পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাভিক হঠাৎ কক্ষদ্বারে তীব্র পরিহাসের স্বরে ধ্বনিত হইল, “বাঃ, মং-বা, এ অতি চমৎকার!” সচকিত হইয়া উভয়ে দেখিল, দ্বারপ্রান্তে দাড়াইয়া সাকিনা। স্বপ্ন ভাঙিয়া গেল। আলিঙ্গন-মুক্ত হইয়া উভয়ে সরিয়৷ দাড়াইল। মং-বা নীরব, নতমুখ। মা-থিনের বুক প্রলয়ের তালে স্পন্দিত হইতেছে। e —বড় স্বন্দর প্রেমালাপ ভেঙে দিলাম আমি !—বলিয়া সাকিনা পুনরায় তীব্র শ্লেষে হাসিল। “এখন যে কথা বল্‌ছ ন, ভাই সাহেব ? এই বুঝি তোমার সেই সৌখীন নাস ?” মং-বার নিকট হইতে কোন উত্তর আসিল না। সাকিনা জলন্ত বহ্নিশিখার মত মা-খিনের দিকে ফিরিয়া বলিল, “কি গো, তুমি হাসপাতালের নাস”—না প্রেমের ব্যাপারী ? এমনি ক’রে অস্বস্থ লোকদের মাথা থেয়ে বুঝি পয়সা আদায় কর ? রোগীরা এখানে আসে, তাদের দোষ দেব কি ? তাদের ত মাথার ঠিক্‌ থাকুবেই না ? কিন্তু তুমি কোন হিসাবে তাদের মজিয়ে বেড়াও ?” চিরদপিতা মা-খিন আর সন্থা করিতে পারিল না। সাকিনার দিকে চাহিয়া স্থিরস্বরে বলিল, “ন-জেনে কথা বলে না। কে কা’কে মজিয়ে বেড়ায় ওঁকেই জিজ্ঞাসা কর না কেন ?” --তুমি বলতে চাও উনিই তোমার পেছনে ছোটেন। --যদি বলি তাই ? সাকিনা জলিয়া উঠিল ; চীৎকার করিয়া বলিল--- "মিথ্যাবাদী, শয়তানী ! মং-বা তোর পেছনে ছোটে ? কি দেখিয়ে তুই তাকে যাদু করেছিস ? হাসপাতালের তুচ্ছ একটা ধাই তুই—তোর কি দেখে মং-বা ভুলবে? তার পায়ের একটা নখের যোগ্যতাও তোর নেই।” ম-খিন চীৎকার করিল না, রূঢ়কথা বলিল না। একবার নতমুখ মং-বার মুপের পানে চাহিয়া দৃঢ়স্বরে বলিল— "পোগ্যতা আছে কি নেই, সে নিয়ে আমি তোমার সঙ্গে ধগড় করতে চাই নে । কিন্তু যিনি আজ কোন কথা বললেন না, তাকেই আর একদিন এ কথাটা জিজ্ঞাসা করে। জিজ্ঞাসা করে দেখে, এই তুচ্ছ দই একটা আঙুল হেল'লে এক জন মং-বা কেন, আমন শত শত মং-বা তার পায়ের তলায় পড়ে থাকে—এ কথা সত্য কি না।” বঞ্চিত &S মং-বা মুখ তুলিয়া চাহিবার পূৰ্ব্বেই ম-খিন কক্ষত্যাগ করিয়া চলিয়া গেল । আজ তাহার মনে পড়িয়া গেল, টুন-অঙ্গ-এর কথা । টুন-অঙ্গ, তাহারই মত দীন, অভাগা । তাহারা উভয়েই যে অভিজাত্যহীন অপাংক্তেয়ের দলে! ম-খিন ভাবিল, সেও বুঝি একদিন নীচ বলিয়া টুন্‌-অঙ্গকে ঘৃণা করিয়াছে—নিজেকে উচ্চের সংশ্রবে আসিয়াছে মনে করিয়া ভাবিয়াছে উচ্চ। তাই আজ অমুশোচনায় তাহার অন্তর ভরিয়া গেল। টুন-অঙ্গ, তাহার সহোদর ভাইয়ের মত—নিজের বুদ্ধির ভুলে সে যদি তাহাকে অন্ত ভাবে দেখিয়া থাকে, তাহাতে তাহার দোষ কতখানি ? অার সে নিজেও ত কোনদিন তার ভুল সংশোধন করিয়া দিবার চেষ্টা করে নাই –বরঞ্চ অনেকখানি প্রশ্রয়ই ত দিয়াছে ? তবে টুন-অঙ্গ-এর দোষ দিবে সে কি করিয়া ? টুন্‌-অঙ্গকে সে ছাড়িয়া চলিয়া আসিয়াছে—তাহার ব্যবসা ছাড়িবার সঙ্গে সঙ্গে । সে তাহাঁকে অনেক . নিষেধ করিয়াছিল, বাধা দিয়াছিল, কিন্তু ম-খিন শোনে নাই। টুন্‌-অঙ্গ, বড় হতাশ হইয়া, বড় নিরুপায়ভাবে তাহার করুণাভিক্ষ চাহিয়াছিল ; পায় নাই। তার পর সে রূঢ় হইয়াছে, দুবাক্য প্রয়োগ করিয়াছে— অনেক সময় শ্লীলতার ধার ধারে নাই, তাহাতে মা-খিন ক্রুদ্ধ হইয় তাহাকে দূর হইয়া যাইতে বলিয়াছে, তাহার আবাল্যের সুখদুঃখ, স্নেহ-করুণীর নীড় হইতে । সেই মৰ্ম্মান্তিক আঘাতে, ক্ষোভে, অপমানে সে আজ ঘরছাড়া, নিরুদ্দেশ। কে জানে সে এখন কোথায়—তাহার মনের ভাব কি ?—তাহার সন্ধান লওয়া এখন ভাল হইবে, না মন্দ হইবে ? এত দিন পরে আজ ঘরে ফিরিয়া মা-থিনের মনে হইল ঘরখানা নেহাৎ ফাক, নেহাৎ শূন্ত ; এত দিন ধরিয়া যে কাজ সে করিয়াছে তাহ নিতান্তই ব্যর্থ, উপহসনীয়। বাস্তবিকই টুর্ন অঙ্গ, এখন মরিয়া হইয়া উঠিয়াছে। সে আর ম-থিনের করুণার উপর জীবন কাটাইবে না – তাহার মনে হইয়াছে, নিষ্কৰ্ম্ম, পরামভোজী বলিয়া মা-খিন তাহাকে ঘৃণা করে। তাই সে কৰ্ম্মী, ধনবান হইয়া একবার দেখাইবে যে তাহাকে উপেক্ষা করিয়া মা-খিন কতটা ভুল