পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

امکانا —দো পয়সাকা দেও —বেশ মুরুবিয়ানার সঙ্গে মণীশ বলিল । বাদামওয়ালা দুটি প্যাকেট মণীশের হাতে তুলিয়া দিতেই মণীশ টপ করিয়া আনিটা তাহার ডালার উপর ফেলিয়া ििण । “বাৰু-ডাকের আত্মপ্রসাদে আনি সম্বন্ধে সতর্কতা কোন এক সময়ে কোথায় লুপ্ত হইয়া গিয়াছিল ! পয়সা দুটা হাতে আসিতেই মণীশ নিশ্চিন্ত মনে বাদামের প্যাকেট খুলিয়া বাদাম খাইতে লাগিল। সামনে একটা ছেলেকে দেখিয় সে ডাকিল,—এই—এই অসিত, বাদাম খাবি ? অসিত মণীশদের নীচের ক্লাসে পড়ে—মণীশের চেয়ে বছরখানেকের ছোট। মাসখানেক আগে স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া-প্রতিযোগিতায় দশ বছরের ছেলেদের দলে সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করিয়াছিল। মণীশ হইয়াছিল প্রথম। পাশাপাশি প্রাইজ লইতে গিয়া দুই জনের দৃষ্টিবিনিময় হয় এবং প্রথম হইতে পারে নাই বলিয়া মনীশ উহাকে রুপার চক্ষে দেখে । সেই হইতে দু-জনের মধ্যে ভাসা-ভাসা আলাপ হইত—ভাবটা খুব জমাট বাধিতে পারে নাই। আজ ডাকিয়া বাদাম খাইতে দেওয়ায় অসিত অত্যন্ত কৃতজ্ঞ ৰোধ করিয়া মণীশের গা ঘেষিয়া দাড়াইল ও বাদাম চিবাইতে চিবাইতে বলিল,—তুমি আসছে বারেও ফাষ্ট হবে। মণীশ মুকবিয়ানার হাসি হাসিয়া বলিল,—দুর বোকা । আসছে বারে আমি এগারোয় পড়ব—তোদের ওপরের দলে নাম পড়বে। আনন্দে ঘাড় নাড়িয়া অসিত বলিল,—তা হোক, ফাষ্ট তুমি হবেই। —দেখা যাক ।—বলিয়া মণীশ আরম্ভ করিল,—আমি বেরিয়ে গেলে ও গ্রুপে তোকে ঠেকায় কে ? কি বলিস্ ? অসিত মাথা নাড়িয়া সম্মতি জানাইল। —চাই পেন্সিল—ভাল পেন্সিল— জলিত পেলিল-বিক্রেতার দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া আছে দেখিয়া মণীশ বলিল,—নিবি নাকি রে ? —নেব ত, পয়লা কই ?—অসিত গুৰুকণ্ঠে বলিল। মণীশ ঘাড় দোলাইয়া বলিল,—নেভার মাইও—জামি প্রবাসী ১৩৪২ ধার দিচ্ছি। বলিয়া সে পেন্সিল-বিক্রেতাকে ডাকিল -এই পেন্সিল—পেন্সিল—সঙ্গে সঙ্গে পয়সাটা অসিতের হাতে দিয়া বলিল, -নে, যেটা তোর খুশী । অসিত বলিল,—তুমি পছন্দ করে বেছে দাও। মণীশ অত্যন্ত খুশী হইয়া হাতের কাছে যেটা পাইল সেট না লইয়া বাছাবাছি আরম্ভ করিল। মিনিট-চারেক বাছাবাছির পর একটা নীল-রঙের পেন্সিল তুলিয়া লইয়। বলিল—এইটে নে, বাবা ঠিক এই রকম পেন্সিলে লেখে। অসিতের ইচ্ছা ছিল লাল-সবুজ মেশানো রঙের একট। নেয়, কিন্তু মণীশের বাবা যে-রঙের জিনিষ ব্যবহার করেন, সে-রঙের উপর লোভ না থাকিলেও ক্ষোভ প্রকাশ করা চলে না । পয়সাটাও এ-ক্ষেত্রে সে দেয় নাই। অল্প একটু হাসিয়া সে বলিল,—এইটাই বেশ। পেন্সিল-বিক্রেতা চলিয়া গেলে সে মানমুখে বলিল,—কিন্তু ভাই, পয়সাটা কাল তোমায় দিতে পারব না ত। পরশু বাবা একটা পেন্সিল কিনে দিয়েছিলেন—সেটা হারিয়ে গেছে। এত শীগগির চাইতে গেলে— মণীশ হাসিয়া বলিল-দূর বোকা। ধার বললাম বলে কি ধারই ? ওটা তোকে একেবারে দিলাম। এই কথায় অসিতের আনন্দের যেন সীমা রহিল না। পেন্সিলটা উন্টাইয়া-পাণ্টাইয়া সে বার-বার বলিতে লাগিল— কি স্বন্দর রঙ এটার ভাই,—মুন্দর । দু-জনে এ-কথা সে-কথা বলার পর মণীশের ফুল লওয়ার কথা মনে পড়িল । তাড়াতাড়ি সে গোটকয়েক মরহুমী ফুল তুলিয়া অসিতকে বলিল,—তুই বাড়ি যা। কাল ইস্কুলে দেখা হবে। অসিতের এত শীঘ্ৰ মণীশকে ছাড়িবার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু মণীশ আর সেখানে দাড়াইল না। গেটের বাইরে প্রকাও ইড়ি লইয়া খুগনীওয়াল বসিয়া রহিয়াছে। —চাই বাৰু-গরম যুগনী—পাটার যুগনী— দিব্য গরম মশলার ভূরভূরে গন্ধ বাহির হইতেছে। সেই গন্ধে আকৃষ্ট হইয়া কয়েকটি অল্প বয়সের ছেলে যুগনীওয়ালার অতি সন্নিকটে দাড়াইয়া লোলুপ দৃষ্টতে ওই ছাড়িটার পানে চাহিয়া আছে আর এক-এক বার চারি দিকে