পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ প্রবাসী ১৩৪২ একটি আসিয়া জোটে । কিন্তু যাবার বেলায় কেহ কাহাকেও ডাকিয়া যাওয়ার সময় পায় না । তপোনাথ চাকরকে এক গ্লাস জল দিবার জন্য ডাকিল । এক মিনিটের মধ্যে সবিতা এক গ্লাস জল আনিয়া তাহার সম্মুখে রাখিল । যেন কত কাল পরে দেখিতেছে এমনি অবাক হইয়া তপোনাথ একদুষ্টে তাহাকে দেখিতে লাগিল । তার পর ধীরে ধীরে জলের গ্লাস তুলিয়া লইল । লজ্জিতভাবে হাসিয়া সবিতা বলিল ---আমার কিন্তু দাড়াবার ফুরসং নেই। চায়ের জল হয়ে গেছে। দু-খানা লুচি ভেজে নিয়েই আসছি। পিছু ডাকিয় তপোনাথ বলিল -লুচি থাক সবিতা, শুধু এক বাটি চা হ’লেই হবে। পিছু ফিরিয়া হাসিয়া সবিত বলিল--রাগ করেছ ? —ন, রাগ নয় । ক্ষিধে নেই । - রোজ থাকে, আজ নেই ? সবিত কাছে সরিয়া আসিল । মানমুখে খলিল – আমার ওপর রাগ ক’রো না । তোমার কাছে আসতে আমার কি সত্যিই হচ্ছে হয় না ? কিন্তু কত যে বাধা সে ত জান । —তোমার ওপর রাগ করেছি এ কথা ত বলি নি । —ন, পল নি । তুমি যা চাপা, কোন দিন কিছু বলবে না। কিন্তু আমি কি কিছু বুঝি না ? - বোঝ ? তপোনাথের মন ধীরে ধীরে নরম হইতেছিল । তথনঙ্গ নিজেকে সামলাইয়া লইয়া বলিল --চা দেবে না ? জল যে ফুটে শেষ হ’তে চলল । محبيبي * সবিতা আর কিছু বলিল না। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল । সে দীর্ঘশ্বাস তপোনাথের বুকে বিধিল নিশ্চয়। তবু তাহাকে ফিরিয়া ডাকিল না। নিৰ্ব্বিকার ভাবে রেল-লাইনের দিকে চাহিয়৷ বসিয়া রহিল । অল্প দিনের মধ্যেহ দত্ত-পরিবারের সঙ্গে তপোনাথের যথেষ্ট ঘনিষ্ঠত হইল । দন্তসাহেব নিজে মস্ত পণ্ডিত লোক, এবং এত বড় পণ্ডিতলোকের যাহা হয়, কোনটা তাহার নিজের মত আর কোনটা নয় বুঝিবার কিছুমাত্র উপায় নাই। যে-বিষয়েই আলোচনা উঠক, বিরুদ্ধ পক্ষে তাহার যথেষ্ট বলিবার থাকে। সাধারণত দাড়ায় তপোনাথ ও অনুভ এক দিকে । তাহাদের বয়স কম, সুতরাং মতামত সব বিষয়েই উগ্র এবং স্পষ্ট ! অন্য পক্ষে দত্তসাহেব এক। র্তাহার কথা বুঝিতে ইহাদের যথেষ্ট ক্লেশ হয়। কারণ কিছুই তিনি স্পষ্ট করিয়া বলেন না। তর্ক করার মত বেড়ানও দত্তসাহেবের আর একটা রোগ। কিছু দূরেই একটা ছোট পাহাড় আছে। তাহার পাদদেশে এক ছোট শিলাখণ্ডের উপর বৈকালিক আসর বসে I আসর জমাইবার পক্ষে স্থানটি মনোরম সন্দেহ নাই । পাশে শালবন দূৰ্ব দিগন্তে গিয়া শেষ হইয়াছে। পিছনে পাহাড়ের পটভূমিকা। ওপাশে যতদূর দেখা যায় লাল মাটি তরঙ্গের পর তরঙ্গ তুলিয়া অস্তগামী স্বঘ্যের আভায় টক্‌ টক্‌ করিতেছে । মাঝে মাঝে এক একটা হাড়। মহুয়া গাছ নিঃসঙ্গ দাড়াইয়া আছে। দ্যাড়, কিন্তু তাহার ডালে ডালে এত টিয়াপাপী আসিয়া বিশ্রাম করিতেছে ধে, সে এক অপূৰ্ব্ব দৃপ্ত । _ _ কয় দিন ইহাদের সঙ্গমুখ উপভোগ করিয়া তপোনাথ ইহাদের ভক্ত হইয়া উঠিল। সকালে ও বিকালে ইহাদের আসর আফিমের নেশার মত তাহাকে টানে । অধিকাংশ দিন বাড়িতে চা-পানেরও তর সহে না । তার পূর্বেই বাহির হইয় পড়ে । সবিতাকে লইয়াও আর সময়ে-অসময়ে খুলমুড়ি করিবার সময় পায় না । মায়ের কাছে রান্না শিখিবার জন্য তাঁহাকে বাধাহীন অবকাশ দিয়াছে। শহরের সঙ্গন্ধে কিছু অভিজ্ঞতা থাকিলেও তপোনাথ আসলে পল্লীগ্রামের ছেলে । তাহদের দেশের বৃদ্ধের যে-বয়সে সৰ্ব্বাঙ্গে তিলক কাটিয়া এবং গায়ে নামাবলী জড়াইয়া অধিকাংশ সময় পরকালের চিস্ত এবং বাকী সময় মামল-মোকদ্দমা পরিচালনা করে, সে-বয়সে দত্তসাহেবের ইহলোক-সংক্রাস্ত সকল প্রকার সমস্তায় এত উৎসাহ দেখিয় বিস্মিত হয়। আর অনুভ যেন প্রাণশক্তির উষ্ণপ্রস্রবণ। সেদিন একটা চমৎকার অজানা ফুল দেখিয় যে কাণ্ড করিল, সে উৎসাহ শিশুর মধ্যেও দেখা যায় না। এ বয়সে সাধারণ মেয়ে ঘরণী-গৃহিণী ছেলেপুলের মা হইয়া রীতিমত স্কুল-মাষ্টার বনিয়া যায়। কিন্তু অন্সভার কলহাস্থের ধেন শেষ নাই। সে হাসি শুনিলেও মানুষের বয়স পাচ বৎসর কমিয়া যায়।