পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণয়ণ রামভাউন্নের মেন্নে R8$ জল ভরিয়া আনিত । রামভাউয়ের জন্য ভোরে চারটায় উঠিয়া জোয়ারীর রুটি তৈরি করিত। আর সারাদিন ধোওঁীকে লইয খেলা করিত। সেই পচাশি বছরের বুড়ী আর তিন বছরের নাতনীর খেলা দেখিতে লোক দাড়াইয়া যাইত। ধোওঁী ছিল ঠিক যেন নূতন ভূটার শীষ, কোমল ডগ ডগে। রামভাউ তাহার জন্য কোলাপুর হইতে ঝুটা রেশমের অতি চকচকে সবুজ কাপড় আনিয়া দিয়াছিল, গজানন শিল্পী তাহা দিয়া তাহার জন্য একজোড়া মুন্দর ঝগা-পোলকা ( ঘাঘরা ও ব্লাউজ ) তৈরি করিয়াছিল। ধোওঁী তাহা পরিয়া যখন কুণ্ডুমালীর কোলে বসিত, তখন মনে হইত যেন কাঠকয়লার ঢিপির উপর বর্ষার জল পড়িয়া একটা দোপাটি গাছ গজাইয়া ফুলে ফুলে ভরিয়া আছে। ধোওঁী যখন ধীরে ধীরে বাড়িয়া উঠিল তখন কামারপাড়ার লোকেরা অবাক হইয়া দেখিল, যাদবের বেটর যে রূপ আগুনে পোড়াইয় দিয়া আসিয়াছিল, তাহ আবার ধীরে ধীরে মেয়ের মধ্যে ফুটিয়া বাহির হইতেছে! পাড়ার লোকেরা দেখিত এক-এক দিন কুণ্ডুমাসী ঘরের দাওয়ায় বসিয়া দীর্ঘকাল ধরিয়া কাপা হাতে ধোওঁীর কালে ঝাঁকড়া ঝাকড় চুলগুলিতে তেল মাথাইয়৷ দিতেছে। তেল মাখানো হইয়া গেলে বুড়ী একখানা পুরানো কাঠের চিরুণী দিয়া চুল আঁচড়াইয়া বেণী বাধিয়া তাহার সঙ্গে কাপড়ের ফুল ঝুলাইয়া দিত। কপালে ছোট্ট সিদ্ধরের টিপ কাটিত । গায়ের ঝগা-পোল্কা ছাড়াইয়া ছোট লাল একটি শাড়ী পরাইয়া দিত। শাড়ীর উপর রূপার একটি চন্দ্রহার কোমরবন্ধের মত শক্ত করিয়া আঁটিয়া ধোওঁী বাপের সঙ্গে মাঠে কাজ করিতে ঘাইত । সকালে সে একটা ছোট্ট লাঠি হাতে লইয়া মোষ তাড় করিত, আর মোষের বাছুরেরই মত আনন্দে মাঠের উপর ছুটিয়া বেড়াইত। মোষের বাচ্চা ধোওঁীকে দৌড়ে হার মানাইত সত্য, কিন্তু ধোওঁী যখন আনন্দে হাততালি দিয়া নাচিতে থাকিত আর তাহার মুখ হাসিতে ভরিয়া উঠিত, তখন দেখা বাইত জানোয়ারে আর মানুষে কি প্রভেদ! জানোয়ারের শক্তি থাকিতে পারে, কিন্তু সে শিশু ও নারীমুখের মধুর ইসি পাইবে কোথায় ? - একদিন সন্ধ্যায় রামভাউ দত্তোবাকে ডাকিয়া বলিল, “দত্ত এবার ধোওঁীর বিয়ের খোজ দেখতে হয়।” দত্তোব অবাক হইয়া বলিল, “এখনই ? মেয়ের ত দশ হয় নি।” রামভাউ বলিল, “বয়স দেখে কি হবে দত্তোবা ? ঘরে মা নেই। মানুষের জীবনে বিশ্বাস কি ? তাকে বিয়ে নাদেওয়া পৰ্য্যন্ত আমার মনে শাস্তি নেই।” বহু খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে ধোওঁীর বর স্থির হইল, নয় ক্রোশ দূরে নিসাঁ গ্রামে। জমি-জারাৎ আছে, বাপের কারবার আছে, ছয় ভাইয়ের ভাই। বিবাহের দিন ঠিক করা হইল। রামভাউ খুব ঘটা করিয়া মেয়ের বিবাহ দিল। তের টাকা খরচ করিয়া পাঁচ ক্রোশ দূর হইতে ঢাক আর সানাইয়ের বাদ্য আনিয়াছিল। লোকে এখনও সে বাজনার কথা ভুলিতে পারে নাই। " দেবতা ভাল লোককে কষ্ট দিতে আনন্দ পায়। ধোওঁীর বিবাহের পর স্বামীর বাড়ি যাইতে তখনও বহু দেরি ; এক দিন খবর আসিল, মারুতী কৰ্ম্মকারের তৃতীয় ছেলে সখারাম, রামভউয়ের জামাই, আগুনে পা পুড়াইয়া ফেলিয়াছে। একটা উত্তপ্ত লোহা আগুন হইতে উঠাইয়া আনিবার সময় পায়ের উপর পড়িয়া গিয়াছিল। গায়ের কথামত নানা রকম ঔষধ দেওয়া হইল, কিন্তু ঘা সারিল না, বরং ক্রমশঃ খারাপ হইতে লাগিল । আর এক দিন খবর আসিল ঘা দূষিত হইয়াছে। রামভাউ বলিল, “দত্তোব, এবার যেতে হয়। খবরটা আমার কাছে ভাল লাগছে না।” রামভাউয়ের মধ্যে কেমন একটা শক্তি ছিল, কোন বিষয় ঘটবার পূৰ্ব্বেই সে তাহার একটা আভাস পাইত। ধোওঁীর মা মরিবার পূর্বেও এমনই হইয়াছিল। তখন যাদবের বেটী মুস্থ, সবল। এক দিন রামভাউ বলিল, “দত্তোব, হরিবার ছেলেট যে মরেছে, তাতে আমার সন্দেহ হচ্ছে । হাতপায়ের জোড়ায় ‘গাট উঠেছিল । ও নিশ্চয় পিলেগ । আমার মনে হচ্ছে এবার আমাদের গায়ে পিলেগ হবে। কে যায় কে থাকে দেবতা জানে!” দত্তোবা মুহূর্বের তরেও ভাবে নাই যে, রামভাউয়ের গৃহেই সে প্লেগের আবির্ভাব হইবে। - পরদিন ভোরে রামভাউ ও দত্তোব দু-জনে কাপড়ে