পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

न्कांटिंछक বঞ্চিত সহিত দেখা হয় না—সে ত এক রকম সবই ভুলিতে বসিয়াছে ! বাল্যের সেই নিৰ্ম্মল, সুন্দর জীবন!—সেদিন কি আর ফিরিয়া আসিবে ? নিঃশ্বাস ফেলিয়া মং-বা আপন কাজে মন দিল । কিন্তু কাজে মন বসে না । কি যেন একটা অভাব থাকিয়া থাকিয়া মনের মধ্যে সাড়া দিয়া উঠিতে লাগিল। অনেক ক্ষণ পুস্তক লইয়া বসিয়া থাকিল, দেখিল একটা পৃষ্ঠাও পড়া হয় নাই। বঁাশী লইয়া বাহির হইল—কিন্তু বঁাশীও যেন বেস্থর বাজে। কি যেন তাহার নাই—কি যেন সে চায়—এম্নি একটা ভাব তাহার মন বিরক্তিতে ভরিয়া দেয় । সে মন সংযত করিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করিল ; কিন্তু কে যেন থাকিয়া থাকিয় আস্তর হইতে বলিয়৷ —“মূখ, এ আত্মসংযম নয়, আত্মনিপীড়ন। মং-ব, জীবন সম্ভোগের জন্য, আপনাকে পিষিয়া মারিবার জন্য নয়।” সেদিন খেলার মাঠ হইতে ফিরিবার সময় একটা লোককে সে তাহার দিকে আসিতে দেখিল । বোধ হইল, তাহাকে আগে যেন সে কোথায় দেখিয়াছে। কিছুক্ষণ পরে মনে পড়িল, লোকট সেদিন মা-থিনের দলে ছিল । এই সে মাথিনের নৃত্যসঙ্গী। দারুণ ঘৃণায় অন্তর সঙ্কুচিত হইয়া উঠিলেও তাহার চক্ষু আগন্তুকের দিকেই চাহিয়া রহিল। আগস্তুক মৃদু হাসিয়া বলিল, “আমায় চিনতে পার, বন্ধু ? আমি ম-থিনের ভাই, ট্রন-অঙ্গ—সেদিন তুমি আমায় দেখেছিলে ।” ঘাড় নাড়িয়া মং-বা জানাইল—“হঁ৷ ” টুন-অঙ্গ পুনরায় বলিল, “সেদিন থেকে ম-পিনের কি হয়েছে জানি না । সে তোমায় দেখবার জন্যে ভারি ব্যস্ত হয়েছে। অনেক খুজে খুজে আমি আজ এই খেলার মাঠে তোমার সন্ধান পেয়েছি। একবার আস্বে আক্ষার সঙ্গে ?” মং-বা রূঢ়ভাবে বলিয়া উঠিল, “তোমায় অনেক ধন্যবাদ, ট্রন্থ অঙ্গ, কিন্তু মা-থিনকে বলে, তার কাছে আমি ধাব না-তিনি যেন আমায় সে রকম মনে না করেন।” কোন কথার অপেক্ষা না-করিয়া মং-বা দ্রুতপদে চলিয়া গেল। টুন-অঙ্গ মিট্‌ মিটু করিয়া গম্যমান মং-বার দিকে চহিয়া রহিল—মুখে তাহার ধূৰ্ত্ত হাসি। টুন্‌-অঙ্গ লোকটা নেহাৎ মন্দ ছিল না। কিন্তু সে ছিল একটা জোয়ারের জলে ভাসিয়া-আসা জিনিষের মত—সৰ্ব্বদাই স্রোতে গা ভাসাইয়া চলা তাহার অভ্যাস। নিজের চেষ্টা কোনকালে তাহার ছিল না। বরাবরই ম-খিনকে সে তাহার কাছে কাছে দেখিয়া আসিয়াছে। ছেলেবেলাকার কথা খুব একটা অস্পষ্ট স্বপ্নের মত মাঝে মাঝে তাহার মনে পড়ে। কবে স্বদূর অতীত শৈশবে তার মা মৃত্যুর পূৰ্ব্বে প্রিয় সখী মা-থিনের মায়ের কাছে ছেলেটিকে গচ্ছিত রাখিয়া গিয়াছিল। তখন থেকে টুন-অঙ্গ, আজ পর্য্যস্ত এইখানেই আছে। নিশ্চিন্ত আরামে, নির্বিকার আলস্তে তার দিন চলিয়া যাইতেছে । ম-থিনের সঙ্গে সে পাশাপাশি বাড়িয়া উঠিয়াছে—এক বৃস্তে ফোটা দুইটি ফুলের । মত। সে তাহাকে যত্ন করে, স্নেহ করে, গোপন অগোপন সব কথাই বলে । তাই টুন-অঙ্গ, ভাবিয়াছিল যে জীবনের শেষ পৰ্য্যন্ত সে ম-থিনের অঞ্চলতলে কাটাইয়া দিবে। ম-খিন যে অদূর ভবিষ্যতে তাহাকে বিবাহ করিবে, এ আশাও সে মনে মনে পোষণ করে। ম-থিনের কার্য্যকলাপের মধ্যেও সেজিনিষটা অসম্ভব বলিয়া মনে হয় না। ম-খিন কাহাকেও চায় না—-এ পৰ্য্যন্ত অনেক বিবাহের প্রস্তাব আসিয়াছিল, কিন্তু কাহাকেও সে বিবাহ করিতে সম্মত হয় নাই । তাহার মতে, কেহ তাহার অর্থের জন্য, কেহ বা তাহার রূপের জন্য তাহাকে বিবাহ করিতে আসে। পুরুষে যে ভালবাসিয়া, আপনাকে বিকাইয়া দিয়া নারীকে চায় এ ধারণ তাহার অসম্ভব বলিয়া মনে হয়। তাই সকলকেই সে ফিরাইয়া দিয়াছে। কিন্তু টুন-অঙ্গ কে সে বরাবরই একটা ক্ষেহমিশ্রিত প্রীতির চক্ষে দেখে। তার কোন আবদারেই রাগ করে না। তাই টুন অঙ্গ, যখন তাহার সহিত বিবাহের কথা বলে, তখন সে একটু হাসিয়া উত্তর দেয়, “এত তাড়াতাড়ি কি, ভাই ? আমি ত তোমারই আছি ।” কিন্তু বুঝি কোন অশুভ মুহূর্তে মং-বার সহিত ম-থিনের দেখা হইয়া গেল। টুর্ন অঙ্গ, আর ম-থিনের মনের নাগাল পায় না, অনেক কথার উত্তরও পায় না । সেই দিন হইতে সে কিছু আনমন, কিছু গম্ভীর। শুধু মং-বা সংক্রান্ত কোন কথা হইলে মন দিয়া শোনে। টুর্ন অঙ্গ, তাহা লক্ষ্য করিয়া তাহাকে