পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী SN98R বলিলেন, “বাছ, স্বার্থ যেখানে, মোহ যেখানে, সেখানে যাইও না। সত্যের মিলন আত্মায় আত্মায়—সেখানে স্বার্থ, মোহ, ছলনার লেশমাত্র নাই। দেখ, আমি এদেশের মেয়ে, তোমার বাবার পূর্বপুরুষ বিদেশী। এ ক্ষেত্রে আমাদের মিলন অপরের চোখে বিসদৃশ হয়েছিল। কিন্তু আমাদের যোগ ছিল আত্মায় আত্মায়। আমরা জীবনে কোনদিন অমৃতপ্ত হইনি।” মং-ব| দেখিল, জননী ধীরে ধীরে তারকামণ্ডলীর মধ্যে মিলাইয়া গেলেন। দিঘলয়ে উষার আলোকরেখা ছড়াইয়া পড়িল । বিশ্ব নবীন জীবনে জাগিয়া উঠিল। একান্ত শ্রদ্ধায়, নির্ভরতায়, মং-বা নতমস্তকে বিশ্বের জীবনদাতাকে প্রণাম করিল। আজ রহিয়৷ রহিয়া মনে পড়িতে লাগিল বহুদিন আগেকার কথা। সেদিন সে ছিল নিতান্ত বালক, আর তাহার পাশে ছিল নেহাৎ একটা কচি, সরল মুখ। সে সাকিনা—পিতৃবন্ধু মফিজুদ্দিন সাহেবের মেয়ে— তাহার বাল্যসঙ্গিনী । ছেলেবেলায় দু-জনে প্রায় একসঙ্গেই বৰ্দ্ধিত হইয়াছিল। তাহাকে ন হইলে সাকিনার এক দণ্ডও চলিত না । সে ফুল তুলিত, সাকিনা মালা গাথিত ; সে ঘোড়া হইত, সাকিনা কাধে উঠত ; সে ধূলা-বালি বহিয়া আনিত, সার্কিন ঘর গড়িত।—দু-জনে কত দিন তাহার। বর-বধু সাজিয়াছে ! কিন্তু বিশেষ করিয়া একটা দিনের কথা তাহার মনে আসিতে লাগিল । পূৰ্ব্ব দিনে অভিনয় দেখিয়া আসিয়া সেদিন তাহার নিজেরাই “লয়লা-মজতু” অভিনয় করিবে ঠিক করিয়াছে। সমস্ত ঠিকৃষ্ঠাক ; সন্ধ্যায় অভিনয় হইবে। সে হইবে মজনু ; লয়লার ভূমিকায় সাকিনা। ছোট ছোট দর্শক অতিথি ভীড় জমাইয়া কলরব তুলিয়াছে। কিন্তু ঠিক সেই চরম মুহূর্বে এক গণ্ডগোল বাধিয়া গেল । কি একটা কারণে হঠাৎ তাহাকে বাহিরে যাইতে হইল। সাকিন হুলস্থূল বাধাইয়া দিল...তাহার সঙ্গে ছাড়া সে অভিনয় করিবে না। সকলে অনুরোধ করিল, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ক্ষুণ্ণ इंद्देज–भ। একটু বিরক্তির ভাব দেখাইয়৷ বলিলেন, “এ তোর কি আদিখ্যেতা, বাপু, এতগুলো ছেলেমেয়েকে তবে ডেকে আনলি কেন ? কত ঢংই তুই শিখেছিল,. বাছ ?” * একটি মেয়ে বলিল, “না, মাসীমা, মং-বাকে নইলে ও, করবে না। আমরা এত বলছি তাও শুনছে না।” আর একটি মেয়ে অগ্রসর হইয়া অনুনয় করিয়া বলিল, “আয় না ভাই, আত মান কেন ?” সাকিনা তাহার হাত কটকাইয়া দিয়া স্ট্রে হইয়া বসিয়া, রহিল । ম৷ সত্যই একটু বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “তোর সবতাতেই বাড়াবাড়ি, বাপু । সে বেটাছেলে, কত দরকারে তাকে বাইরে যেতে হবে—সে কি সব সময়ই তোর আঁচলে গেরো দিয়ে বসে থাকবে ?” সাকিনা কাদিয়া ফেলিয়াছিল । বালিক স্বভাবসিদ্ধ. ক্রদনের স্বরে বলিয়াছিল, “থাকবে না কেন, নিশ্চয়ই থাকৃবে—সে রোজ রোজ–সব দিন—আমার সঙ্গে থাকৃবে। সে যায় কেন ? তাকে নইলে আমি থাকবে না। কিছুতেই 1" পা ছুড়িয়া সে তারস্বরে কান্না জুড়িয়াছিল। তত ক্ষণ মং-বা ফিরিয়া আসিয়াছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই আসর ভাঙিয়া গিয়াছে—সন্ধ্যাটা মাটি হইয়া গিয়াছে। মং-বার মাত কৰ্ম্মান্তরে ছিলেন, সাকিনার চীংকার গুনিয়া তিনিও ছুটিয়া আসিয়াছেন। সর্থী সাকিনার মায়ের কাছে সব শুনিয়া তিনি হাসিয়া ফেলিলেন ; সাকিনাকে কোলে তুলিয়া লইয়া সানার স্বরে বলিলেন, “তুমি কেদো না, ম, আমি ওকে এনে দেব। ও বড় দুষ্ট, না? ওকে এমনি করে বেঁধে আনব যে ওঁ যেন আর কখনও তোমার কাছ থেকে যেতে না পারে ।” তার পরে মুখ চাওয়াচাওয়ি করিয়া দুই সখীর সে কি হাসি । যাইতে যাইতে সাকিনার মা বলিয়াছিলেন, “মিছে নয়, দিদি, দুটিতে কি সুন্দর মানায়—কি ভাব দু-জনের ” তার পর কতদিন গিয়াছে—সৗকিনার মাও স্বর্গে গিয়াছেন—তাহারা দূরে চলিয়া গিয়াছে। কত দিন তাহাদের