পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনায়ন অগ্রহণয়ণ ► ግ0: উমার স্বন্দর মুখের দিকে অরুণ চায়, এই অনুপম বেশী ক্ষণ এ-সব ভাবিলে চলে না । ইংরেজীর নোট মুখে কি যাদুমন্ত্র আছে। মুখস্থ করিতে হয়। অরুণ আবেগের সহিত উত্তর দেয়, নিশ্চয় খাব, তুমি খেয়েছ ? —একবার খেয়েছি, তবে তোমার সঙ্গে আর একবার খেতে আপত্তি নেই। চায়ের সঙ্গে নানা খাবার আসে। উমাকেও খাইতে হয়। উমা বলে, আশ্চর্ষ্যি, তোমার সঙ্গে চ খেতে বসলে, আমার ভয়ানক খিদে পায় । —অর্থাৎ সন্ধ্যেবেলায় তোমার খিদে পায় । বেশী ক’রে । —ই, এখন বেশী ক'রে খেলে রাতে পেতে পারব না, তখন মা বকবিকি করবেন। —ত এখনই রাতের খাবার খেলে পার । —তা আর হচ্ছে কই । সন্ধ্যাটি অরুণের নিকট বড় মধুর মনে হয়। গ্রীষ্মের রাতে ছোট ঘরে পড়া অসম্ভব। বাহিরের ধারান্দায় উমা পড়ার বন্দোবস্ত করে। অরুণ নিঃশব্দে বিদায় লইয়া চলিয়া যায়। অরুণ যে কখন নীরবে চলিয়া যায় উমা বুঝিতেও পারে না । কোনদিন উমা বলে, অরুণ, ব’স, আজ পড়তে মন লাগছে না, একটু গল্প করা যাক । —না বাপু, শেষকালে স্কলারশিপ কম টাকার হ'লে আমাকে দোষ দেবে । —খুব ঠাট্টা যে। তোমার শরীর কেমন ? —কেন বেশ ভালই ত । অরুণ বেশী ক্ষণ বসে না । সে যেন স্থির হইয় বেশী ক্ষণ বসিতে পারে না ; তাহার দেহে মনে এ কি চাঞ্চল্য। তাহার সহজ স্বাভাবিক শাস্তভুবি কোথায় গেল ? অরুশ নীরবে চলিয়া যায়। তাহার জন্য উমার বুক কেমন টনটন করিয় ওঠে। কেন অরুণ এত বিমর্ষ ? তাহার কিসের বেদনা, অমুখের পর তাহার চোখ বড় কালো দেখায়। ওই গভীর কালো টানা চোখ দুইটিতে কোন অজানা জীবনের কাতরতা ভরা। Bis 8 খাওয়ার পর উমা ঘরে পড়িতে বসে। ভয়ানক ঘুম পায়। চেয়ারে সোজা হইয়া বসে। চোখে ঘুম ভরিয়া আসে। কিন্তু মজা এই, বিছানাতে শুইলে ঘুম কোথায় চলিয়৷ যায়। কত অসম্ভব আশা, অস্তুত কল্পনা, আজগুবি চিন্ত, বাতাসে পর্দাটা কঁপে, জানালার গরাদের মধ্য দিয়া দেখা যায় সপ্তমীর চন্দ্র শাণিত রক্ত তরবারির মত। উমা ভাবে, বড় হইলে সে কি করিবে ; বি-এ পৰ্য্যন্ত ত পড়িবে, তার পর ? কোন স্বাধীন জীবিকা অথবা সেই সনাতন বিবাহ ? হয়ত বিবাহ করিবে, কিন্তু মায়ের মত সমস্ত দিন ড্রাজারি করিবে না। বিবাহ করিবে কিনা, পরে ঠিক করিলেই হইবে। এখন সে কিছুতেই বিবাহ করিতেছে না। One must see life. দেশভ্রমণ করিতে ইচ্ছা করে। সে যদি অক্সফোর্ডে বা প্যারিসে গিয়া পড়িতে পারিত ! সে ইউরোপ দেখিবে, আমেরিকা দেখিবে, সাউথ সি'র দ্বীপগুলিতে ঘুরিবে। রূপার্ট ক্রকের কবিতাটি বড় স্বন্দর। যদি কোন বড় য়্যাভিয়েটারের সহিত তাহার বিবাহ হয়, এরোপ্লেনে করিয়া তাহারা দুজনে পৃথিবী পরিভ্রমণ করে। সে কি মাথামুণ্ড ভাবিতেছে। ঘুম যে চোখে আসে না । কিন্তু অরুণের মধ্যে কি একটা পরিবর্তন হইয়ছে। উমা ভাবে অরুণ তাহাকে ভালবাসে। অরুণকে তাহারও ভাল লাগে, কিন্তু অরুণকে তাহার প্রেমিকরূপে, তাহার স্বামীরূপে কল্পনা করিতে পারে না। তাহার কৈশোর যৌবনের দিনগুলির সুখ-দুঃখের সহিত অরুণ বড় বেশী জড়াইয়া গিয়াছে। অরুণ তাহার বন্ধু । "কমরেড কথাটি বেশ । রাশিয়ায় এখন সকলে কমরেড বলে। গৰ্কীর “মাদার” উপন্যাসখানি অরুণকে কাল ফেরৎ দিতে হইবে। চোখে ঘুম আসে না। উমা ধীরে উঠিয়া পর্দা তুলিয়া অন্ধকার নির্জন ছাদে আসিয়া দাড়ায়। একটা অব্যক্ত বেদনা বুক ঠেলিয়া বাহির হইতে চায়। অরুণের অশাস্ত হৃদয়াবেগ কি তাহারও হয়ে সঞ্চারিত হইল! তাহার বুক দুলিয় ওঠে। রাত্রির তারাভরা অনস্ত আকাশ রিমঝিম করে। অরুণের হৃদয়ের বেদন সে কিছু বুঝিতে পারে কি ?