পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ দেন নাই। যাহা হউক, তাহার অনুচর র্যাহারা তাহারাও যদি দলবলে ধর্মান্তর গ্রহণ করেন, তাহা হইলে যে ধর্শ্বসম্প্রদায় র্তাহাদিগকে পাইবেন তাহদের সংখ্যা কিছু বাড়িবে বটে। নবাব সাহেব অতঃপর বলেন, হরিজনদিগকে মুসলমান করিবার নিমিত্ত অর্থসংগ্রহ ও উপায় অবলম্বন করিতে হইবে। ইহার জন্ত একটি মুক্কিম মিশন স্থাপিত করিতে হইবে, এক কোটি টাকা ও এক লক্ষ জীবন-সভ্য সংগ্ৰহ করিতে হইবে, অন্ততঃ কুড়ি বৎসর প্রচারকাৰ্য্য চালাইবার জন্ত এক হাজার প্রচারক জোগাড় করিতে হুইবে, এবং সব হরিজনকে মুসলমান করিৰার জন্ত পঞ্চাশ বৎসর সময় লাগিবে। প্রত্যেক ধৰ্ম্মসম্প্রদায়েরই অন্য ধর্শ্বের লোকদিগকে নিজ ধৰ্ম্মে আনিবার অধিকার অাছে। স্বতরাং নবাব সাহেবের প্রস্তাব অন্তায় নহে। তবে তাঁহাকে ও র্তাহার মতাবলম্বীদিগকে দু-একটা কথা বলিবার আছে। অমুসলমানকে কলম পড়াইয়া মুসলমান করাই যথেষ্ট নহে। মুসলমান ধর্থের শাস্ত্রে কি আছে, তাহা তাহাদিগকে জানাইতে হইবে, জানাইতে হইলে শিক্ষা দিতে হইবে। ইহা গেল ধর্শ্বের দিকৃ। - সাংসারিক বিষয়েও যাহাতে তাহাদের স্বাচ্ছন্দ্য হয়, তাহা করিতে হইবে ; অর্থাৎ বৃত্তিশিক্ষা দিতে হইবে, চাষবাস ও কারিগরী শিখাইতে ও তাহার মূলধন যোগাইতে হইবে, এবং রোগে ও দুৰ্ভিক্ষ জলপ্লাবন ভূমিকম্প আদি আকস্মিক বিপদে সাহায্য দিতে হইবে। বৰ্ত্তমানে র্যাহারা মুসলমান আছেন, তাহাদিগকে ধৰ্ম্মবিষয়ে ও সাংসারিক বিষয়ে এই রকম সাহায্য নবাব সাহেব ও অন্ত নেতারা কি পরিমাণে দিয়াছেন, তাহ তাহারা ভাবিয়া দেখিতে পারেন। হরিজনদিগকে মুসলমান করিবার জন্য যেরূপ অর্থব্যয়ের অহমান নবাব সাহেব করিয়াছেন, তাহাও পরীক্ষা করা আবগুক। সমগ্র ভারতবর্ষে হরিজনদের সংখ্যা হিন্দুবিরোধীরা বলেন মোটামুটি ছয় শকাটি। অষ্ঠের চারি কোটির কম বলেন না। যদি তাহদের সংখ্যা চারি কোটিই ধরা যায়, তাহা হইলে এক কোটি টাকার স্বদ হইতে চারি কোটি লোককে মুসলমান করা যাইবে বলিয়া মনে হয় না। যদি এক কোটি টাকার স্বদ হইতে না করিয়া মবলগ এক কোটি টাকাই চারি কোটি মানুষকে ধর্শ্বাস্তরগ্রহণ করাইবার নিমিত্ত খরচ করা হয়, তাহা হইলেও মাথাপিছু চারি-জানা বিৰিৰ প্ৰসঙ্গ-হরিজম দিগের পাইকারী মুসলমানীকরণ &as খরচের জন্ত পাওয়া স্নায়। মাথাপিছু চারি জানা ব্যয়ে কি তাহাদিগকে সামান্য সাধারণ শিক্ষ, ধৰ্ম্মশিক্ষা, বৃত্তিশিক্ষা দেওয়া যাইতে পারে ? চাষবাস, কারিগরী ও ব্যবসাবাণিজ্যের মুলধন ত যোগান যায়ই না। ১৯২৩ সালে যখন মাম্রাজ প্রেসিডেন্সেীর কাকিনাডা ( Cocanada ) শহরে কংগ্রেসের অধিবেশন হয়, তখন মৌলানা মোহম্মদ আলী তাহার সভাপতি রূপে এই রকম একটি প্রস্তাব করিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেন এক জন ধনী মুসলমান (বোধ হয় আগা খা) টাকা দিতে রাজী আছেন। তদনুসারে কোন কাজ হয় নাই। মুসলমানেরা তাহদের উদেশ্বসিদ্ধি কি প্রকারে করিবেন তাহা তাহাদের চিণ্ডিতব্য। হিন্দুদিগকে ভাবিতে হইবে, র্তাহারা কেমন করিয়া হরিজনদিগের উন্নতি বিধান করিয়া ও র্তাহাদিগকে সামাজিক মর্ধ্যাদা দিয়া হিন্দু রাখিবেন । হরিজন ও নিম্নশ্রেণীর লোক মুসলমানদের মধ্যেও আছে। আমরা যাহা দেখিয়া আসিতেছি, তাহা এই, যে, অবস্থাপন্ন ও শিক্ষিত হিন্দুরা অবনত হিন্দুদের জন্ত নিজ কৰ্ত্তব্য যথেষ্ট না করিলেও যতটা করেন, অবস্থাপন্ন ও শিক্ষিত মুসলমানের অবনত মুসলমানদের জন্য ততটা করেন না, এবং হিন্দুসমাজে জনহিতৈষণা ও সাৰ্ব্বজনিক কার্যে উৎসাহ সামান্ত যতটুকু আছে, মুসলমান সমাজে তাহাও নাই। সুতরাং অবনত হিন্দুরা রাগ করিয়া মুসলমান হইলে তাহদের কল্যাণ বা লাভ কি হইবে বুঝিতে পারি না। বঙ্গের হরিজনরা ব্যবস্থাপক সভায় ত্ৰিশটা আসন পাইয়াছেন। তাহারা মুসলমান হইলে মুসলমান সম্প্রদায় তাহাদিগকে নিজেদের ভাগ হইতে ত্ৰিশটা আসন ছাড়িয়া দিবে কি ? যদি বলেন, মুসলমানরা একেশ্বরবাদী, অতএব মুসলমান হওয়া ভাল। তাহার উত্তর এই যে, হরিজনরা ত একেশ্বরবাদের জন্ত মুসলমান হইবে না, সামাজিক স্থবিধার জন্ত হইবে। আর যদি কেহ একেশ্বরবাদের পক্ষপাতী হয়, তাহা হইলে তাহার জন্ত উপনিষদে গীতায় একেশ্বরবাদ অাছে, ব্যাপক অর্থে যাহা হিন্দুসমাজ তাহার অন্তর্গত শিখদের, ব্রাহ্মদের ও আর্য্যসমাঙ্গীদের ধৰ্ম্মে একেশ্বরবাদ আছে, এবং তাঁহাদের ও বৌদ্ধদের ধর্শে সামাজিক সাম্যও আছে।