলদের গাড়ী স্থাকাইয়া গেল, পথে গাছতলায় দুই জায়গায় রাত্রি কাটাইল, পাচ দিনের দিনে লোহা লইয়া বাড়ি ফিরিল । দত্তোবার দ্বারের গোড়ায় লোহার ঢিবি দেখিয়া লোকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, “এসব কোথেকে এল ?” দত্তোব সগৰ্ব্বে বলিল, “রামভাউ এনেছে, কোলাপুর থেকে ।” রামভাউ জাতভাইদের বলিত, “আমন করে জলের দরে মাল বেচিস নে, এক বাজারে. না-হয়, আর এক বাজারে কাটুবে ।” একবার সে গ্রামের তিন জন লোহারকে লইয়া চল্লিশ ক্রেশশ পথ মোটরা মাথায় করিয়া কোকনে গিয়াছিল ; সেখানে প্রত্যেকে এক মাসে তিন মাসের রোজগার করিয়া আসিয়াছিল। রামভাউ ভয়ে বা লাভের আশায় কোনও দিন কাহারও কাজ নষ্ট করে নাই। একবার গায়ের ফুলকণী আসিয়া বলিল, “রামভাউ, আমাদের ঘরের দরজা লাগাতে হবে, কাল সকালের মধ্যে হাসকল চাই।” রামভাউ বলিল, “দাদা, তা হচ্ছে না। দামু পাটিলের লাঙল করছি, পরশু তা দিতে হবে, সে কাজ শেষ না ক'রে অন্ত কাজে হাত দিতে পারব না।” কুলকণী চটিয়া গেল। বলিল, “তোর কাছে পাটিল হ’ল বড় ? দেখাচ্ছি, রোসো ।” রামভাউ বলিল, “তা দেখাবে রাওসাহেব, তবে পাটিলের কাজ হাতে নিয়েছি তা আগে শেষ করতেই হবে।” কোনমতেই কুলকণী তাহাকে টলাইতে পারিল না। রামভাউয়ের বরাতটা মোটেই ভাল ছিল না। প্রথম স্ত্রী অকালে মারা গেল। দ্বিতীয় বার আলতার গণু যাদবের বেটীকে বিবাহ করিল। যাদবের বেটী যখন স্বামীর ঘর করিতে আসিল, তখন রামভাউয়ের চুলে পাক ধরিয়াছে। যাদবের বেটী রূপে কামারপল্লী আলো করিয়া দিল । এমন মুন্দর বে। এ জাতের মধ্যে কমই আসিয়াছে। কিন্তু রামভাউয়ের কৰ্ম্মের ফলে তিন বছরের একটি মেয়ে রাথিয় তাহার স্ত্রী প্লেগে মারা গেল । সমস্ত "ভাইবন্ধু” মিলিয়া যাদবের বেটীকে দাহ করিয়৷ আসিল । যাহাঁদের চোখে কেহ কোনদিন জল দেখে নাই তাহারাও সেদিন কাদিল—রামভাউ আর তাহার ছোট মেয়ে ধোওঁীর জন্য। লোকে বলে জাকালো নামের প্রতি দেবতার দৃষ্টি যায়, তাই রামভাউ মেয়ের নাম রাখিয়াছে, ‘ধোওঁী'—পাথরের টুকরা ! রামভাউয়ের পীবিয়োগ হইলে তাহার সংসার আর তাহার ছোট মেয়েটিকে দেখিতে আসিল তাহার পচাশি বছরের মাসী-কুণ্ডু । কুণ্ডুমাসী ছিল—এখনও সে বঁাচিয় আছে—পুরানো অশ্বখগাছের মত। পায়ের আঙুলগুলি ঠিক যেন শিকড়। গায়ের চামড়া ঠিক যেন গাছের ছাল । মাথাভরা উস্কযুদ্ধ চুল, শাদা হইয়া তার পরে ধোয়াটে রং ধরিয়াছে। কুণ্ডুমালী চার কুড়ি পাঁচ বছরের মধ্যে চার কুড়ি পাচ বার স্নান করিয়াছে কিনা সন্দেহ । কিন্তু সে-কথা বলিলে সে বাঘিনীর মত তাড়া করিয়া আসিত । কুণ্ডুমাসীর গায়ের হাড় কয়খানা ছিল অক্ষয় ; সে রোজ ইদারা হইতে রামভউয়ের বাড়ির জন্ত বড় বড় ঘড়ায় করিয়া