পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“বনফুল (S ) জীবনের সহিত যদি প্রদীপের উপমাটা দেওয়া যায় তাহা হইলে বিলটুর জীবন-প্রদীপের তৈল নিঃশেষপ্রায় হইয়াছে— এ-কথা কিছুতেই বলা চলিবে না। কারণ বিলটুর জীবন-প্রদীপে তৈল পুরাই আছে, সলিতাও ঠিক আছে, শিখাও উজ্জলভাবে জলিতেছে। কিন্তু সে শিখা নিবিবে। একটি সবল ফুৎকারে তাহাকে নিবাইয়া দেওয়া হইবে। কাল তাহার ফাসি ! সে দোষী কি নির্দোষ সে আলোচনা আমাদের অধিকারের বহিভূত। আইনের চক্ষে সে দোষী প্রমাণিত হইয়াছে এবং সমাজের মঙ্গলার্থে তাহাকে শাস্তি দেওয়া হইতেছে। হয়ত তাহাকে লইয়া মাথাই ঘামাইতাম না, যদি সেদিন জেলখানায় বেড়াইতে গিয়া তাহার আর্জ-করুণ চীৎকার না শুনিতাম । “दूषनौ,--दूषनौ-दू५ नौ--नू५ नौ-दू५ नौ ” खैौड মিনতিভর কণ্ঠে সে ক্রমাগত চেচাইয়া চলিয়াছে। বুধনী তাহার স্ত্রীর নাম । ( R ) হাজারীবাগের পাৰ্ব্বত্য প্রদেশে ইহাদের বাস। এই পাৰ্ব্বত্য পল্লীতেই একদা ধনুকধারী বিলটু শিকার-সন্ধান করিতে করিতে বুধনীর দেখা পায় এক মহুয়া গাছের তলায়। নিকষ-কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরী বুধনী। সভ্য কোন যুবক আলোছায়া-খচিত মহুয়া তরুতলে কোন কিশোরীকে দেখিলে যে ঔদাসীন্ত-ভরে চলিয়া যাইত, বিলুটু তাহ করে নাই। বন্ত পশুর মত সে তাহাকে তাড়া করিয়াছিল। ত্রস্ত হরিণীর মত দ্রুতবেগে পলায়ন করিয়া বুধনী নিস্তার পায়। তখনকার মত নিস্তার পাইল বটে কিন্তু বিলটু তাহাকে স্বস্তি দিল না। আসভাটা তাহাকে দেখিলেই তাড়া করিত। (e) তাহার পর সেই বাঞ্ছিত দিবস আসিল । ইহাদের মধ্যে বিবাহের এক বিচিত্র প্রথা প্রচলিত ছিল। মাঝে মাঝে প্রভাতে বিস্তীর্ণ মাঠে ইহাদের সভা বসিত। সেই সভায় কুমার এবং কুমারীগণের সমাগম হইত। একটা পাত্রে খানিকটা সিছুর গোলা থাকিত। কোন অবিবাহিত যুবক কোন কুমারীর পাণিপ্রার্থী হইলে তাহাকে সেই কুমারীর কপালে ওই পিছর লাগাইয়া দিতে হইত। সিদ্বর লাগাইলেই কিন্তু যুবকের প্রাণ-সংশয় । সেই কুমারীর আত্মীয়স্বজন তৎক্ষণাং ধনুৰ্ব্বাণ, সড়কি, বল্লম লইয়া যুবকে তাড় করিবে এবং যুবা যদি আত্মরক্ষা করিতে না পারে—মৃত্যু স্থনিশ্চিত। কিন্তু সে যদি সমস্ত দিন আত্মরক্ষা করিতে পারে তাহা হইলে স্বৰ্য্যাস্তের পর আত্মীয়-স্বজনেরা মহা আনন্দে মাদল বঁাশী বাজাইয়া কলরব করিতে করিতে কন্যাকে বরের গৃহে পৌছাইয়া দিবে। এই শক্তি-পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া বিলুটু বুধনীকে জয় করিয়াছিল। এই ত সেদিনের কথা ! এখনও দুই বৎসর পুরা হয় নাই। ( t ) অসভ্য বিলটু জলি বুধনীকে পাইয়া কি ভাষায় কোন ভঙ্গীতে তাহার প্রণয় প্রকাশ করিয়াছিল তাহা আমি জানিনা। কল্পনা করাও আমার পক্ষে শক্ত। আমি ডুইংক্ৰম-বিহারী সভ্য লোক, বৰ্ব্বর বস্ত-দম্পতীর আদবকায়দা আমার জানা নাই। যাহারা গুহ-নিবাসী স্বপ্ত শার্দুলকে ভল্পের আঘাতে হনন করে, মৃগের সঙ্গে ছুটিয়া পাল্লা দেয়, উত্তত্ব পাহাড়ে অহরহ অবলীলাক্রমে ওঠে নামে, পূর্ণিমা নিশীথে মহুয়ার মনে আনন্দের স্রোত বহাইয়া দেয়—তাহাদের প্রণয়লীলা কল্পনা করার দুঃসাহস আমার নাই । শুধু এইটুকু জানি বিবাহের পর বিলটু বুধনীকে এক দণ্ড ছাড়ে নাই। এক দওও নয়। বনে জঙ্গলে পৰ্ব্বতে গুহায় এই বুৰ্ব্বর-দম্পতী অৰ্দ্ধনগ্ন দেহে অবিচ্ছিন্ন ভাবে বিচরণ করিয়া বেড়াইত। বুধনীর খোপায় টকটকে লাল পলাশ ফুলবিল্টুর হাতে বাঁশের বাণী। এই সৰল ।