পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

位8 পারে না—বুঝিবা তাহার করুণ প্রার্থনায় সে সমস্ত হৃদয় দিয় “না" করিতে পারে না ! তৰু সন্দেহ ত তাহার মন হইতে একেবারে যায় না ?-- সে সরল বিশ্বাস, সে ভক্তি আসে কষ্ট ?—হায়, ভগবান, এ কি করিলে—সেদিনের ছবি কেন তাহাকে দেখাইলে ? শুধু নিস্তন্ধ রাত্রে আকাশের দিকে চাহিয়া সে মনে মনে বলে--"আমায় বিশ্বাস দাও, দেবতা, বিশ্বাস দাও –হৃদয়ে বল দাও, দয়াময় !" (Cا আয়োজন চলিতে লাগিল । সাকিনার দিক হইতে আর কেহ কোন কথা শুনিতে পাইল না। যাহারা আগের কথাটা শুনিয়াছিলেন, তাহারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিলেন । কিন্তু সোয়াস্তি পাইল না শুধু এক জন । সে মং-বা। আজকাল সে ঘরের বাহির হয় না, বহিজগতের সহিত সম্বন্ধ সে এক প্রকার উঠাইয়াই দিয়াছে। গৃহের আবহাওয়ায় সে আপনাকে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত রাখিতে চায়-সাকিনার সান্নিধ্যে থাকিয়া পৃথিবীর আর সমস্ত ভুলিবে বলিয়া। তবে তাহাও বুঝি হয় না ! কথন আপনার অজ্ঞাতসারে মা-পিনের মূর্তিগানি তাহার মনের কোণে অ'কিয় উঠে, সে তাহা টের পায় না। সে ভাবে, আহ, অভাগিনী নারী !— সে এখন সমস্ত ছাড়িয়াও নিজের গৰ্ব্ব ছাড়িতে পারে নাই। সে এখন করিতেছে কি,-কি লইয়া আছে ? কেমন আছে সে ?-হঠাৎ মনে পড়িয়া যায়, সে কি করিতেছে-কাহার কথা ভাবিতেছে । অসংযত মনকে সে বিবেকের তীব্র কশাঘাতে ফিরাইয়া আনে –নির্জন কোণ হইতে বাহির হঠয়া সাকিনার সন্ধানে ঘুরিয়া বেড়ায়। মনের এইরূপ দ্বন্দ্বের ভিতর দিয়া দিন অগ্রসর হইতে লাগিল । আজ রাত্রির প্রভাতে কাল কাহাদের বিবাহ। চিরজীবনের গ্রন্থিবন্ধন আগত দিবসে--ব্যবধান শুধু আজকার রাত্রি। এই রাত্রিটুকু একবার মং-বা শেষের মত সব কথা ভাবিয়া লইবে । তাহার পর, সে নূতন জীবন আরম্ভ করিবে—অতীত পুরাতনের দিকে চাহিবে না ! জোংস্কালোকিত সুন্দর রাত্রি। নবাগত পরিজনবর্গে সমস্ত গৃহ সারাদিন মুখরিত ছিল । এখন কৰ্শ্বক্লাস্তির শেষে প্রবাসী >\용 নিদ্রার কোলে সমস্ত নীরব। অতি মধুর, সোনার রাত্রি। সারা আকাশের গায় চাদের কিরণধারা ; মাঝে মাঝে শুধু দু-একটা তার জ্যোৎস্নার আলোয় ঝলকিতেছে। মং-বার সমস্ত মন ভরপূর করিয়া দিল—শুধু থাকিয়া থাকিয় একটা অব্যক্ত বেদন বুকের মধ্যে টন টন করিতে লাগিল। অনেক দিনের পরিত্যক্ত বঁাশীটি লইয়া আগেকার মতই সে বাহির হইয় গেল—শুধু নিঃশব্দে। মান্দালয়ের উপকণ্ঠে সেই জনশূন্য বনপ্রাস্তর। জ্যোৎস্নার আলো সারা প্রান্তরের উপর দিয়া বহিয়া গিয়া উৰ্দ্ধে বনরেখায় মিলিয়া গিয়াছে। প্রাস্তর অতিক্রম করিয়া উচ্চ একটা টিলার উপর গিয়া মং-বা বসিয়া পড়িল । নিয়ে যত দূর দেখা যায়, স্থানে স্থানে ধূসর তৃণশীর্ষে শিশিরবিন্দু ঝলমল করিতেছে -স্থানে স্থানে বালুকণা রজতরেখায় ঝিলিক্‌ দিতেছে । কনুইয়ের উপর ভর দিয়া মং-বা অৰ্দ্ধশায়িত অবস্থায় রহিল। উপরে নীলাকাশে শুভ্ৰ চন্দ্রম-—নিম্নে জ্যোৎস্নালোকিত তামা বস্থঙ্করা। এ যেন দিগন্তের সীমাহীন সমুদ্রে দোল খাওয়া । এই ত জীবন–জীবনের উত্থান ও পতন— চরম পরিণতি । উঠিয়া বসিয়া মং-ব' বঁাশীতে ফুৎকার দিল । বহুদিনের অনাদৃত বঁাশী আজ যেন বড় করুণভাবে বাজিয়া উঠিল। বঁাশীর স্বরে মং-বা তন্ময় হইয়া গেল। যেন বহুদিনের অতীত স্মৃতি—অনেক দিনের হারানো জিনিষ—আজ বঁাশীর স্বরে ধর দিল । জগৎ ভুলিয়, স্থানকাল ভুলিয়, আপন ভুলিয়া, বঁাশী বাজিতে লাগিল । এ যেন জ্যোৎস্নালোকিত যমুনার কৃলে বিরহীর চির অভিসার—এ যেন মরমীর মৰ্ম্মছেড়া ক্ৰন্দন–যেন চিরবিরহের আকুল উচ্ছ,াস– রহিয়া রহিয়া বাতাসের গায়, গাছের পাতায়, বনমৰ্ম্মরে কঁাপিতে. লাগিল—সমস্ত বন, সমস্ত প্রান্তর, সারা যামিনীর হৃদয় আলোড়িত হইয়া ব্যগ্র, আকুল ক্ৰন্দন ধ্বনিত হইল— তুমি এস, এস হে, চিরঈপ্সিত, চিরকামনার ধন, এস। হঠাৎ কে সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল—ছিন্ন তার বীণার মত বঁাশী থামিয়া গেল। মং-বা মুখ তুলিয়া দেখিল, সম্মুখে মূৰ্ত্তিমান বেম্বরের মত দাড়াইয়াটুন-অঙ্গ । মং-বা কোন কিছু বলিবার পূৰ্ব্বেই টুন-অঙ্গ, আগেকার