পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাত্তম পূর্ববর্তী, চট্টগ্রাম হইতে আবিষ্কৃত, কান্তিদেবের তাম্রশাসনে বর্ধমানপুরের উল্লেখ আছে। ঐযুক্ত নলিনীকান্ত ভট্টশালী মহাশয় অল্পমান করেন এই বৰ্দ্ধমানপুরই বিক্রমপুরের পূৰ্ব্বনাম এবং প্রচন্দ্রদেব কান্তিদেবের নিকট হইতে এই স্থান বিক্রম দ্বারা অর্জন করিয়া ইহার নাম বিক্রমপুর রাখেন।* ঐযুক্ত ভট্টশালী মহাশয়ের এই অনুমান এত স্বল্প স্বত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত যে ঐতিহাসিকের পক্ষে উহা নিৰ্ব্বিবাদে গ্রহণ করা চলে না। বিক্রমপুর যে বিক্রমাদিত্য-উপাধিধারী কোন রাজার স্থাপিত এই প্রবাদও কোন নির্ভরযোগ্য ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নহে । শ্ৰীচন্দ্রদেবের সময় মোটামুটি দশম শতাব্দীর শেষ বা একাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ধরা হইয়া থাকে। এই সময় হইতে ক্রমাগত রাজার পর রাজা ঐবিক্রমপুরসমাবাসিত শ্ৰীমঙ্গয়স্কন্ধাবার হইতে তাম্রশাসন বাহির করিতে থাকেন। শ্ৰীচন্দ্রদেবের চার খানি তাম্রশাসনের সকলগুলিরই উৎপত্তিস্থান ঐবিক্রমপুর। কাস্তিদেব ও শ্ৰীচন্দ্র উভয়েই বৌদ্ধ ছিলেন। বিক্রমপুরের নানা স্থান হইতে বৌদ্ধ যুগের বহু নিদর্শন আবিষ্কৃত হইয়াছে। ইহা পূৰ্ব্ববর্তী পালবংশ ও পরবর্তী চন্দ্রবংশের অধিকারের ফল বলিয়াই অনুমিত হয় । চন্দ্র-বংশের পরই বর্শ্ব-বংশ বিক্রমপুরে অধিকার লাভ করেন এবং তাহার পর সেন-বংশ । এই উভয় বংশই হিন্দু। বর্শ্ব-বংশের র্যাহারা পূৰ্ব্ববঙ্গে রাজত্ব করিয়াছিলেন র্তাহাদের মধ্যে সামলবৰ্ম্ম, হরিবর্শ্ব, ও ভোজবশ্ব প্রসিদ্ধ। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের এতটা সংমিশ্রণ ঘটিয়াছিল যে আমরা হিন্দুরাজা সামলবৰ্ম্ম-কর্তৃক বিষ্ণুপ্রত্যর্থে প্রজ্ঞাপারমিতার মন্দিরে ভূমিদান দেখিতে পাই ।ী হরিবর্শার রাজত্ব চত্বারিংশ-বর্ষেরও অধিক কাল ছিল এবং বহুদূর পর্য্যস্ত বিস্তৃতি লাভ করিয়াছিল। র্তাহার মন্ত্রী ভবদেব ভট্ট ভূবনেশ্বরে বিখ্যাত অনস্তবাস্থদেবের মন্দির নির্মাণ করিয়াছিলেন। চন্দ্র-বংশ ও বর্শ্ব-বংশ প্রধানতঃ বাংলার পূর্ব ভাগেই আধিপত্য করিতেন বলিয়া মনে হয়। উত্তর-বঙ্গে তখনও পাল-বংশের প্রতাপ এবং পশ্চিম-বঙ্গে তখনও প্রাদেশিক সমস্তরূপে শুর-বংশের প্রাধান্ত।

  • ভারতবর্ষ, আষাঢ়, ১৬৩২ । # Modern Review, Nov. 1982.

శ్రీ$వి পাল-বংশ বৌদ্ধ ও বর্শ্ব-বংশ হিন্দু হইলেও পরম্পরের মধ্যে ফুটুম্বিত ছিল । সামলবৰ্গার পিতা জাতবর্ণ ও তৃতীয় বিগ্রহপাল উভয়েই কলচুরি-বংশীয় কর্ণদেবের কন্যা বিবাহ করিয়াছিলেন । রাজা রামপাল উত্তর-বঙ্গে বিদ্রোহ দমনের পর খুব প্রতাপশালী হইয়া উঠিয়াছিলেন। বঙ্গের বর্শ্ব-বংশীয় কোন রাজা হস্তী ও রথ উপঢৌকন দিয়া রামপালের আশ্রয় ভিক্ষা করিয়াছিলেন এরূপ বিবরণ পাওয়া যায়। এই রাজাটির নাম জানা যায় না । তবে মনে হয়, বর্ণ-বংশীয় রাজাদিগের রাজত্বের শেষের দিকে কোন দুৰ্ব্বল রাজা এইরূপ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন । এই সময়ে রামপালের পূর্ববঙ্গে বিশেষরূপ প্রাধান্ত প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় খুব সম্ভবতঃ র্তাহার নাম হইতেই দীঘি ও নগরের নামের উৎপত্তি হয়। রামপাল নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে অন্ত যে-সকল স্থানীয় কিংবদন্তী আছে তাহার কোন-কোনটি বালকোচিত বলিলেই হয় । বল্লালসেন দীঘি কাটাইলেন আর তাহার মুী রামপালের নামে সেই দীঘি বিখ্যাত হইয়া গেল—কথাটা শুনিতেই কেমন কেমন লাগে। “মহাধনী” বৈদ্যরাজ রামের নাম হইতেও "রামপাল* নামের উদ্ভব সম্ভব বলিয়া মনে হয় না। রামপাল ও তাহার আশপাশে প্রাচীন রাজধানী ও তাহার উপকণ্ঠ গড়িয়া উঠিয়াছিল। অনেক স্থানে ভূগর্ভে প্রাচীন ইষ্টক, ইমারতের ভগ্নাংশ, দেবমূৰ্ত্তি, প্রাচীন মুদ্র প্রভৃতি আবিষ্কৃত হইয়াছে। স্থানটি সমৃদ্ধ ছিল সন্দেহ নাই, কিন্তু যে-স্থান বহু শতাব্দী পৰ্য্যস্ত বঙ্গ দশের রাজধানীরূপে পরিগণিত ছিল, যে-স্থান হইতে এত প্রাচীন তাম্রশাসন দিগ দিগন্তে ছড়াটা পড়িয়ছিল সে-স্থানে প্রাচীন অট্টালিকাদি ও রাজধানীর মতটা নিদর্শন দর্শক আশা করেন তাহ পাওয়া যায় না । ইহার কারণ কি ? অবশ্য সেন-বংশের সহিতই বিক্রমপুরের নাম বিশেষভাবে জড়িত-বল্লালসেন ও লক্ষণসেনের কীৰ্ত্তিকলাপ এখনও বিক্রমপুরবাসী নিজস্ব মনে করিয়া থাকেন। কিন্তু ইহাও দ্রষ্টব্য যে যদিও বিজয়সেনের বারাকপুর তাম্রশাসন, বল্লালসেনের ( একমাত্ৰ ) সীতাহাটী তাম্রশাসন এবং লক্ষ্মণসেনের এতগুলি তাম্রশাসন বিক্রমপুরজয়স্কন্ধাবার হইতে প্রদত্ত, ইহার একখানিও পূর্ববঙ্গে আবিষ্কৃত হয় নাই। বিজয়সেন যে প্রথমে বরেন্দ্র অঞ্চলে