পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ বিবিধ প্রসঙ্গ—হিন্দু মহাসভা ও অস্পৃশ্যতা αυ-η অনেকে মনে করিতে পারেন, ধে, জাতিভেদ একেবারে উঠাইয় দিলে হিন্দুসমাজ ও হিন্দুত্ব রক্ষা পাইবে না। আমরা তাহা মনে করি না । জন্মগত ও বংশগত জা'ত না মানিয়া যদি বৌদ্ধ ধর্ম ও সমাজ, খ্ৰীষ্টীয় ধর্ম ও সমাজ এবং মুসলমান ধৰ্ম্ম ও সমাজ টিকিয়া থাকিতে পারে, তাহা হইলে জন্মগত ও বংশগত জা’ত না মানিলে হিন্দুধৰ্ম্ম ও সমাজই বা কেন লোপ পাইবে ? জন্মগত ও বংশগত জ'ত ছাড়া কি হিন্দু পূৰ্ম্ম ও সমাজের আর কোনই বিশেষত্ব নাই ? আমি যেবার মুরাটে হিন্দু মহাসভার সভাপতি হইয়াছিলাম, সে-বার আমার অভিভাষণে বলিয়াছিলাম, জাতহীন হিন্দু সমাজের অস্তিত্ব zoal oil Tozzio (It is possible to imagine the existence of a casteless IIindu society) &It's wo তখন বা তাহার পরেও হিন্দু মহাসভার কোন গোড়া সভ্য কোন আপত্তি করেন নাই বা বিতর্ক তুলেন নাই। যাহা হউক, জন্মগত ও বংশগত জাতিভেদের উচ্ছেদবিষয়ক প্রস্তাবের আলোচনা মহাসভার কার্য্যক্ষেত্রের বাহিরে বলিয়া মানিয়া লইলেও, ভিন্ন ভিন্ন জাতের মধ্যে বিবাহও যে তাহার আলোচনার বহিভূত, ইহা কখনও স্বীকার করা যাইতে পারে না । অতীত কালে হিন্দু সমাজে ভিন্ন ভিন্ন জাতের মধ্যে বিবাহ প্রচলিত ছিল । অতুলোম বিবাহ ত বেশ চলিত ; প্রতিলোম বিবাহ তদপেক্ষা সংখ্যায় কম হইলেও তাহাও চলিত। উভয়বিধ বিবাহেরই দৃষ্টাস্ত প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রে কাব্যে পুরাণে পাওয়া যায়। তাহা হইলে কি আগেকার হিন্দুসমাজ হিন্দু ছিল না ? বৰ্ত্তমান সময়ে ব্রিটিশ-অধিকারভুক্ত দার্জিলিঙ জেলায়, এবং স্বাধীন নেপালের হিন্দুসমাজে ও অৰ্দ্ধ-স্বাধীন সিকিমের হিন্দুসমাজে অসবর্ণ বিবাহ প্রচলিত আছে। ব্রিটিশ ভারতের নানা প্রদেশে হিন্দুসমাজে অসবর্ণ বিবাহ, সংখ্যায় কম হইলেও, ইয়ে থাকে। কলিকাতায় কালীঘাটে-হরিশ চাটুজ্যের সড়কে f:কোণেশ্বর মন্দিরে যে হিন্দু মিশনের কার্য্যালয় অবস্থিত, সেই হিন্দু মিশন একটি সুবিদিত প্রতিষ্ঠান। এই হিন্দু মিশন অসবর্ণ বিবাহ দিয়া থাকেন—কতকগুলি দিয়াছেন। হিন্দু সাজে –অর্থাৎ প্রাচীনপন্থী হিন্দু সমাজে—অসবর্ণ বিবাহ ং লৈ তাহ ব্রিটিশ আইন অনুসারে রেজিষ্টরী হইতে পারে, এ’ তাহা আইনসঙ্গত। জন্মগত ও বংশগত জাতিভেদ হিন্দুসমাজ হইতে উঠাইয়া দেওয়া হউক বা না হউক, হিন্দুসমাজের সংহতি, ঘননিবিষ্টত, দলবদ্ধত উৎপাদন, রক্ষা বা বৃদ্ধির জন্য এবং তদ্বারা হিন্দুসমাজ সংরক্ষণের জন্য অসবর্ণ বিবাহ একান্ত আবশ্বক। এবং আর একটি সংস্কারও একান্ত অবশ্যক। তাহ, অমুক জা’ত বড় ও শুদ্ধ এবং অমুক জা’ত ছোট ও অশুদ্ধ—এইরূপ ভেদজ্ঞানের ও তদনুরূপ আচরণের উচ্ছেদ । এইরূপ ভেদজ্ঞান হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রসমূহের উপদেশবিরুদ্ধ । হিন্দু মহাসভা ও অস্পৃশ্বত পুনার অধিবেশনে হিন্দু মহাসভা অসবর্ণ বিবাহ প্রচলন ও জাতিভেদের উচ্ছেদ এই দুটি বিষয়ের আলোচনা না করিলেও অস্পৃশ্বতাসম্পৰ্কীয় একটি প্রস্তাব গ্রহণ করিয়াছেন। এই প্রস্তাবটি করবীর পীঠের শঙ্করাচাৰ্য্য ডক্টর কুৰ্ত্তকোটি মহাসভার সমক্ষে উপস্থিত করেন। সৰ্ব্বসাধারণের জন্য অভিপ্রেত প্রতিষ্ঠানসমূহের ও স্থানসমূহের ব্যবহারে তথাকথিত অস্পৃশুদের যে অধিকারহীনতা বিদ্যমান আছে, এই প্রস্তাব সেই অধিকারহীনতার উচ্ছেদ সাধন দ্বারা অন্ত হিন্দুদের মত তাহাদেরও অধিকার স্থাপন করিতে হিন্দুসমাজকে অনুরোধ করিয়াছে। মন্দিরাদি পূজার স্থান, কৃপাদি জলাশয় প্রভৃতির ব্যবহারে তথাকথিত অস্পৃশুদের অন্য হিন্দুদের সমান অধিকার এই প্রস্তাবে স্বীকৃত হইয়াছে। প্রস্তাবটি যত দূর গিয়াছে, তাহা সন্তোষজনক মনে করা যাইতে পারে, কিন্তু ইহার অর্থ লষ্টয় মতভেদ ও বাগবিতণ্ড হইবে। তথাকথিত অস্পৃশ্ব সকল জাতি মন্দিরের বাহির হইতে দেবদেবী-মূৰ্ত্তিকে দর্শন ও প্রণাম করিয়া সন্তুষ্ট না হইতে পারে-অনেকে নিশ্চয়ই সস্তুষ্ট হইবে না ধরিয়া লওয়া যাইতে পারে। তাহারা স্বয়ং স্বহস্তে দেবদেবী পূজা করিতে চাহিবে । বস্তুতঃ, বঙ্গে যে কোন কোন স্থানে সাৰ্ব্বজনীন দুর্গাপূজা ও সরস্বতী পূজা হয়, তাহাতে কোথাও কোথাও সকল জাতির লোকদেরই পৌরোহিত্য করিবার, ভোগ রাধিবার, এবং এক পংক্তিতে বসিয়া প্রসাদ গ্রহণ করিবার অধিকার—শুধু কথায় নহে, কাজেও—স্বীকৃত হইয়াছে। তাহাতে হিন্দুসমাজ লোপ পায় নাই। বঙ্গের স্থানে স্থানে “তপশীলভূক্ত” জাতিদের এই যে দাবি স্বীকৃত হইয়াছে,