পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাদুর্ভাব অতি বেশী। ইতালীর নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় লোকে উন্মুক্ত বাস্থতেই বেণী সময় থাকিতে অভ্যস্ত। ইহারা হঠাৎ জনবহুল, অস্বৰ্য্যম্পগু, রুদ্ধবায়ু, অস্বাস্থ্যকর পল্লীতে বাস করিয়া অতিরিক্ত পরিশ্রম করিতে থাকায় সহজেই রোগাক্রান্ত হইয়া পড়ে। যাহারা সেই অবস্থাতেই থাকিতে অভ্যস্ত তাহারা কিঞ্চিৎ অধিক সহ করিতে পারে। ইহার কঠিন রোগাক্রান্ত ত হয়ই, ক্রমে মানুষ নামেরও অযোগ্য হইয় পড়ে। এইরূপ একটি পরিবারের পুরুষের হয়ত ক্ষয়রোগ হইল। তাহার উপার্জনের আর ক্ষমতা রহিল না। দুই তিনটি সস্তান সহ তাহার পরিবারের ভরণপোষণ চালায় কে ? পরিবারের সব কয়টি প্রাণীর একই কক্ষে বাস। এইরূপ শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় রোগ যে সবগুলিকে আক্রমণ করিবে তাহাতে কোন ভুল নাই। পেটের দামে সকলে ভিক্ষায় বাহির হইল। রোগও বিস্তারলাভ করিবার স্থযোগ পাইল । ইহা আরামকেদারাস্থিত তামাকুসেবী প্রভুর হয়ত কোন হানি করিল না, কিন্তু পশুর অপেক্ষাও হীন অবস্থায় একটি মানব প্রাণত্যাগ করিল। ইহার ব্যাঘাত ঘটাইতে কেহ অনশনত্ৰত-গ্ৰহণ আবশু্যক বিবেচনা করিল না। এই সম্পর্কে নিউইয়র্কের জেনারেল সেসন্স কোর্টে চুরির অপরাধে ধৃত এক স্ত্রীলোকের বিচারের রায়ের সারাংশ উল্লেখ করিতেছি, “এই স্ত্রীলোকের ক্ষয়রোগগ্ৰস্ত স্বামীকে কর্তৃপক্ষ কাৰ্য্যচু্যত করিয়াছে। কেন-ন, এই অবস্থায় সে শিশুদিগের বস্ত্র প্রস্তুত করিতে থাকিলে নির্দোষ শিশুগণ ঐ রোগগ্ৰস্ত হইবে। ইহা আইনসঙ্গত। সুতরাং তাহার স্বামীর আজ চার বৎসর কোনও কাজ নাই। কিন্তু তাহার গুহে সন্তান জন্মিতেছে, এবং সেই সস্তানদিগের ক্ষয়রোগগ্ৰস্ত না হইয়া উপায় নাই। তাহারা বড় হইতেছে এবং তাহারা তাহাদের পিতার পন্থাই অনুসরণ করিতেছে, তাহাতে আইন-ভঙ্গ হইতেছে না। ইহারা জন্মনিরোধ করিতে চেষ্টা করিলে আইনের সীমা লঙ্ঘিত হয়। প্রশ্ন মনে উঠে, এ বিষয়ে আমাদের উপযুক্ত আইন জাদেী আছে কিনা। আমার মনে হয়, আমরা এখন এমন বিপুল অজ্ঞতার মধ্যে বাস করিতেছি, যাহা ভবিষ্যতে অতি ভয়াবহ به اج-اس-چ۹ বর্তমান সভ্যতা ও ক্ষম্নরোগ বলিয়া মনে হইবে। তাই আমরা এখানে একটি পরিবার দেখিতেছি, যাহার পুরুষ ক্ষরোগগ্ৰস্ত, স্ত্রীর কক্ষে একটি সভান এবং অঞ্চলপ্রাস্তে আরও কয়েকটি । তাহাঁদের অর্থ নাই। পরিবারকে অনশন হইতে রক্ষা করিতে স্ত্রী ভিক্ষা করে । ভিক্ষা না পাইয়া সে চুরি করিয়াছে। আমি তাহাকে শান্তি দিতে পারিব না। বিচার বন্ধ রহিল।** প্রকৃতই এই সব পরিবারের কষ্টের আর সীমা নাই। ইহাদের অবস্থা কঠিনহয় বিচারকদিগকেও মাঝে মাঝে দয়া প্রকাশ করিতে বাধ্য করে। এইরূপ দুঃখী অনেক দেশেই কিছু কিছু আছে। কিন্তু আমাদের দেশের তুলনায় তাহ নগণ্য। ইহাদের সংখ্যা ক্রমশ আরও বেশী হইবে। দেশ তই সভ্য হইতে থাকিবে, কলকারখানা ততই বাড়িবে, শ্রমিক সংখ্যা আরও বেশী হইবে, সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত প্রবলতর হইবে। আমাদের দেশে কেবল শ্রমিক নহে, অধিকাংশ মধ্যবিত্ত লোকেরও এই অবস্থা, তাহারও অন্ততম কারণ সভ্যতা। তথাকথিত সভ্যতার ইহাও একটি লক্ষণ ৰে মানুষ গ্রাম অপেক্ষা শহরে বাস করিতে ভালবাসে । কয়েকজনকে হয়ত বাধ্য হইয়াও বাস করিতে হয়। অথচ শহরে ভালভাবে থাকার উপযুক্ত অর্থ তাহাদের নাই। কাজেই ঠিক শ্রমিকদের অবস্থাতেই তাহাদের পড়িতে হয়। একটি মাত্র কক্ষে সমগ্র পরিবার বাস করে। অতি অস্বাস্থ্যকর যে কক্ষ । সস্তান জন্মগ্রহণ করে। একমাত্র পুরুষের উপার্জনে সকলের ক্ষুধা নিবৃত্তি হয় না। সকলের অনশনে বা অর্থাশনে থাকিতে হয়। তাহার উপর শহরে সংযমের বন্ধন ছিন্ন হওয়াও অতি সহজ। স্বতরাং, সম্পূর্ণ পরিবারের বিসর্জন। এই প্রকার পরিবারের প্রতি ক্ষয়রোগের আকর্ষণ অতি বেশী । মাতাই বেশীর ভাগ আক্রান্ত হয়। তার পরের পালা নির্দোষ শিপ্তর। এই-সব পরিবারের শিশুরা বঙ্গের ভবিষ্যৎ । কিন্তু এইরূপে যাহাঁদের জন্ম ও গঠন, দেশ তাঁহাদের নিকট কি আশা করিতে পারে! اييسهاس.*

  • Judgment of Hon. Judge William H. Wadhams of the Court of General Sessionot-Méd. Rec., 1917 N. Y. reii.