পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিক্রমপুর ঐবিশ্বেশ্বর ভট্টাচাৰ্য্য পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুর পরগণা স্ববিখ্যাত কিন্তু এই পরগণার মধ্যে বিক্রমপুর নামক কোন নগর বা গ্রামের অস্তিত্ব নাই। মুন্সীগঞ্জ হইতে প্রায় চার মাইল পশ্চিমে রামপাল নামে একটি গ্রাম অতীতের অনেক গৌরবচিহ্ন বক্ষে ধারণ করিয়া এখনও বিরাজিত। লোকের বিশ্বাস, এই স্থানই প্রাচীন বিক্রমপুর নগর। স্থানটি নিকটবর্তী অন্যান্য স্থান অপেক্ষ উচ্চ। শুষ্ক ‘রামপালদীঘি এবং প্রকাগু পরিখাবিশিষ্ট বল্লালবাড়ি ইহার অন্তর্গত। ১৯৩৪ সনে আমরা রামপাল দেখিতে যাই। মুন্সীগঞ্জ হইতে পদব্রজে রামপাল যাইতে স্বল্পপরিসর লোক্যাল বোর্ডের রাস্তার স্থানে স্থানে প্রাচীন ইষ্টকাদির চিহ্ন নয়নগোচর হয়। বর্তমান কালের সম্পদ-রামপাল ও তাহার নিকটবর্তী স্থানের বিখ্যাত কলা-বাগানগুলিও—দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরূপ উৎকৃষ্ট কলা বোধ হয় ভারতবর্ষে আর কোথাও জন্মে না। কলার চাষে এতটা পরিশ্রমও বাংলা দেশে আর কোথাও দেখিতে পাওয়া যায় না । পচা কর্দম সাররূপে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করিয়া তাহার উপর চারাগাছ রোপণ করা হয় এবং জমির তেজ কমিয়া গেলে তাহাকে কিছুকাল আবশুকমত ফেলিয়াও রাখা হয়। অধিকাংশ কৃষকই মুসলমান । আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা লক্ষ্য করা গেল। পাটের স্থান ক্রমশঃ অধিকার করিতেছে ইক্ষু—গবর্ণমেণ্ট কর্তৃক পাটের চাষ নিয়ন্ত্রণের পূর্বেই এই প্রচেষ্টা দেশের পক্ষে আশাপ্রদ। স্থানে স্থানে বঁধাকপির আবাদও দেখা গেল । জানিলাম এ আবাদও এ স্থানের পক্ষে নৃতন। রামপালদীঘি এখন মুত—ইহার মধ্যে রীতিমত চাষ-আবাদ চলিতেছে। দীঘিটি প্রায় ৫ মাইল লম্বা এবং ঃ মাইল চওড়া । বল্লালবাড়ি ইহার উত্তরে। বল্লালবাড়ি এখন একটি প্রকাও স্মৃত্তিকাস্তুপ, পরিমাণফল প্রায় ৩••• বর্গফুট। ইহার চারি দিকের পরিখা প্রস্থে প্রায় ২•• ফুট । একটি প্রাচীন কালের প্রশস্ত রাস্ত বল্লালবাড়ি হইতে বাহির হইয়া কতক দূর পৰ্য্যন্ত চলিয়া গিয়াছে । এই বল্লালবাড়ির এক প্রাষ্টে ইতিহাসবিখ্যাত গজারীবৃক্ষ—এক্ষণে শুষ্ক। একটি প্রবাদ আছে যে, রাজা আদিশূর বিশুদ্ধ প্রণালীতে যজ্ঞ করাইবার জন্য কোলাঞ্চ বা কানাকুজ হইতে পঞ্চগোত্রের পাচটি ব্রাহ্মণ আনয়ন করেন। ব্রাহ্মণের চৰ্ম্মপাদুকা পরিধান করতঃ তাম্বুল চৰ্ব্বণ করিতে করিতে রাজদ্বারে উপস্থিত হইয় তাহাদের আগমনবার্তা প্রেরণ করেন এবং জলগণ্ড্য হন্তে লইয়া রাজাকে আশীৰ্ব্বাদ করিবার জন্য প্রস্তুত থাকেন। রাজা কিন্তু তাহাদের বেশ ও ব্যবহার দেখিয়া বীতশ্রদ্ধ হইয়া পড়েন এবং আসিতে বিলম্ব করিতে থাকেন। ব্রাহ্মণের একটু বিরক্ত হইয় তাহাদের মন্ত্ৰপূত আশীৰ্ব্বাদের জল নিকটবর্তী শুষ্ক কাষ্ঠের উপর নিক্ষেপ করেন—কাষ্ঠও অমনি গজাইয়া সজীব বৃক্ষ হইয়া উঠে— সেই বৃক্ষই এই গঙ্গারী গাছ। এখনও সিন্মুরাদি দ্বার এই বৃক্ষের অর্চনা হইয়া থাকে। বলা বাহুল্য, কোন ঐতিহাসিকই এই প্রবাদের উপর আস্থ স্থাপন করিতে পারেন না । কোন কোন ঐতিহাসিক এখন আদিশূর কর্তৃক পঞ্চব্রাহ্মণ আনয়নের কাহিনীকে উপন্যাসের সমান বলিয়া মনে করেন। আদিশূর নামক কোন রাজা সেকালে বৰ্ত্তমান থাকিলেও তিনি যে কোন কালে পূর্ববঙ্গে পদার্পণ করিয়াছিলেন তাহ অন্ততঃ সনেইজনক। আর, ব্রাহ্মণের আশীৰ্ব্বাদের বলে মৃত কাঠের পুনর্জীবনলাভ—এ কাহিনী যিনি বিশ্বাস করেন, বর্তমান যুগ তাহাকে আর যাহাই বলুক ঐতিহাসিক বলিবে না। এ ত গেল আদিশূরের কথা। এখন কথা হইতেছে, বিক্রমপুর গ্রসিদ্ধি লাভ করিল কোন সময় হইতে এক তাহার রাজধানীর নামই বা রামপাল হইল কেন ? এ পর্যন্ত যত তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হইয়াছে তাহার মধ্যে বিক্রমপুর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঐচন্দ্র দেবের শাসনে। তাইরি